somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভ্রমের দুনিয়া

২০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যেটাকে বলছি যাদুবাস্তবতা, লাতিন আমেরিকার প্রেক্ষাপটে সেটাই বাস্তব। তাদের বাস্তবের দুনিয়া এরকমই। সারাবিশ্বের সাহিত্যাঙ্গন দাপিয়ে বেড়ানো লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই এটি। বাস্তবের আবরনে সমস্ত ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা সম্ভব হয় না বলেই সাহিত্যিকরা আশ্রয় নেন জাদুবাস্তবতার। এর মাধ্যমেই তারা বয়ান করতে চান তাদের স্বপ্ন ও বাস্তবের জগতকে। বিভ্রম ও বাস্তবতার অপূর্ব সেতু গড়ে তোলেন লাতিন আমেরিকার সাহিত্যিকেরা। হুয়ান রুলফো, হুলিও কার্তোসার, গ্যাব্রিয়েল গার্সিসা মার্কেস, কার্লোস ফুয়েন্তেস সমগ্র বিশ্বের সামনে সাহিত্যের এই জগতকে খুলে দেন। এ জগতে থাকে নিত্যনতুন চমক, বিস্ময়ের ঘোর এবং প্রবহমান সময়ের বাইরে গিয়ে দেখা পৃথিবীর নানারকম কারসাজি। এখানে প্রধান চরিত্রেরা মাঝে মাঝে মৃতদের জগতের বাসিন্দা, তারা যা দেখেন, বর্ননা করেন সকলই মৃত, লেখককেও মাঝে মাঝে তাদেরই একজন মনে হয় এমনকি পাঠক নিজেও বিচরন করেন সেই সময়হীন জগতে। বস্তুত মানুষের স্বপ্ন তার বাস্তবতার বাইরে নয়। স্বপ্ন কখনো কখনো বাস্তবের চেয়ে আরো অধিক বাস্তব হয়ে ধরা দেয়। তবে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যিকেরা বাস্তবের ভেতরে স্বপ্ন ও প্রতিবাস্তবের এমন এক আবহকে উপস্থিত করেন তাকে আর মায়া বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্রেফ কল্পনা বলে তাকে উপেক্ষা করা সাধ্যাতীত। এক একটি জানালা খুলে একেক ধরনের ভ্রমের ভেতরে পাঠকের প্রবেশকে অবস্যম্ভাবী করে তোলেন তারা।

কার্লোস ফুয়েন্তেস তেমনই একজন শক্তিমান সাহিত্যিক, যিনি পাঠককে তাঁর নির্মিত অলৌকিক দুনিয়া থেকে ঘুরে আসতে বাধ্য করেন। স্প্যানিশভাষী লেখকদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এ লেখকের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮, পানামা সিটিতে। লাতিন আমেরিকার সাম্প্রতিকতম সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে তার সাহিত্যকর্মগুলো। বেশ কিছুদিন ধরেই সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। কার্লেস ফুয়েন্তেস খুব কম অনুদিত হয়েছেন বাংলায়। বাংলা ভাষাভাষী পাঠক তার নামের সঙ্গে পরিচিত হলেও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে সেভাবে পরিচিত নয়। ১৯৬১ সালের দিকে তিনি রচনা করেন আউরা নামক স্বল্পায়তনের একটি উপন্যাস। এর প্রধান চরিত্র মাসিক ৯০০ পেসো বেতনের প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক ফেলিপে মনতেরো হঠাৎ করেই সন্ধান পান আকর্ষনীয় এক চাকরির, যার বেতন ৪০০০ পেসো। এক রেস্তোরায় বসে তিনি খবরের কাগজে দেখতে পান এ বিজ্ঞাপনটি। ইতিহাসে উচ্চতর ডিগ্রিধারী মনতেরোর কাছে মনে হয় এই চাকরিটাই সে খুঁজছে এতদিন ধরে, যার ফলে সে তার নিজস্ব গবেষণাকর্মটি চালিয়ে নেবার মতো পর্যাপ্ত অর্থ রোজগার করতে পারবে। বিজ্ঞাপনটিতে কোনো ফোন নম্বর দেয়া নেই, শুধুমাত্র একটি ঠিকানা আছে সেখানে; যার অর্থ হলো প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত ঠিকানাটায় পৌঁছে যায় ফেলিপে মনতেরো। আলো-আঁধারির এক রহস্যময় বাড়ি সেটা, যার কোনো দরজাতেই কোনো খিল লাগানো নেই, বাইরে থেকে সামান্য ধাক্কায় একের পর এক খুলে যায় সেসব দরজা। মনতেরোর কাছে সবকিছু খুব অস্বাভাবিক মনে হলেও চাকরিদাতা ১০৯ বছরের বৃদ্ধা কনসুয়েলার খাটটির কাছে পৌঁছে যায় সে এবং বৃদ্ধা তাকে চাকরিতে নিয়োগ দেয়। বৃদ্ধার স্বামী জেনারেল ইয়োরেন্তের স্মৃতিকথা সম্পাদনার কাজ সেটি। ফেলিপে মনতেরো এ বাড়িতে আর এটি মেয়ের উপস্থিতি টের পান। সে আউরা, বৃদ্ধার ভাগনি, সমুদ্রের মত সবুজ চোখের এক অসম্ভব সুন্দরী তরুনী। মনতেরোর মনে হয় আউরাকে কোনো অজানা জাদুবলে আটকে রেখেছে এই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা। পাশাপাশি তার প্রতি এক উদগ্র কামনা অনুভব করে সে। যেকোনো ভাবে তাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা করে মনে মনে। বাড়ির অস্বাভাবিক পরিবেশে মনতেরোর স্বপ্ন আর বাস্তবতা একাকার হয়ে যায়। জেনারেলের স্মৃতি পড়তে গিয়ে সে টের পায় বন্ধ্যা কনসুয়েলা সন্তান ও চিরস্থায়ী যৌবনের স্বপ্নে বিভোর। এক পর্যায়ে আউরার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয় ফেলিপ মনতেরোর। আউরাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে সে। দ্বিতীয়বার তাদের মিলনকালে মনতেরো টের পায় সবুজ চোখের আউরা ক্রমশ বদলে গিয়ে বৃদ্ধা কানসুয়েলার রূপ ধারন করছে। প্রবল এক ঘোরের ভেতর তার নিজেকে মনে হয় বৃদ্ধার প্রেমিক অথবা সেই জেনারেল, যার স্মৃতিকথা সম্পাদনার কাজটাই সে করছে।

আউরার শেষে উপন্যাসটি রচনার পটভূমি সম্পর্কে কার্লোস ফুয়েন্তেসের একটি লেখাও জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেটি এর পাঠকে অনেকাংশে সহজ করে তোলে। দ্বিতীয় পুরুষে রচিত এ উপন্যাসের সাবলীল একটি ভাষান্তর আমাদের সামনে হাজির করেন অনুবাদক। বিশ্বসাহিত্যের, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের অনুরাগী বাংলা ভাষার পাঠকের কাছে দারুনভাবে সমাদৃত হবে বইটি।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×