somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪২ জনের বঙ্গোপসাগরে ১৯ ঘন্টা হারিয়ে যাওয়ার গপ্পো- ২

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গপ্পো- ১ Click This Link

সবাই কিন্তু সকাল ৬ টার মধ্যেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। বেগুন ভাজা আর ডিম দিয়ে খিচুড়ি। এরপর গ্লাস ভর্তি রং চা। এই ছিলো আমাদের ২০১০ সালের প্রথম দিনের নাস্তা। জাহাজ চলতে শুরু করেছে...। গাইডের কথা অনুযায়ী আধাঘন্টার মধ্যে আমাদের কটকা বিচে পৌঁছানোর কথা। ৮ টা নাগাদ জাহাজ ছোট খাল দিয়ে চলতে শুরু করলো। আমার কেমন জানি সন্দেহ হলো। গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জাহাজের ৩ তলায় উঠে এলাম। ম্যানেজার লাভলু ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলাম আমরা কোথায় ? তিনি জিজ্ঞেস করলেন- সারেং কে। সারেং জিজ্ঞেস করলো গাইডকে...। বুঝলাম, ভুল পথে ঢুকেছি। আশ পাশ দিয়ে ছোট ছোট মাছের ট্রলার ছুটে যাচ্ছে। ওদের কাছে জানলাম, আমরা কটকার উল্টোদিকে। এখান দিয়ে কটকা যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লাগবে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে যেতে হবে আমাদের। বুঝলাম না, কটকার সাথে বঙ্গোপসাগরের কী সম্পর্ক ? হাতের গ্লাস থেকে ছলকে গরম চা পড়লো গায়ে...। ঘটনা কী ? দৌড়ে ব্রিজে এলাম। সারেং জানালো- এই খাল দিয়ে সামনে যাওয়া যাবে না, পানি কম।

ইতোমধ্যে জাহাজ থেমে গেছে মানে থামাতে বাধ্য হয়েছে। এখন উপায় ? মংলা থেকে আমাদের সাথে আনা ট্রলারে করে আমি আর লাভলু ভাই পাশের মাছ ধরার ট্রলারের কাছে গেলাম। ওদের বুঝিয়ে বল্লাম, আমরা কী বিপদে পড়েছি...। ওদের মধ্যে দুজনের মায়া হলো। আমাদের কে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে রাজী হলো। ওদের নিয়ে জাহাজে ফিরে আসলাম। কখনো খালের ডান পাশ, কখনো বাম পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে আমরা চলছি। এতক্ষণ না বুঝে বোকার মত মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আমরা বঙ্গোপসাগরে। আমাদের নতুন গাইডদ্বয়ের পরামর্শ মতে আস্তে আস্তে জাহাজ এগুতে থাকলো। ঘড়িতে প্রায় ১০ টা। সবাই নামার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। আমি নতুন গাইড মোতাহার আর কালাম সর্দারসহ জাহাজের ব্রিজে। চারদিকেই ডুবো চর। খুব সতর্কতার সাথে জাহাজের ডানে আর বামে বাঁশ ফেলে পানি মেপে মেপে আমরা ততক্ষনে মাঝ সমুদ্রে। ঘন্টা দুয়েক চলার পর ওদের দেখানো পথে তাকিয়ে দেখলাম- মাইল খানেক দুরে সাধের কটকা দেখা যাচ্ছে। মনের আনন্দে প্যাকেটের শেষ সিগারেটটায় আগুন ধরালাম। দু’এক টান দিয়েছি মাত্র ! আস্তে করে জাহাজের তলা ঠেকে গেলো মাটিতে। হায় হায় করে উঠলো নতুন গাইড দু’জন। সারেং কে বকা দিচ্ছে। আপনাকে বল্লাম, জাহাজ ডানে ঘোরাতে। আপনি বায়ে ঘোরালেন ক্যান ? এখনতো আটকে গেলেন ! রাগে গজ গজ করছে ওরা। ঘড়িতে বেলা ১২ টা বেজে ১০ মিনিট। আর আমাদের বেজে গেছে ২৪ টা।

তিন তলা থেকে নিচে নেমে আসলাম। সবাই জানতে চাইছে, কী হয়েছে ? কাউকে কিছু না বলে মাইক্রোফোনটা হাতে তুলে নিলাম। বল্লাম, আমরা বঙ্গোপসাগরের নাম না জানা চরে আটকে গেছি। এখান থেকে ছাড়া পাবার জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই। জোয়ার আসার আগে আমরা আমাদের সাথে থাকা দুটো ট্রলারে করে ৩০ জন করে কটকা ঘুরে আসতে পারি। কে হবেন সে প্রথম ৩০ জন ? সবাই একসাথে ট্রলারের দিকে দৌড়ালো। আমি যতই বলি, ৩০ জনের বেশি একসাথে যাওয়া যাবে না- ততই বাকীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে ১০/১২ জন বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। ঘোষনা দিলো, সবাই একসাথে যেতে পারলে যাবে- নতুবা কেউ যাবে না। তাহলেতো জোয়ার আসার আগে কারোরই যাওয়া হবে না...। জোয়ার আসতে কমপক্ষে ৬/৭ ঘন্টা। এই বিদ্রোহী ১০-১২ জনের কারনে অভিযাত্রীরা নিজেদের মধ্যেই ২ ভাগ হয়ে গেলো। শেষতক সবাই মিলে ঘোষনা দিলো- তীরে নামলে একসাথে নামবে, নইলে নামবে না। মন-টন খারাপ করে সবাই যে যার রুমের দিকে গেলো। নিচে দুপুরের খাবারের আয়োজন চলছে। আমি রুমে বসে জোয়ারের অপেক্ষা করছি। হঠাৎ সমবেত কন্ঠের চিৎকার শুনে আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে এসে যা দেখলাম...! সেটা যারা সেদিন আমাদের সাথে ছিলো না, তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। আমাদের জাহাজের বামদিকে অন্তত ১০০ ফুট জায়গায় একরত্তি পানি নেই। শুধু ভেজা বালি আর বালি। জাহাজের তলায় প্রফেলর দেখা যাচ্ছে। অতি সাহসী দু’চারজন লাফ দিয়ে বালিতে নেমে পড়েছে। ১০ মিনিটের মধ্যে জাহাজের প্রায় সবাই নেমে গেলো বালুর চরে...। আমাদের শিল্পী বন্ধু রাশেদ আর রিয়াজ তাদের সাথে আনা ইভেন্টের কাপড়-টাপড় নিয়ে নেমে পড়লো জাহাজ থেকে। সবাই ধরাধরি করে ইভেন্ট শুরু করে দিলো বালুতে। যা আমাদের করার কথা ছিলো কটকা বিচে...। আনন্দে নাচছে সবাই। মাটিতে নামতে পারার কারনে না বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে চরে নামতে পারার কারনে--- সেটা গবেষনার বিষয়। আপাতত বিদ্রোহ দুর হয়েছে দেখে আমিও আনন্দিত। নতুন প্যাকেট থেকে সিগারেট ধরালাম...।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। খাবারের জন্য জুয়েল বারবার ঘোষনা দিচ্ছে। কে শোনে কার কথা। কেউ মাটি ছেড়ে জাহাজে উঠতে রাজী নয়। অবশেষে ধীরে ধীরে জোয়ারের পানি আসা শুরু করলো...। মুখ কালো করে সবাই জাহাজে উঠতে শুরু করলো। রুই মাছ, সব্জী আর ডাল দিয়ে খেয়ে নিলো সবাই। বাইরে টুক করে সূয্যি মামা ডুবে গেলো। বাইরে ভীষন ঠান্ডা বাতাস। অস্ত গেলো বছরের প্রথম সূর্য। কটকাতেই রাত্রী যাপন করবো। মাঝ সমুদ্র খুব বেশি নিরাপদ নয়। এমনিতেই একটা দিন চলে গেছে। অদুরের কটকাতে দুটো জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলোর আলো দেখা যাচ্ছে। ওখানটাই আপাতত আমাদের
গন্তব্য। এখান থেকে বড় জোর ১ ঘন্টা লাগবে। জাহাজের আলো দেখা যাচ্ছে। এখন শুধু পরিপূর্ণ জোয়ারের অপেক্ষায়...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×