somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সত্যিকার [অ]রম্য গল্প: নাটকের বিবর্তন , প্যাকেজ বিপ্লব , এবং একজন বিপ্লব-প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ডিজুস প্রজন্ম এবং যাদের জন্ম ১৯৮৭ এর পর , তারা প্রথমে বুঝে উঠতে না পারলে নিচের দিকে পাদটিকার সাহায্য নিন]

৯০ দশকের মাঝামাঝি , সম্ভবত ৯৫ সাল, আমি তখন ক্লাশ সিক্সে । বাংলাদেশি চ্যানেল বলতে কেবল তখন বিটিভি । ডিশ কালচারের সূচনাকাল , বিটিভির সূর্য অস্তমিত প্রায় , মৃত্যুর আগে "রূপনগর" নাটকের মত দুই একটা ঝলক ।ধারাবাহিক নাটকের আলো টিমটিমে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ । সবেধন নীলমনি হয়ে আছে "ইত্যাদি" এবং বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক নাটক।

৯৫ এর শেষদিকে হুরমুড় করে নতুন চমক, নতুন এক ধরণের নাটক। বিটিভির ম্যারমেরে অন্ধকার ৩ দশক পুরনো সেট ,ঘুম জাগানিয়া ইনডোর স্টুডিও থেকে নাটক চলে আসলো খোলা আকাশের নিচে ।নাটক দেখে সবাই বেশ পুলকিত ,বিটিভির প্রোগ্রাম এত অন্ধকার প্যাকেজ নাটকে এত "আলো" [১]।

বিটিভির নাটকে , গাউন পেচিয়ে বসে থাকা বিজনেস ম্যাগনেট শিহাব চৌধুরীর ঘরে পর্যন্ত দরজার পাল্লা নেই, কলিংবেল টিপে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে মেয়ের দরজা খোলার পরোয়াও নেই, "মা" ডেকে বলে সোজা পর্দা সরিয়ে বাসায় ঢুকে আসে ।অথচ প্যাকেজ নাটকে দরজার কোন অভাব নেই, গজারি কাঠের পাল্লায় আবার নকশা তোলা , কলিংবেল টেপার পর দরজা খুলতে চায় না , পারলে
viewing glass গলিয়ে ক্যামেরা ঢুকে পরে , আগন্তুককে magic ball এ দেখিয়ে তবেই দরজা খোলা [২] ।

গ্রামের ছবিটাও বদলে গেলো ,মাটির উঠানটা খাকি হার্ডবোর্ডের মসৃণতা হারিয়ে এখন যথেষ্ট এবড়ো থেবড়ো ।গায়ের মেঠো পথে এখন আলগা খড় পরে থাকে না, পথের ধারের গাছগুলো পথের সাথে আকারের অনুপাতটা নির্লজ্জভাবে লংঘন করে না , পথ চলতে থাকা পথিকের এখন চলতে শুরু করতেই কারও সাথে দেখা হয়ে যায় না [৩]।

প্যাকেজ বিপ্লবে অভিনতা - অভিনেত্রীদের মধ্যেও এনে দিল বিপ্লব । সেসময়কার ক্রেজ দাপুটে ৮ তরুণের মধ্যে তৌকির ভালমানুষের মুখোশ খুলে রীতিমত অট্টহাসি এক্সপার্ট ভিলেইন , জাহিদ হাসান বোকা মানুষী ছাড়িয়ে রীতিমত একজন তরল সরল বোকা সোকা , চিরসবুজ আজিজুল হাকিম বিটিভির অন্ধকার ছেড়ে প্রাকৃতিক আলোতে গাঢ় সবুজ , শহীদুজ্জামান সেলিম চান্স পেলেই আতেলুকচয়াল । তাদের বিপরীতে বিপাশা হায়াত , শমী কায়সার , আফসানা মিমি আর বিজরীদের সরব ও শক্তিশালী উপস্থিতি ।

২০০৩/০৪ এ "ডিজুস বি্প্লবের" আগে "প্যাকেজ বিপ্লব"টাও
ছিল মনে রাখবার মত ।সবকিছুতে শুরু হল প্যাকজের ছড়াছড়ি
*কাচাবাজারে ১০ রকমের গুড়ো মাছ মেশানো ছোট মাছের প্যাকেজ
* কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্টের প্যাকেজ
* কাজের মেয়েকে ইংরেজি শিখিয়ে দেবার প্রতিগ্গা নিয়ে স্পোকেন ইংলিশের প্যাকেজ
*৩ দিনে সিকিম ভুটান নেপাল একসাথে দেখিয়ে দেবার বিশ্বভ্রমণ প্যাকেজ
** এবং আরও আরও .................



পাদটিকা :
[ডিজুস প্রজন্ম, যারা অল্প বয়েসের কারণে প্যাকেজ বিপ্লব miss করে গেছে]

[১]বিটিভির সেটে পূর্নাংগ নাটক হত , বাসার ড্রইংরুম আর অফিসের CEO এর রুমের মাঝে হয়ত একটা হার্ডবোর্ড । আলোর প্রচন্ড স্বল্পতা ছিল , এখন এমন লাইটিং দেখলে অনেকেই ঘুমিয়ে যাবে ।প্যাকেজ নাটকের শুটিং শুরু হল আউটডোর সেটে । আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক আলোতে নাটক তখন আলোকিত ।

[২]ঘরের দেয়ালগুলো সব হার্ডবোর্ডের , দরজায় পাল্লা লাগালে দেয়াল ধ্বসের আশংকা আছে , তাই দরজায় কোন পাল্লা থাকতো না । একটা পর্দা দিয়ে দরজা ঢাকা থাকতো । দরজা নেই বলে দরজা নক করার উপায়ও ছিল না, বিকল্প ছিল তাই কলিংবেল ।

[৩] গ্রাম সাজাতে বিটিভি হার্ডবোর্ডের মেঝে বানাতো ,তাতে ঘরের ভিটার কোনাটা মসৃণ না হয়ে যথেষ্ট শার্প দেখাত ।টিনের ঘরে কোন চাল ছিল না বলে উপরে দিকে কখনও ক্যামেরা ফোকাস করা হত না , গায়ের পথে বিছানো থাকতো আলগা খড় , গাছের অংশবিশেষ কেটে দাড় করিয়ে মহীরুহ দেখানো হতো , এত কিছুর পর তৈরি হত ছোট একটা পথ , এ পথে একটানা বেশি হাটার সুযোগ নেই , তাই হঠাত দেখা যেত পথের মাঝে দু'জনের দেখা হয়ে গেছে)


এত কিছুর পরও আবেগটা ছিল অনেক বেশি .............এখন সেটা খুজে পাওয়া যাবে না , দরদ দিয়ে করা সেসব অভিনয় কালের গর্ভে হারিয়ে গেলো ।

চলবে ....................................
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৫১
৭৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×