somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামালপুরের নকশিকাঁথা ও দস্তরখান

২৮ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাল-নীল কাগজমালায় মোড়ানো কলাগাছের ফটক পেরিয়ে লাজনম্র নববধূ যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। সঙ্গে তার নানী-দাদি, দু'একজন সখী ছাড়াও রঙিন টিনের বাক্স। আর সেই বাক্সে আছে নিপুণ হাতে তৈরি একটি নকশিকাঁথা। একটু পেছন ফিরে তাকালে ঐতিহ্যসচেতন যে কারও চোখের সামনে কল্পনায় ভেসে উঠবে এমন দৃশ্য। এক সময় জামালপুরের গ্রামীণ বিয়েশাদিতে নকশিকাঁথা ছিল অনিবার্য। নতুন কনের শ্বশুরবাড়ি যাত্রায় বাবার বাড়ি থেকে নকশিকাঁথা নেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিন থেকেই ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসছে এ অঞ্চলে। শুধু নকশিকাঁথা নয়, নানা কারুকাজ করা দস্তরখানও ছিল জামালপুরের গ্রামীণ সমাজে অনিবার্য একটি অনুষঙ্গ। বিয়েশাদি ছাড়াও মেহমানের সামনে দস্তরখান বিছিয়ে খাবার পরিবেশন ছিল আভিজাত্যের প্রকাশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দস্তরখান হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্যবাহী নকশিশিল্প আবার জেগে উঠেছে জামালপুর জেলাজুড়ে। নকশি সূচিশিল্পের বাণিজ্যিক প্রসারে দরিদ্র এই অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্রও বেশ পাল্টে গেছে। জেলায় অসংখ্য দরিদ্র নারী জড়িয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। কিন্তু এতকিছুর পরও এখানকার নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমের ন্যায্য পাওনা থেকে। প্রায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ নকশি সূচিশিল্পের বাণিজ্যিক প্রসার জামালপুরে শুরু হয় আশির দশকের শেষের দিকে। বর্তমানে জামালপুর সদরসহ পুরো জেলায় ৫০ হাজারের বেশি দরিদ্র নারী এই পেশায় জড়িত। এতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র নারী। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তারা ঘরে বসেই নকশিকাঁথা, নকশি চাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি, ওয়ালম্যাট, কুশন কভার, শাড়ির নকশি পাড়, থ্রি-পিস ওড়নাসহ নানা রকম নকশি সামগ্রীর সূচিকর্ম করছে।

এছাড়াও বাড়তি আয়ের জন্য অনেক শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীরাও জড়িয়ে পড়েছে এ শিল্পের সঙ্গে। শহরের পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে এ শিল্পের অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। পুরনো ঐতিহ্য ও নকশা অনুসরণ করে গ্রামীণ নারীরা সুই, সুতা-রংয়ের সমন্বয়ে কাঁথাসহ এসব দ্রব্যে নানা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে তাদের নিপুণ হাতে। জামালপুরের নকশি পণ্যের কদর বাড়ছে দেশ-বিদেশে। জামালপুর জেলা শহরেও রয়েছে এ শিল্পের ছোট-বড় অনেক শো-রুম। কিন্তু বিপণন সমস্যা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর পুঁজির অভাবে শ্রমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক নারীকর্মী। ইচ্ছামতো মালিকের দেওয়া অল্প মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। আর স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, একটি নকশিকাঁথা তৈরি করতে মজুরিসহ খরচ হয় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করতে হয় ২০০০ টাকায়। এই কাঁথা ঢাকার বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। পুঁজির অভাবে তারা নিজেরা বাজারজাত করতে পারছেন না এসব পণ্য। ফলে পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে নিজেরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি যথাযথ শ্রমমূল্য পাচ্ছেন না নারী শ্রমিকরা। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন জাহান এসব কথা স্বীকার করে বলেছেন, পৃষ্ঠপোষকতা আর ব্যাংক ঋণ সহায়তা পেলে এখানকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরাসরি এসব সূচিপণ্য ঢাকাসহ বড় শহরে নিজেরাই বিপণন আর রপ্তানি করতে পারে। এতে হতদরিদ্র নারী শ্রমিকরা একদিকে যেমন তাদের সঠিক শ্রমমূল্য পাবেন, পাশাপাশি দরিদ্র এই জেলায় গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্রও অনেকটা পাল্টে যাবে।

৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×