কার্লোস ফুয়েন্তেস তেমনই একজন শক্তিমান সাহিত্যিক, যিনি পাঠককে তাঁর নির্মিত অলৌকিক দুনিয়া থেকে ঘুরে আসতে বাধ্য করেন। স্প্যানিশভাষী লেখকদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এ লেখকের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮, পানামা সিটিতে। লাতিন আমেরিকার সাম্প্রতিকতম সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে তার সাহিত্যকর্মগুলো। বেশ কিছুদিন ধরেই সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। কার্লেস ফুয়েন্তেস খুব কম অনুদিত হয়েছেন বাংলায়। বাংলা ভাষাভাষী পাঠক তার নামের সঙ্গে পরিচিত হলেও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে সেভাবে পরিচিত নয়। ১৯৬১ সালের দিকে তিনি রচনা করেন আউরা নামক স্বল্পায়তনের একটি উপন্যাস। এর প্রধান চরিত্র মাসিক ৯০০ পেসো বেতনের প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক ফেলিপে মনতেরো হঠাৎ করেই সন্ধান পান আকর্ষনীয় এক চাকরির, যার বেতন ৪০০০ পেসো। এক রেস্তোরায় বসে তিনি খবরের কাগজে দেখতে পান এ বিজ্ঞাপনটি। ইতিহাসে উচ্চতর ডিগ্রিধারী মনতেরোর কাছে মনে হয় এই চাকরিটাই সে খুঁজছে এতদিন ধরে, যার ফলে সে তার নিজস্ব গবেষণাকর্মটি চালিয়ে নেবার মতো পর্যাপ্ত অর্থ রোজগার করতে পারবে। বিজ্ঞাপনটিতে কোনো ফোন নম্বর দেয়া নেই, শুধুমাত্র একটি ঠিকানা আছে সেখানে; যার অর্থ হলো প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত ঠিকানাটায় পৌঁছে যায় ফেলিপে মনতেরো। আলো-আঁধারির এক রহস্যময় বাড়ি সেটা, যার কোনো দরজাতেই কোনো খিল লাগানো নেই, বাইরে থেকে সামান্য ধাক্কায় একের পর এক খুলে যায় সেসব দরজা। মনতেরোর কাছে সবকিছু খুব অস্বাভাবিক মনে হলেও চাকরিদাতা ১০৯ বছরের বৃদ্ধা কনসুয়েলার খাটটির কাছে পৌঁছে যায় সে এবং বৃদ্ধা তাকে চাকরিতে নিয়োগ দেয়। বৃদ্ধার স্বামী জেনারেল ইয়োরেন্তের স্মৃতিকথা সম্পাদনার কাজ সেটি। ফেলিপে মনতেরো এ বাড়িতে আর এটি মেয়ের উপস্থিতি টের পান। সে আউরা, বৃদ্ধার ভাগনি, সমুদ্রের মত সবুজ চোখের এক অসম্ভব সুন্দরী তরুনী। মনতেরোর মনে হয় আউরাকে কোনো অজানা জাদুবলে আটকে রেখেছে এই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা। পাশাপাশি তার প্রতি এক উদগ্র কামনা অনুভব করে সে। যেকোনো ভাবে তাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা করে মনে মনে। বাড়ির অস্বাভাবিক পরিবেশে মনতেরোর স্বপ্ন আর বাস্তবতা একাকার হয়ে যায়। জেনারেলের স্মৃতি পড়তে গিয়ে সে টের পায় বন্ধ্যা কনসুয়েলা সন্তান ও চিরস্থায়ী যৌবনের স্বপ্নে বিভোর। এক পর্যায়ে আউরার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয় ফেলিপ মনতেরোর। আউরাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে সে। দ্বিতীয়বার তাদের মিলনকালে মনতেরো টের পায় সবুজ চোখের আউরা ক্রমশ বদলে গিয়ে বৃদ্ধা কানসুয়েলার রূপ ধারন করছে। প্রবল এক ঘোরের ভেতর তার নিজেকে মনে হয় বৃদ্ধার প্রেমিক অথবা সেই জেনারেল, যার স্মৃতিকথা সম্পাদনার কাজটাই সে করছে।
আউরার শেষে উপন্যাসটি রচনার পটভূমি সম্পর্কে কার্লোস ফুয়েন্তেসের একটি লেখাও জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেটি এর পাঠকে অনেকাংশে সহজ করে তোলে। দ্বিতীয় পুরুষে রচিত এ উপন্যাসের সাবলীল একটি ভাষান্তর আমাদের সামনে হাজির করেন অনুবাদক। বিশ্বসাহিত্যের, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের অনুরাগী বাংলা ভাষার পাঠকের কাছে দারুনভাবে সমাদৃত হবে বইটি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





