এইবারই প্রথম ভোটার হলাম। কেমন যেন নিজেকে অনেক দায়িত্তবান মনে হচ্ছে যা আগে কখনো এভাবে অনুভব করিনি। রাজনীতি নিয়ে কোনো দিনই মাথা ঘামাই নাই। এরশাদের আমলের কথা কিছুই বলতে পারবো না, একটু যখন বুঝতে শিখেছি বি এন পি শাসনামল ছিল এটুকু শুধু মনে পড়ে। আমার বাবা আওয়ামিলীগ সাপোর্ট করতেন। আমাদের সাথে সবসময় গল্প করতেন, এখনো করেন, তার ছাত্রজীবনের কথা, বিভিন্ন আন্দোলোনের কথা, শেখ মুজিবের সভায় যাওয়া-সাক্ষাত করা, একবার শেখ মুজিব বাবার পিঠে হাত বুলিয়ে দিছেন, কতো আবেগ নিয়ে বাবা এসব গল্প করেন। খুব স্পষ্ট না , কিন্তু মনে আছে, আমার মামা-খালারা বি এন পি সাপোর্ট করেন, আর বাবা আওয়ামিলীগ, এই নিয়ে দুলাভাই-শালা-শালি খালি ঝগড়া, চিল্লাফাল্লা, এক পার্টি আরেক পার্টি কে খেপানো। যখন আরেকটু বুঝতে শিখলাম তখন কার নির্বাচন কি মোটামুটি বুঝতেছি, মামা-খালা রা শিখাই দেয় ধানের শীষ , আর বাবা থেরাপি দেখান নৌকার। কিন্তু তখন অল্পো-বিস্তর বুঝি, মোটামুটি ধারনা হল পরিবর্তন দরকার। বাবার সাথে আমিও একমত হলাম , আমিও নৌকা বলে চিল্লাই আর মামা-খালামনিরা ছুটে আসে কান মলে দিতে।
সেবার আওয়ামিলীগ জয়ী হল। নতুনের আমেজ তখন বুঝতে শিখে গেছি। ৫ বছর। অন্য সব ভাল খেয়াল না করলেও একটা জিনিস, টিভি খুললেই নৌকা, ভাষন, অতীত রোমন্থোন। ভাল কথা। বই-পুস্তক সব পরিব্ররতিত, প্রত্যেক বছর ই বই পরিবর্তন। ভাল কথা।কোনো একটা উপলক্ষ , শুরু হল টিভি জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য শেখ মুজিবের ভাষন। দেখে শুনে আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যা বুঝল, এটা সম্মান দেখিয়ে করা হচ্ছে না, যেন সেই শ্রদ্ধাভাজন ব্যাক্তিটির ভাষন হয়ে দাড়াল তাদের বিজ্ঞাপন। যেখানে যাও, যাই কর, টেনে আনো শেখ মুজিব, নিজস্বতা বলতে কিছুই নাই।
যে আমার বাবা আওয়ামিলীগ এর এত ভক্ত, তিনিই চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে উঠলেন , শেখ মুজিবের যতোটা ভক্ত ছিলেন বাবা, তার কন্যার উপর ততোটাই বিরক্ত।
আবার এলো নির্বাচনের দিন। ততোদিনে যথেষ্ট সমোযদার হয়ে গেছি, যদিও ভোটার হতে পারলাম না অল্পের জন্য। তখন সদ্য এইচ এস সি পাস, ভারসিটি - মেডিকেল এ ভর্তির চিন্তায় মাথা খারাপ, কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কিছুটা উত্থেজনা ঠিকই কাজ করে, কোচিং এ গেলেই আলোচনার ঝড়, ভালই লাগে। আমার বাবাই সেবার বি এন পি'র কথা বলেন, যদিও বুঝতে পারি মনে আওয়ামিলীগ এর জন্য ব্যথা। আমার বাসার সবাই বি এন পি তে ভোট দিল, জিতল ও বি এন পি, বাবা ভোট দিতে পারেননা, তিনি পলিং এজেন্ট।
তারপরের ইতিহাস সৃতিচারণ করার কিছু নাই, কারো শিখানো দলে সাপোর্ট করার বয়স আর নাই, সব নিজেই বিবেচনা করতে জানি। পরের ৭টি বছর কি ঘটেছে, কি দেখেছি তা আর বলতে হবে না এখানে। যে মামা-খালারা বি এন পি সমরথক, তারাই এখন উলটা পথে।
আমার ছোট বোনটা ভোটার হল, সে 'না' ভোট, আম্মূ কিছহুই দিবেননা। আর আমার বাবা, কিছুই বলেন না, শুধু একটাই কথা বললেন, "নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে জান এখন, নিজেই সিদ্ধান্ত নেও কাকে ভোট দিবে।" সভাবতই বাবা পলিং এজেন্ট, ভোট দিবেন না।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ দের উপর চুড়ান্ত বিরক্ত আমি ঘোষনা দিলাম 'না' ভোট দিবো। কিন্তু মাথার মধ্যে কি এক দন্ধ , জীবনের প্রথম ভোট টা কি আরেকটু বিবেচনা করে দিব? নাহ, 'না' ভোটই দিব।
এলো সেই দিন। বাসা থেকে বের হয়েই একটা ধাক্কা খেলাম। চারিদিকে কেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব, কেমন যেন ঈদের দিন ঈদের মনে হচ্ছে চারপাশে। মাথার মধ্যে দন্ধ নিয়ে কেন্দ্রে লাইন দিলাম। দন্ধ তখন চুড়ান্তে। কি করবো? এইটাই করবো, নাকি ঐটা করবো? ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে অবশেষে সিদ্ধান্তে আসলাম, নাহ, জীবনের প্রথম ভোট, যে আদর্শে বড় হয়েছি, দেশের অতীত উপাখ্যান যতোটুকু জেনেছি, নিজের দায়িত্ত কে প্রথমবার একটু নাড়া দিয়েই দেখি, মুক্তিযুদ্ধের সমরথক দল এর পাশে আনুষ্টানিক ভাবেই দাড়াই। 'না' ভোট silent ভোট, আমি কেনো silent থাকবো। যুদ্ধাপোরাধীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ দেবার বালুকনা পরিমাণ যে সুযোগ আসবে, তাইবা আমি এড়াবো কেনো?
'না' ভোটের সীলটা আমার পড়লো নৌকায় ।
এখন শুধু দেখার পালা আমাদের দেয়া সমর্থন এর সম্মান তারা কতোটুকু রক্ষা করে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




