somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নাম ছিল আমার ছোট বেলার প্যারাসাইট

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




স্কুল লাইফ শুরু অবস্থায় যখন জানতে পারলাম "নাম" জিনিস টা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। "নাম" জিনিস টা আপনার পরিচয় বহন করে এবং আপনার চরিত্র কিংবা পার্সোনালিটির বাহক।
অবাক হলাম যখন জানতে পারলাম আমার নাম টা কোনো সাধারন নাম নয়, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নাম যিনি বাংলার ইতিহাসে বিতর্কিত চরিত্র আর সবসময় সমালোচনার বেড়াজালেই ছিলেন, সেই বেড়াজালে আমাকেও পড়তে হলো।

নাম নিয়ে টিটকারি মারা, ভেঙ্গানো, পচানো, ২-৩ লাইনের স্যাটায়ার মূলক কবিতা বানানো তো ছিল নিত্য দিনের কাজকারবার। এই সব কারনে আমার স্কুলে যেতে মন চাইতো না, সকাল সকাল স্কুলে যাওয়া ছিল, আমার জন্যে প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন। ১ম ক্লাসেই স্যার-ম্যাডাম সবার প্রেজেন্ট নিতেন, আমার নাম ডাকতেই ক্লাসে কেউ না কেউ তো হাসতো কিংবা বিরক্তির মুখে আমার দিকে তাকাতো। স্যার-ম্যাডাম রাও আমার নাম নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো, বলতো তোমার আব্বু কি বি,এন,পি এর সমর্থক?
আমি ভিষণ মন খারাপ করতাম, ছিলাম অসহায় বালকের মতন, কিভাবে এর প্রতিবাদ করব সেটার কৌশল জানা ছিলো না। আমি বাসায় জানালাম আমি আমার নাম পরিবর্তন করবো, "জুবায়ের রহমান, জিল্লুর রহমান, Z দিয়ে যত নামের শুরু হয়, কিন্তু কাজ হলো না। এই নামের কারনে আমার বন্ধু কম ছিল, কারন আমি নিজেই মনে করতাম এই নামের কারনে মানুষ আমাকে তুচ্ছ মনে করে। আমাকে এই নামের বোঝা নিয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে মেট্রিক পড়তে হলো ঢাকার একটি স্বনামধন্য স্কুলে।

এই নাম টাই ছিলো আমার ইনফিরিওটি কমপ্লেক্স এর মূল উপাদান। আমার জীবনের এক প্যারাসাইট। আমার স্কুল লাইফে থাকতে কনফিডেন্স কমে যায়, কমিউনিকেশন বাইন্ডিংস চলে আসে, মুখে জড়তা চলে আসে, কারোর সাথে কথা বললেই ঘাবড়ায় যেতাম, নার্ভাস হতাম, এবং এই ডিসওর্ডার আমার ২৭ বছর অবধি ছিল, ভার্সিটি তে পড়ার পর এই সমস্যা চিরতরে চলে যায়, কারন যে দেশে গ্রাজুয়েশন করি সেখানে জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা বাংলাদেশ নামটাও চিনতো না।

আমার বাবা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে এই নাম টা আমাকে দেন নি, আমরা দুই ভাই, বড় ভাই আমিনুর রহমান, আমার নাম জিয়াউর রহমান, A-Z , বাবা চেয়েছিল আমার পর আর কোনো সন্তান নিবেন না তাই "Z" দিয়ে এটা সমাপ্তি করল।

আমার ভুল ছিলো এই বাস্তবতা কে মেনে না নেওয়া টা, আমার মেনে নেওয়া উচিত ছিলো এই নাম টাই আমার এবং এতে দোষের কিছুই নেই, যারা আমার নাম শুনে হাসতো কিংবা আমাকে নিয়ে কবিতা বানাতো "স্বাধীনতার ঘোষক, বাসায় নেই লেপ আর তোষক", খালেদা জিয়ার জামাই"। চোখের পানি না ফেলে, হাসিমুখে এইসব মেনে নেওয়াটা আমার উচিত ছিল।
মানুষের পার্সোনালিটির সাথে নামের সামঞ্জস্য আমরা খুজতে চাই, "শাহরুখ খানের নাম যদি হতো, আব্দুল শিকদার, পূর্ণিমার নাম যদি হতো, নাসিমা খাতুন? হা হা তাহলে আপনি মিলাতে পারবেন না। এরজন্যেই সবাই সফল হওয়ার জন্যে নাম পরিবর্তন করে, দিলীপ কুমার থেকে শুরু করে, অক্ষয়, গোবিন্দ আরো অনেকে নাম পরিবর্তন করে ফেলে, কারন একটি নাম উচ্চারন এর সময় আপনার মাথায় সেই নাম এর একটি ছবি ফুটে উঠে। " আন্দালিব পার্থ" এই নাম টি আপনি মনে মনে পড়লেন, এখন কল্পনা করুন, এই নাম টি টং দোকানের এক কমলা দাড়িওয়ালা টুপি পড়া বয়স্ক মানুষ"....... মিলাতে পারবেন না।

"নামকরন" আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনাদের থেকে জানতে চাই

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই লেখা বলা নয়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১



বকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই বলা/ লেখা নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জনসংহতি নষ্ট করা রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণবিপ্লব পরবর্তী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী তবে সেটা আমাদের মন মতো হতে হবে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮

সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। সামু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ পুজা উপলক্ষে সুন্দর ব্যানার আপলোড এর জন্য।


হিন্দু ভাই বোনদের বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। আমাদের এই বাংলাদেশ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান... ...বাকিটুকু পড়ুন

A Journey by Rickshaw with Rakeen and Rakeen’s Mom!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

ছোট বেলায় আমাদের এই রচনাগুলো বাংলায়, ইংরেজীতে নোট করে মুখস্থ রাখতএ হতো, পরীক্ষায় আসবে বলে। একটা না একটা এসেই যেত!

রচনা আরো ছিল, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী, একটা রেললাইনের আত্মকাহিনী, একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×