somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টানেল

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটি ঠিক কখন ঘটেছিল, তা তোমার মনে নেই। তবু এই ঘটনার ভেতরে ঢুকে গেছ তুমি। এমন একটি ঘটনারই অংশ তুমি হয়ে উঠেছ যেখানে কিছুই তোমার নিয়ন্ত্রনে নেই। তুমি বুঝতে পারো, কিছু একটা ঘটেছে। কিন্ত কিছুতেই সেই ‘কিছু একটা’ তুমি ভাবতে পারো না। তোমার ভাবনায় শুন্যতা ছাড়া আর কিছু নেই। কেবল ঘটমান সময়ের এক অহেতুক প্রবাহ ছাড়া নিজেকে তুমি আর কিছুই ভাবতে পারো না। ঠিক কখন থেকে ঘটনাটা শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে তোমার কোনো ধারনা নেই। কেননা যখন থেকে তুমি নিজেকে উপলব্ধি করতে পারছো, তার পূর্ববর্তী আর কোনোকিছুর স্মৃতি তোমার নেই। তোমার সমস্ত অনুভবের জায়গাগুলো ভরে আছে ঘটনার এই বর্তমান সময়। তুমি হাটছো। এক বৃত্তাকার দেয়াল তোমার চারপাশে। তোমার পায়ের নিচে দেয়াল, ভারসাম্য রার জন্য তুমি দুহাত ছড়িয়ে দিয়েছে সেই দেয়ালে। আবার মাথার ওপরেই হালকা নীলরঙ্গা সেই একই দেয়ালের উপস্থিতি। দেয়ালের ভেতরে এই ক্রমাগত হেটে চলা ব্যতিত তোমার আর কোনো স্মৃতি নেই। কেবল সদ্য পেরোনো বর্তমান আর চলমান তোমার বিমর্ষ অবস্থাই একমাত্র জানো তুমি। স্যাঁতসেতে আর প্রয়ান্ধকার এক টানেলের ভেতর হাটছো তুমি। ঠিক কখন থেকে এই যাত্রা আরম্ভ হয়েছে সে বিষয়ে তোমার কোনো ধারনাই নেই। ফলে তোমার মনে হচ্ছে অনন্তকাল তুমি হেটে চলছো পলেস্তরা খসা আর স্যাতসেতে বিবর্ন টানেলের ভেতর দিয়ে। তোমার পায়ের নিচের মেঝে খুব অসমান আর এবড়ো থেবড়ো। ছোট বড় নানা গর্ত মেঝেতে, যা তোমার চলাকে ক্রমশ বিঘ্নিত করে তুলছে। প্রসারিত তোমার দুহাত দেয়ালের যেখানেই লাগছে, সেখান থেকে খসে পড়ছে সামান্য চুনসুরকি। অসংখ্য খানা-খন্দ পেরিয়ে তুমি হাঁটছো। অসমান দেয়াল ধরে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তোমার দুহাত। পা গুলো অন্ধকারে হোচট খাচ্ছে বারবার। তুমি হেটে চলছো সামনের দিকে। এক অন্ধকার থেকে হয়তো অন্য কোনো অন্ধকারের গভীরে। তুমি হাটছো, প্রানপন হেটে চলছো তুমি। তোমার চোখ, হাত, পা তাদের সর্বচ্চো একনিষ্ঠতার পরীক্ষা দিচ্ছে। তুমি হেটে চলছো। তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। তোমার হাতগুলে যখন আর পারছে না, ক্লান্তির সর্বশেষ বিন্দুতে যখন তারা পৌছালো, তখন তুমি তাদের রেহাই দাও। তোমার পা যখন ছোট-বড় গর্ত এড়িয়ে চলতে পারছে না, তখন তুমি তাদের স্বেচ্ছচারী হতে দাও। দীর্ঘ, কান্তিকর, একঘেয়েএই চলনের চেয়ে তোমার বরং হোচট খেয়ে পড়ে যেতে ইচ্ছে করে। তারপর সেখানেই তুমি হয়তো বিশ্রাম নিতে চাও। কিন্তু সমস্ত সাবধানতা ছুড়ে ফেলে যখন তুমি হাটছো তখন তোমার সামনে আর কোনো খানাখন্দ নেই। বেশ স্বাচ্ছন্দে, ভারসাম্য রক্ষার জন্য হাতের কোনরূপ সাহায্য ছাড়াই, সাবলীল হাটছো তুমি। দীর্ঘক্ষনের সতর্কতা তোমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। কেননা সেসব ছাড়াই তুমি দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে হাটতে পারছো তুমি। তোমার মাথার ওপরের নীল দেয়ালটা কোথাও কোথাও বেশ নিচু। যেন সামান্য লাফ দিলে তোমার মাথা ঠুকে যাবে সেখানে।

আরো আরো দীর্ঘন, প্রায় নিস্তেজ ও অবশ না হওয়া পর্যন্ত তুমি হাটতে থাকো। যে সমস্ত জায়গা তুমি পেরিয়ে যাচ্ছ আর তোমার উপস্থিতি যে জায়গায়, তাদের ভেতরে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্যই তুমি তুমি দেখতে পাও না। পুরো এলাকাটাই একই রকম স্যাতস্যাতে, প্রয়ন্ধকার, দেয়ালের গায়ে অজস্র ভাঙ্গাচোরা, গুমোট আর কান্তিকর এক বিষাদে আচ্ছন্ন। তুমি হাটতে থাকো। কোনো কিছু নেই, কেবল হেটে চলার এক তীব্র তাগিদ ছাড়া তোমার সামনে আর কোনোকিছু নেই। তোমার পা পুরোপুরি অবশ হয়ে এলে তুমি একবার থামো। টানেলের অসমতল দেয়ালে হেলান দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়ো, অবশ্য তুমি ঠিক ততটাই ছড়াতে পারো, তোমার চারপাশের দেয়াল তোমাকে যতটা সুযোগ দেয়। প্রবল ক্ষুধা অনুভব করো তুমি। পেটের ভেতরে নাড়িভুড়ির অস্থির নাড়ানাড়া টের পাও। ক্লান্তিতে তোমার দুচোখ আপনাতেই বুজে আসে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হও তুমি। তারপর গভীর এক ঘুমের ভেতরে ডুবে যায় তোমর সমস্ত সত্তা।



ঠিক কতন তুমি এই নিদ্রার ভেতরে ছিলে সেটা তুমি বুঝতে পারো না। কেননা তা পরিমান করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টাই তোমার ধারনাতীত। তোমার ঘুম ভাঙ্গে এক লাস্যময়ী যুবতীর কণ্ঠস্বর শুনে। ওইতো হেটে আসছে সে। তার একহাতে পানপাত্র আর রঙ্গিন তরলে ভরা কাচের বোতল, অন্যহাতে ধোয়া ওঠা গরম খাবার। বেশ সুঠাম হলেও ভূমিতে পা স্পর্শ না করেই যেন সে হাটছে। তার হাটাকে মনে হয় ভারসাম্য ঠিক রেখে শুন্যে ভেসে আসা। সে তোমাকে খাবারগুলো দেয়, পানপাত্রে সুরা ঢেলে রাখে তার পাশে। দীর্ঘকাল অভুক্ত তুমি গোগ্রাসে খেতে থাকো সেইসব সুস্বাদু খাদ্যসমূহ। অথবা ক্ষুধার সময় সকল খাদ্যকেই তোমার অমৃতসম মনে হয়। দ্রুত খাওয়া শেষ করে পানপাত্র তুলে নাও হাতে। আর তখনই কেবল তরুনীর আশ্চর্য যৌবন তোমার চোখে পড়ে। অর্ধস্বচ্ছ কাপড়ে আবৃত তার সমস্ত দেহ। মসৃন উরু, নিতম্ব আর ভরাট স্তনযুগলের সৌন্দর্যে তুমি দিশেহারা হয়ে পড়ো। তুমি বুঝতে পারো এ হলো উর্বশী। স্বর্গের অপ্সরী। তোমার সমস্ত কামনার সামনে সে তার দেহ নিয়ে নিবেদনের ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। তুমি তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করো। সে বলে, এই নিয়ে তার সাথে তোমার ছয়শত বাহাত্তুর বার দেখা হয়েছে। তুমি শুধু বুঝতে পারো এ উর্বশী, এছাড়া তার সাথে দেখা হবার কোনো স্মৃতি তুমি মনে করতে পারো না। তবু তোমার মনে রাখা বা না রাখায় তার কিছু এসে যায় না। সুরার নেশা গাঢ় হতে শুরু করলে তুমি তাকে আলতো করে কাছে টানো। তোমর শরীর ভীষনভাবে জেগে ওঠলে তুমি তাকে গ্রহন করো। অমসৃন মেঝের উপর বুনো সঙ্গমের একটানা মৃদু গোঙ্গানী ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যায় না। দীর্ঘক্ষন পর ঘুম ভাঙ্গলে তুমি নিজেকে আবিষ্কার করো সেই টানেলের উপরে শোয়া, কিছুটা পরিশ্রান্ত আর তৃপ্ত। সেই একই রকম ঘোলাটে অন্ধকার আর দেয়ালের উপস্থিতি তোমাকে আবারো হেটে চলার প্ররোচনা দেয়। তুমি হাটতে থাকো। পূর্ববৎ একঘেয়েভাবে, একই পথে, একই অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহায়তা নিয়ে। তোমার পৃথিবীতে ক্রমাগত এই হেটে চলা ব্যতিত আর কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। দীর্ঘ দীর্ঘক্ষন তুমি হাটতে থাকো। একসময় তুমি বুঝতে পারো, এই হেটে চলার অর্থ তুমি এখান থেকে বেরোতে চাও। যেকোনোভাবে তুমি এই ক্লান্তিকর টানেল থেকে মুক্তি চাও। এছাড়া এই মুহুর্তে তোমার আর কোন চাওয়া নেই। তোমার মনে হয় এক আশ্চর্য গোলকধাঁধাঁয় আটকে পড়েছ তুমি। কেবল ফিরে ফিরে তুমি তোমার যাত্রারম্ভের স্থানে আসছো। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রমানও তোমার কাছে নেই। অবশ্য এই থাকা অথবা না থাকা একই অর্থ বহন করে অথবা আদৌ এর কোনো মানে হয় না। তবু সবকিছুর একটি মানে দাঁড় করানো ছাড়া তোমার তেমন কিছু করবারও নেই। তুমি পূর্ববৎ একইভাবে হাটতে থাকো যতক্ষন না কান্তিতে তোমার হাত পা গুলো অসাড় হয়ে আসে। তোমার এ যাত্রাপথে হঠাৎ বৈচিত্রের মত আবির্ভূত হয় আপদমস্তক সফেদ পোশাকের একজন মানুষ। দীর্ঘক্ষন পর আবারও কোনও জীবিতের সাক্ষাতে তুমি খুশি হয়ে ওঠো। তাকে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকো তুমি। সাদা আলখেল্লার আবরণে নিজেকে ঢেকে রেখেছে সে। দীর্ঘদেহী, সুঠাম এক যুবাপুরুষ। তোমার মনে হয় তোমাকে দেখে সে বেশ আনন্দিত। তোমরা পরষ্পর নিঃশব্দে মৃদু হাসিতে এক ধরনের শুভেচ্ছা বিনিময় করো। এরপর সে তোমার কুশল জিজ্ঞাসা করে, পরিচয় জানতে চায়। তুমি নিজেকে এক পরিব্রাজক হিসেবে তার কাছে তুলে ধরো। সে জানায় সে একজন যাজক, সে তোমাকে শান্তির বানী শোনাতে এসেছে। দীর্ঘ পরিভ্রমনে তুমি যাতে একেবারে ভেঙ্গে না পড়ো সেজন্য ঈশ্বর তাকে তোমার কাছে প্রেরণ করেছেন। ব’লে সে একবার মৃদু কণ্ঠে ঈশ্বরের স্তব করে। তুমি তার কাছে জানতে চাও ঈশ্বর কোথায়। সে বলে ঈশ্বর তোমার ভেতরেই আছেন। সৃষ্টির আত্মায় তিনি বেচে থাকেন। ঈশ্বর যুগপত তোমার ও তার ভেতরে বিরাজমান। এমনকি, সে তোমাকে জানায়, উর্বশীর ভেতরেও তিনি আছেন। তুমি তাকে জিজ্ঞাস করো, ‘তাহলে কি ঈশ্বর এই টানেলের ভেতরেই আছেন। সে জানায়, ‘হ্যা, তিনি টানেলের ভেতরে আছেন, কেননা তিনি তোমার সঙ্গে আছেন’। কিন্তু তোমার ভেতরে তুমি এক ভয়ানক শুন্যতা ছাড়া আর কিছু অনুভব করতে পারো না। তুমি তাকে সেটা বলো। সে ভবলেশহীনভাবে হাসে। সে বলে ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারলে তোমার নিঃসঙ্গতা কেটে যাবে। তুমি এক শান্তিময় জীবনের সাক্ষাৎ পাবে। সে তোমাকে ঈশ্বরের ধ্যানমগ্ন হতে বলে। কিন্তু প্রচণ্ড অস্থিরতায় তুমি কোনোভাবেই ধ্যানস্থ হতে পারো না। তুমি বিড়বিড় করে বলতে থাকো, ‘ঈশ্বরও তাহলে এই টানেলে থাকেন!’ তোমার এই কথায় যাজক চমকে ওঠেন। তার চোখেমুখে হতাশা ফুটে ওঠে। এই প্রথম তুমি তার সাথে একত্মতা অনুভব করো। তোমার মনে হয় যাজক আর তোমার বেদনা একই রকম। কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ো তুমি। তারপর সম্বিত ফিরলে দেখো, একবারও পেছনে না ফিরে যাজক তোমাকে অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে। তার যাবার দিকে তাকিয়ে থাকো তুমি। তোমার মনে হয় যাজক হতাশাগ্রস্ত। সে তোমাকে বিশ্বাসী হিসেবে দেখতে চায়, কেননা এতে তার খানিকটা স্বস্তির ব্যাপার আছে। যাজক চলে গেলে তুমি পূর্ববৎ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ো। পুনরায় একই কান্তিকর আর একঘেয়ে টানেলের ভেতরে হাটতে থাকো তুমি। দীর্ঘকাল হাটবার পর কান্তিতে তুমি যখন আবারো নুয়ে পড়ছো, ঠিক তখনই উর্বশী তার সেই বিখ্যাত পানপাত্র আর লোভনীয় খাবার নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়ায়। তার এই দাঁড়ানো ঠিক কততম নিবেদন তা তুমি হিসেব করতে পারো না। তবে তুমি এবার যখন তাকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করো, তুমি বুঝতে পারো যে, তার চেহারা এবং দেহসৌষ্ঠবে আগের সেই লাবন্য আর উদ্দাম যেন অনুপস্থিত। কিছুটা যেন ক্লান্ত সে। তবু সে তার মুখায়ববে সেই আকর্ষনী হাসিটি ফুটিয়ে তুলতে চায়। সেই আবেদন তুলে ধরতে চায় তার দেহে। তবু সেসব যেন ঠিক ধরা পড়ে না। তার কষ্টার্জিত হাসিটি তোমার কাছে ফিকে মনে হয়। কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে সে তোমার পাশে বসে পড়ে। তুমি খেয়াল করে দেখ যে, তার চামড়ায় ভাঁজ, বয়সের বলিরেখা বিদ্যমান। উর্বশীর প্রতি তোমার একধরনের সহমর্মিতা তৈরি হয়। তোমার পাশে বসে সে তোমাকে বিবিধ খাদ্য সামগ্রী এগিয়ে দেয়। দীর্ঘ, দীর্ঘক্ষন অভুক্ত তুমি নিঃশব্দে তোমার আহার সম্পন্ন করো। খাওয়া শেষ হলে সে তোমার হাতে তার চিরন্তন সেই পানপাত্রটি তুলে দেয়। তুমি খেয়াল করে দেখ যে, পানপাত্রের তরলে রক্ত-কফ-পুজ ভাসছে। তোমার প্রচণ্ড ঘৃনা হয়। তুমি টানেলের দেয়ালে সজোরে ছুঁড়ে মারো পাত্রটি। কিন্তু তোমার এই ক্ষোভ কীসের উপর, তা তুমি বুঝতে পারো না। অভ্যাসবশত উর্বশীকে কাছে টানো তুমি, সেও সাড়া দেয় এবং তোমার মনে হয় এটাও অভ্যাসবশত। তোমাদের নিয়মমাফিক রতিক্রিয়া শেষ হলে উর্বশীর মুখমণ্ডলের দুঃখের রেখাগুলো পড়তে পারো তুমি। তার এই বিষাদকে তোমার চিরকালীন মনে হয়। তার বাইরের আবরন, রূপযৌবন সকল কিছু যেন ম্লান তার এই চিরবিষাদের কাছে। উর্বশী তোমার দিকে অর্থপূর্ণভাবে তাকায়। তুমি তার চোখের ভাষাটি নিমেষেই পড়ে ফেলতে পারো। তোমার মনে হয় উবর্শী এই অন্তহীন টানেলের অনিচ্ছুক বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায়। তুমি তাকে জিজ্ঞাসা করো সে কতদিন এই বিবর্ন টানেলে আছে। সে বলে, সে জানেনা। তবে সে শুরু থেকেই এখানে আছে। এই টানেল ছাড়া তার স্মৃতিতে আর কিছুই নেই। তুমি তাকে বলো যে কোনোভাবে এখান থেকে তুমি মুক্তি চাও। এই ভয়ংকর একঘেয়ে টানেলের বাইরে যেতে চাও। সে বলে সে তোমার সঙ্গি হবে, সে ও প্রচণ্ডভাবে এই টানেল থেকে মুক্তি চায়। তুমি তার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকো। তোমরা ভয়ানক অস্থিরভাবে সামনে এগিয়ে যেতে থাকো। যেন এই ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়া ছাড়া তোমদের আর কোনো ল্ক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য নেই, কখনো ছিল কিনা তাও তোমরা জানতে পারো না। কেবল একের পর এক টানেলের আকাবাকা গলিপথ তোমরা পেরিয়ে যেতে থাকো। তোমাদের বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয় যেন সামনেই কোনো অলীক দরোজা রয়েছে, যেখান দিয়ে তোমরা এই অভিশপ্ত টানেলের বাইরে চলে যেতে পারবে। এর বাইরে গিয়ে একবার প্রান ভরে শ্বাস নিতে পারবে। তোমরা তোমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও শুধুমাত্র এমন মুক্তিই কামনা করো। একের পর এক বাঁক পেরিয়ে তোমরা কেবল এই প্রায়ান্ধকার টানেলে ছুটতে থাকো। তোমাদের দুজনের মনেই অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল আলোর বাসনা রয়েছে, যদিও তেমন আলোক সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারনাই নেই। যদিও অনিশ্চিত, তবু তা তোমাদের আন্দোলিত করে। যদিও সম্ভাবনা অনেক প্রকার, তবু তাদের তোমরা কল্পনা করতে পারো না। কেবল এই নিশ্চিত পথচলা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তোমাদের তাড়িত করে। তোমরা আরো বহু বহুন স্যাতসেতে টানেলের অভ্যন্তরে হাটতে থাকো। এক সময় তোমরা খেয়াল করো তোমাদের দিকে হেঁটে আসছে সেই যাজক। এখন তার দুচোখে কেবল বিষন্নতা আর হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি। যাজক তোমাদের দিকে তাকিয়ে তোমাদের অস্থিরতাকে পড়ে ফেলতে পারে যেন। উর্বশী যাজকের দিকে চেয়ে তার সেই ভুবন ভোলানো মোহিনী হাসিটি ছুড়ে মারে। যাজক বিভ্রান্ত হয় যেন কিছুটা। তারপর বিনা বাক্যব্যয়ে তোমাদের সাথে হাটতে থাকে সেও। একের পর এক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তোমরা কেবল সামনের দিকে ছুটতে থাকো। একসময় তোমরা প্রশস্ত একটি জায়গায় এসে পৌঁছাও। টানেলটা এখানে একটু বিস্তৃত। হাত পা ছড়িয়ে বেশ আয়েস করেই হাটতে পারছো তোমরা। ফলে, প্রচণ্ড আশাবাদী হয়ে ওঠো তোমরা। তোমাদের চলার গতি কয়েকগুন বেড়ে যায়। আরো বহু বহুক্ষন হাটার পর তোমাদের মনে হয় টানেল যেন ক্রমশই প্রশস্ততর হচ্ছে। ফলে ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং কামনা বাসনার বোধ তোমরা অনুভব করতে পারো না। কেবলই সামনের দিকে সমস্ত দৃষ্টি ও মনোযোগ তোমাদের। আরো প্রশস্ততার দিকে তোমরা ক্রমশ ধাবিত হতে থাকো। ধাবমান তোমাদের সামনে একটি অস্পষ্ট সম্ভাবনার ঝিলিক ছাড়া আর কিছুই নেই। তবু তোমাদের কাছে ওইটুকুকেই জীবনের একমাত্র আরাধ্য বলে মনে হতে থাকে। একের পর এক বাঁক পেরিয়ে তোমরা পাগলের মত ছুটতে থাকো। তোমাদের হাঁটা কখন যে দৌড়ে পরিনত হয়েছে তা তোমরা বুঝতেই পারোনি। দৌড়াতে দৌড়তে তোমরা এবার অনতিদূরেই উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি টের পাও। সেদিকে ল্ক্ষ্য করে তোমাদের গতি আরো বেড়ে যায়। সেই আলো পেরিয়ে আরো আলোর দিকে তোমাদের যাত্রা অব্যহত থাকে। সামনের একটি বাঁককে তোমাদের কাছে খুব সম্ভাবনাময় মনে হলে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে সেটা পার হলেই তোমরা সবিস্ময়ে আবিষ্কার করো ঠিক যেখান থেকে যাত্রারম্ভ করেছিলে সেখানেই ফিরে এসেছো তোমরা। পানপাত্রের ভাঙ্গা অংশ ইতস্তত ছড়ানো ছিটানো রয়েছে টানেলের মেঝেতে। উর্বশী তখন বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘উনআশিতম বার এমন হলো।’
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×