somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহস করে এই সত্যটা বলা দরকার—

২২ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জন্ম থেকে আজ অবধি ভিন্ন সম্প্রদায়ের কোনো অত্যাচারী চাক্ষুষ করি নি । যত নিপীড়ক দেখেছি সব নিজ সম্প্রদায়ের । ধনাঢ্য হোক, রাজনীতিক হোক, ধর্মনেতা হোক চারপাশের সব জালেমই মুসলিম । আশেপাশে কোনো হিন্দু অত্যাচারী দেখলাম না; যা ছিল সব ইতিহাসে ।

বরং উল্টোটাই দেখেছি । মুসলিমদের দেখেছি, কোনোদিন কপাল মাটিতে ঠেকায় নি, কিন্তু ‘মালাউন’ ডাক দিয়ে মার মার কাট কাট করে হামলে পড়ছে । কোনো অত্যাচারী হিন্দু, কিংবা খ্রিষ্টান, কিংবা বৌদ্ধ কোনো মুসলিমকে নিপীড়ন করেছে—দেখি নি । বিভিন্ন দেশে ঘটছে, আমার আশেপাশে না ।

আজব তামাশা হলো, মুসলমান তার স্বজাত মুসলমান ভাইকে খুন করার পরপরও যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন—তার জাত কী । বলবে মুসলিম ।

সরকার মুসলমান । পুলিশ মুসলমান । সন্ত্রাস মুসলমান । জঙ্গি মুসলমান । ঘুষখোর, সুদখোর, হারামখোর মুসলমান । জুয়াবাজ, মাগিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ মুসলমান । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিজাব পরলে তিরস্কার করে এবং দাবি করে সে মুসলমান । হল, জমি, দোকান, সম্পদ জোরপূর্বক দখল করে মুসলমান । ধর্ষকও মুসলমান । ভণ্ড, প্রতারক, শয়তান—চোখে দেখা সব জালেম মুসলমান ।

অথচ যারটা খাচ্ছে, যাকে মারছে, যার ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, যারটা দখল করছে, যাকে তিরস্কার করছে—সেও যে তার মতো (তারচে’ ভালো না হোক) মুসলমান এ-বিষয়ে অত্যাচারীর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ।

এইসব ক্ষেত্রে ‘মুসলমান’ পরিচয়টা কি আসলেই ‘মুসলিম’ জাতি পরিচয়কে বোঝায়, নাকি আজকালকার বংশ পরিচয়ের মতো একটা ঠুটো বুলি এটা । অর্থাৎ তুমি হাওলাদার, আমি শিকদার । তেমন তুমি হিন্দু, তো আমি মুসলমান । আর কিছু কি আছে ?

কট্টর মুসলিম-বিরোধীও জাতীয় পরিচয়পত্রে লিখছে মুসলমান । তসলিমা নাসরিন, আসিফ মহিউদ্দীন, জাফর ইকবালরা কী লেখে ? আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দাররা কী লিখতো ?

এমনকি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসায় একজন মুসলমান শিক্ষক তার ছাত্রকে, যে ভালো মুসলমান হতে এসেছে, তাকে পেটাতে পেটাতে মেরে ফেলছেন । কিভাবে ?

বাসে-টেম্পুর গায়ে লেখা থাকে—ব্যবহারে বংশের পরিচয় । আচ্ছা, এইখানে ‘বংশ’ শব্দটা কি ‘হাওলাদার’ বা ‘শিকদার’ বোঝায় ? অর্থাৎ ভালো ব্যবহার করলে ভালো হাওলাদার, কিংবা খারাপ ব্যবহারে খারাপ শিকদার চেনা যায় ? এসব বংশ পরিচয়ের কি আদৌ এখন আর কোনো মূল্যমান আছে ? মুসলমান শব্দটাও কি এমনই হয়ে গেছে ?

চতুর্পার্শ্বে সব জালেম মুসলমান দেখার পরেও সারাক্ষণ মাথার মধ্যে বিধর্মী, ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু পোকা কিলবিল করে । এটাই হয়তো স্বজাতির সব জুলুমকে প্রক্সি দেবার মানস তৈরি করছে । হয়তো সারা পৃথিবীর ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ নিজের প্রতিবেশকে ভুলিয়ে দেয় । যার ফলে নিজে একজন জালেম মুসলমান হওয়ার পরও ভেতরে অপরাধবোধ জেগে ওঠে না । আপন ভাইয়ের সাথে প্রতারণতা করে কিন্তু ফিলিস্তিনের সংবাদে উত্তাল ।

আমার মনে হয়, যে-কোনো প্রকার জালেমকে মুসলমান পরিচয় দিতে বাধা দেওয়া উচিত । একজন মানুষ জঘন্য অমানবিক কাজ করবে, আর মানবতার ধর্ম ইসলামের পরিচয়ে নিজেকে ‘মুসলিম’ বলবে—সেটা তো কাদিয়ানিদের মতোই হয়ে গেলো; যা-ই করেন, মুসলমান পরিচয় ক্ষুণ্ন হবে না । তাতে চাই শত মুসলমানকে হত্যা করুন, হাজার নারীকে ব্যাভিচার করুন ।

আমার মনে হয়, একটা মিথ্যা বলা হলেও মুসলমান পরিচয় দিতে কুণ্ঠিত হওয়া উচিত—ইসলামের স্বার্থেই । বরং যে-ধর্ম তাকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছে—সেই পরিচয় দিক । এইভাবে প্রতিটা অন্যায়ের বেলায় দেখা যাক । দেখুক, কোন অন্যায়ে সে হিন্দু হয়, কোনটায় খ্রিষ্টান, কোনটায় ইহুদি, কোনটায় জরথ্রুষ্ট্রী । কোনোটায় যদি না থাকে, তাহলে প্রশ্ন করা যায়— সে কি কোনো ধর্ম মানে না ? মানলে করলো কেনো ? ধর্ম না মানলে মানবতার প্রশ্ন সামনে আনা যায়—অর্থাৎ একজন মানুষ হয়েও কি সে এমন অমানবিক কাজ করতে পারে ? নাকি সে মানুষ পরিচয়ও দিতে চায় না ?

এরপর তাওবা করে, ভুল শোধরানোর পরেই লজ্জিত মুসলমান হিসেবে দাঁড়ানো উচিত । এই বোধের অভাবেই মুসলমান জালেমের সংখ্যা বাড়ছে, এমনকি আমি নিজেও জালেম হওয়ার প্রশ্রয় পাচ্ছি ।

ইসলাম যদি ইনসাফের ধর্ম হয়, তাহলে কোনো মুসলমান জালেম হতে পারে না । একজন জালেম নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে ইসলামের মানহানী করবে—এর চেয়ে ক্ষমার অযোগ্য অধার্মিক ইসলাম-বিরোধী কোনো অপরাধ হতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×