somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও অরিএী নয়, অপরাজিতা...!!!

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরিএী সুইসাইড করেনি, ওকে সুইসাইড করতে বাধ্য করা হয়েছিলো । বাবা, মা আমার জন্য অপমান হবেন, সেই আমি না থাকলেই ভালো । অরিএী কে বেত দিয়ে পিটিয়ে আধমরা করে ফেললেও সুইসাইড করতো না । এমনকি বিনা কারনেও যদি শিক্ষকরা ছাএ-ছাএীদের বকা দেন তবুও তারা মেনে নেয় । কিন্তু একজন ছাএ-ছাএীকে ওর অপরাধের জন্য যদি ওর সামনেই বাবা-মা কে অপমান করেন, সেটা অরিএীর বয়েসের ছেলে-মেয়েদের মেনে নেয়া খুবই কষ্টের ।
২০১৪ সাল । দেশে তখন হরতাল, অস্হিরতা বিরাজমান । আমার খুব আদরের, খুব নিকট আত্বীয়া, খুবই লক্ষী একটা মেয়ে ঢাকার এক নামকরা কলেজ "বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফ সরকারী কলেজ" থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে । ধরুন, ঐ ছাএীর নাম দিলাম অপরাজিতা । পাশের স্কুল থেকেই ভালো রেজাল্ট করেছিলো এস.এস.সি তে । বান্ধবীদের সাথে ভর্তি হয়েছিলো বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফ সরকারী কলেজে । পড়াশুনা মনযোগ দিয়েই করছিলো । সারারাত পড়াশুনা করে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার হলে গিয়ে আধাঘন্টা পরে সে অজ্ঞান হয়ে যায় । এক শিক্ষক অপরাজিতার আম্মুকে খুবই বকাঝকা করেন । কেন সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো, এই অপরাধে । এরপর থেকেই ঐ ক্লাস টিচার অপরাজিতা কে সবসময় হেয় করে কথা বলতো । অপরাজিতা নিজেকে অপরাধী ভেবেই চুপচাপ পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলো ।
টেস্ট পরিক্ষা শেষ হলো । রেজাল্ট বের হলো । কেমেস্ট্রিতে ফেল করেছে । অনেকেই ফেল করেছে। অপরাজিতা ওর আম্মুকে বলেছে, সে পরিক্ষা ভালোই দিয়েছে । ফেল করার মতো পরিক্ষা সে দেয় নি । কিন্তু ঐ শিক্ষক যে হেয় করে কথা বলতো উনিই হলেন কেমেস্ট্রির শিক্ষক । কয়েকদিন পরে অপরাজিতা কলেজে যায় এবং সেই শিক্ষক ওকে জানিয়ে দেয় তুমি এই কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে পারবা না । গতকাল আমরা রিটেক পরীক্ষা নিয়ে নিছি এবং তুমি রিটেক দেওনি । এটাও বলেছিলেন, তুমি রিটেক দিলেও ফেল করবা, তুমি কেমেস্ট্রি পাশ করতে পারবা না । পরের দিন ওর আম্মু কে নিয়ে কলেজে যায়। কোন কথা নয়, আপনার মেয়েকে নিয়ে এই কলেজ থেকে চলে যান । টিসি নিয়ে নেন।
অপরাজিতার মা অনেক চেষ্টা করলেন । কেউ উনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন নাই । ফর্ম ফিলাপের শেষ সময়ে আমাকে জানালেন । আমি বললাম, কাল কে হরতাল তবুও আসো অপরাজিতা কে নিয়ে । অবসরপ্রাপ্ত এক আর্মি অফিসার আমাকে বললেন, আমি ও তোমার সাথে যাবো । দেশের অবস্হা ভালো না । ওরা তোমাকে ঢুকতে নাও দিতে পারে । উনাকে নিয়ে আমি ১০ টার দিকে কলেজে গেলাম। প্রিন্সিপাল একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল । অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার সরাসরি প্রিন্সিপালের রুমে গেলেন আর আমি সোফায় বসলাম ভাইস প্রিন্সিপালের রুমে অপরাজিতাদের নিয়ে । ভাইস প্রিন্সিপাল একটু বয়স্ক মানুষ । উনি ভেবেছেন, আমি ও উনার কলেজের ছাএ । উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই তোমার কি সমস্যা ? স্যারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, স্যার আমার এই আত্বীয়ার সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি । স্যারকে বললাম, স্যার একটু বসতে পারি ? বিরক্ত হয়েই বললেন, বসো । ইতিমধ্যেই ঐ কেমেস্ট্রি শিক্ষক ভাইস প্রিন্সিপালের রুমে এসে অপরাজিতার মাকে বললেন, আপনারা কলেজে এসেছেন কেন? আপনাদের না বলছি, ও পরীক্ষা দিতে পারবে না । আজকে টি সি নিয়ে যাবেন । আরও কি কি যেন বলতে লাগলেন । আমি ঐ কেমেস্ট্রি শিক্ষক কে বললাম, স্যার আপনারা শিক্ষক । আপনারা যদি মনে করেন আপনার ছাএী পরীক্ষা দেবার মতো ফিট না, ঠিক আছে পরীক্ষা দিবে না । আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি ওর গার্ডিয়ান । বিড়বিড় করতে করতে উনি ভাইস প্রিন্সিপালের রুম থেকে চলে গেলেন ।
এবার ভাইস প্রিন্সিপাল আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি করি । ইচ্ছে না থাকা সত্বেও বললাম, আমি ও একজন শিক্ষক । যখনই জানলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই । হটাৎ করে, তুমি থেকে আপনি তে চলে গেলেন । আমার ভিজিটিং কার্ড নিলেন । সবকিছু শুনলেন এবং বললেন আমি এ ব্যাপার টা নিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলবো । ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার কে বললাম, স্যার আপনার শিক্ষকের ব্যবহারে আমি সত্যিই মর্মাহত । কিছুই বললেন না । বুঝলাম, ভাইস প্রিন্সিপালের চেয়েও ঐ কেমেস্ট্রি শিক্ষক বেশী প্রভাবশালী ।

যাইহোক, আমার আত্বীয়াকে ঐ কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি কিন্তু ওর বান্ধবীরা অনেক টাকা ঘুষ দিয়ে ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছিলো । পরে জানতে পারে অপরাধ ছিলো, ঐ কেমেস্ট্রি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার জন্য এমন শাস্তির ব্যবস্হা । আমার ঐ আত্বীয়া ঢাকার অন্য একটা কলেজের নামে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিলো এবং বর্তমানে সে ঢাকার নামকরা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ।

অপরাজিতা সেই দিন হেরে যায়নি । সামনের দিনগুলোতে ও হেরে যাবে না । তাই, ওর নাম দিলাম অপরাজিতা ।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×