somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইল বিড়ম্বনা

২২ শে অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পঞ্চাশ পয়সার রাত

মোবাইল খাতে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে এটা যে কেউ চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে নির্দ্বিধায় বলবেন, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যুগে যুগে বিভিন্ন প্রযুক্তি এসেছে, আসছে, আগামীতেও আসবে। আলফ্রেড নোবেল যেমন চিন্তা করেননি ডিনামাইট মানুষ হত্যার কাজে ব্যবহার করা হবে তেমনি মোবাইলের আবিষ্কারকরাও ভাবেননি এই যন্ত্র বাংলাদেশের মানুষের হাতে পড়লে ভালোর সাথে খারাপ কি কি ঘটতে পারে।

ভোর পাঁচটা। সেহরী করে মাত্র বাসার সবাই পিঠ লাগিয়েছি বিছানায়, চোখ বুঁজেছি। মোবাইলের বিকট শব্দ। তড়াক করে উঠে বসলাম। বিদু্যৎবিহীন ভোরে আতংকিত হলাম। কে জানে কোন দুঃসংবাদ কি না! নাহ্, নম্বরটা চেনা না। ধরলাম জিজ্ঞেস করলাম কে বলছেন? উত্তর এলো না, শুনলাম ভিন্ন কটু কথা। লাইন কাটলাম। আবার, আবার। সারাদিন অফিসে বাসায় শুধু মোবাইলে কল। দুইদিনে পঞ্চাশবার কল, গুণলাম। ত্যক্ত আমি মোবাইল সাইলেন্ট করলাম। প্রিয় বন্ধুর বাবার মৃতু্য সংবাদ মিস্ করলাম মোবাইল সাইলেন্ট রাখাতে। আমি তুচ্ছ সিভিলিয়ান, আর্মি দিয়ে যদি কিছু হয়! এই আশায় কর্নেল ভাইকে দিয়ে সেই নম্বরে ফোন করিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে যেন বিরক্ত না করে। পরক্ষণেই আবার ফোন। আমাকে কর্নেল দেখাস? তোর মোবাইল নম্বর সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। সিম্ চেঞ্জ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। মনে মনে হাসলাম তিক্ত হাসি আর বললাম ব্যাটা তুই তো জানিস না আমাকে চ্যালেঞ্জ করার ফলাফল কি হতে পারে। গ্রামীণ ফোনের নম্বর থেকে ফোনটা আসাতে আমি গ্রামীণের কাস্টমার সাপোর্টে ইমেইল করলাম ঘটনার বিবরণ দিয়ে। দশ মিনিটের মধ্যে ফোন গ্রামীণের কাস্টমার কেয়ার থেকে। আধ ঘণ্টার মধ্যে সেই যন্ত্রণা বন্ধ। রোযা উপলক্ষে মধ্যরাতে কল রেট পঞ্চাশ পয়সা করাতে অসুস্থ মানসিকতার লোকজন যথেচ্ছ অপব্যবহার করছে এই সুযোগের।

ঈদের মার্কেট। ক্বচিৎ যাই। এবার যেতে বাধ্য হয়েছি নানাবিধ কারণে। শপিং মলগুলোর প্রত্যেক ফ্লোরের রেলিং এ বিভিন্নবয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি দেখছে? নারী আগমন, বিবিধ বয়সী। যাক্, দেখুক; নিদেনপক্ষে গাউসিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনী চকের মতো ধাক্বাধাকি্ব তো করছে না। এরা আরও স্মার্ট। মোবাইলে ক্যামেরা। যার যাকে পছন্দ হচ্ছে ছবি তুলে নিচ্ছে। কি আনন্দ। এসব ছবি দিয়ে অনায়াসে কাটপিস বানানো যাবে। তারপর নেটে ছেড়ে দিবে। আমরাই বলব- হুঁ মেয়েটা কত খারাপ। যে ছবি ছেড়েছে সে সম্পর্ক গড়ার সময় ধার্মিক নামাযী পর্দানশিন মেয়ে খুঁজবে। চাবকে এসব ছেলের পিঠের ছাল তুলে দেয়া যেত!

রবিন হলে থাকে ঢাকা ভাসর্িিটর। পড়ালেখায় সিরিয়াস। পরীক্ষা চলছে থার্ড ইয়ার ফাইনাল। মাঝরাতে ফোন, অচেনা নম্বর। ধরবে না ধরবে না করেও ধরলো। আমি সোমা, অমুক সাবজেক্ট, ফোন রাখবেন না। যা বলি তা যদি না করেন আপনার বাসায়, রিংকির বাসায় (বাসার ফোন নম্বর বলে সোমানাম্নী মেয়েটা) জানিয়ে দেব রিংকির সাথে রিলেশনের কথা। 'কি করতে হবে?' আগামীদিন মল চত্বরে আসবেন বেলা 3টায়। আমি আপনাকে খুঁজে নেব, সাথে আপাতত দশ হাজার টাকা আনবেন। রবিন শ্বাস চেপে পড়া মাথায় তুলে পুরো ব্যাপারটা ভাবে। কেউ জানে না রিংকির কথা, ডিপার্টমেন্টেও ওরা এমনভাবে চলে যেন কেউ সন্দেহ না করতে পারে। রিংকির মা জানলে কালই অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবে। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় কি কেউ দেখে ফেললো? রবিনের কাছে ঠিক দশ হাজার টাকাই আছে পরীক্ষা শেষে সার্কটু্যরে যাবার জন্যে এই টাকা বাবা পাঠিয়েছে। কারও সথে পরামর্শ না করে রবিন টাকা ছাড়াই মল চত্বরে যায় কৌতূহল মেটাতে। কেউ কোথাও নেই এত রোদে। রবিন ফিরে যাবার জন্যে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই দুপাশ থেকে দুজন ছেলে ওর কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে থাকে-টাকা দে।
আনিনি।
পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল নেয়া সারা। হাতঘড়িটাও ভোজবাজির মতো পাশের ছেলের হাতে। চড় চাপড় ঘুঁষি হজম করে রবিন টলতে টলতে হলে ফেরে।

এমন ঘটনা খুঁজলে কমপক্ষে শ'খানেক পরিচিত মানুষদের ঝুলি থেকেই সংগ্রহ করা যাবে।

টিপস-
1. মোবাইলে কেউ বিরক্ত করলে আপনি যে কোম্পানীর সাবস্ক্রাইবার তাদের শরণাপন্ন হউন। অনেকে নম্বর ডিসপ্লে করার অপশন অফ করে ফোন করে। তাহলে আপনার কাছে আসা অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনের নম্বরটি আপনি জানতে পারবেন না। আপনার সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার কল লগ চেক করে নম্বরটি জানাতে পারবে।
2. নম্বরটি জানতে পারলে সেই মোবাইল কোম্পানীকে আপনার লিখিত অভিযোগ জানান। সাময়িকভাবে তিনদিনের জন্যে তারা সিম্ লক করে দেবার এখতিয়ার রাখে।
3. তারপরেও সমস্যার সমাধান না হলে জিডি করুন। কপি মোবাইল কোম্পানীকে দিন। তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার জন্যে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে পাবে।
মনে রাখবেন কারও অসভ্য আচরণের জন্যে যদি আপনি সিম্ চেঞ্জ করেন তাহলে সেই অসভ্য আরেকজনকে একইভাবে উত্যক্ত করার ব্যপারে উৎসাহিত হবে।

মোবাইলে ছবি তোলার ব্যাপারে আপাতত লাগসই কোন সমাধান দিতে পারছি না। তবে এই পদ্ধতিটি আমার বান্ধবীর। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকলে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। সোজা হেঁটে গিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে সজোরে আছাড় দিন অথবা সাথে যদি লোকবল যথেষ্ট থাকে তাহলে মোবাইলের মেমোরি কার্ড খুলে নিন। ফোন মেমোরিতেও ছবি সেভ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ছবি ডিলিট করাই সহজ সমাধান।

অপরিচিত নম্বরের ফোন রিসিভ করলেও অযৌক্তিক কোন আব্দার শোনা থেকে বিরত থাকুন, নেহায়েত কৌতূহলও মেটানোর প্রয়োজন নেই। মোবাইলে বন্ধু না খোঁজাই উচিৎ। পত্রিকায় ফোন নম্বর দিয়ে নিজেকে ফলাও করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষের এখনো 'প্রাইভেসি' শব্দটির প্রতি তেমন কোন শ্রদ্ধাবোধ গড়ে উঠেনি।

সেহরীর সময়কার পঞ্চাশ পয়সার মিনিট যেন আপনার ক্ষেত্রে ঘটলে আপনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন সেজন্যই এ লেখা। প্রযুক্তির সুবিধাভোগ করার অধিকার আমার আপনার সবার। সেই অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া মানে মানবাধিকারের উপর হাত। আমি তা হতে দেইনি, দেবও না। আপনি কি দেবেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×