somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এবং আমরা কিংবা আমাদের প্রভুত্ব

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা আমাদের প্রভুত্ব নিয়ে বড়াই করছিলাম। আমাকে ছাড়া সে কতটা অর্থব সেটা তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে সে কিছু সময়ের জন্য আমার দাসত্ব গ্রহন করলেও সম্বিত ফিরে ফেলেই তার প্রভুত্ব নিয়ে আলোচনা করছিলো। আমাদের এই সুদুরপ্রসারি আলোচনা কোনো সমাধান ছাড়ায় শেষ হয়েছিলো এবং হয় প্রতিনিয়ত। আমরা সবসময় নিজেকে প্রভু ভাবতেই পছন্দ করি। এবং সেটা যতটা পারি ইনিয়ে বিনিয়ে বারংবার আমাদের কথার মাঝে নিয়ে আসি কোনো পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই। এটাই আমাদের দৈনন্দিন কার্যাবালির এমন একটা অংশ কিংবা আমি বা আমরাই তার অংশ হিসাবে বেঁচে আছি যে বুঝতে না পারার ব্যর্থতাও আমাদের চোখে সফলতা হিসাবে ধরা দেয়। যে সফলতায় আমরা পরম আয়েশে ঢেঁকুর তুলি। আর স্তুতি করি নিজের। কখনোবা অন্যের স্তুতি করে ফেলি এবং সহাস্যে অপেক্ষা করতে থাকি কেউ যদি আমার এ বদন্যতাটার স্তুতি করে প্রতিদানে। কেউ করে, কেউ করে না। আমি বা আমরা তাতে ভাবিত নই কারন আমরাও স্তুতিটা বাটখারায় মেপে মেপে করি যে যতটুকু পাই সেটুকুই দেই কিংবা দেওয়ার চেষ্টা করি। এই চেষ্টাটা যে আমার বা আমাদের স্তুতিকারি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উঠে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথোপকথন নিত্যদিনের। যতক্ষন আমরা পাশাপাশি ততক্ষন চলে আমাদের আমিত্বের মুগ্ধতা বিনিময়। আমার বদন্যতায় কিভাবে সুমসৃণভাবে ঢালু পাহাড়টা অতিক্রম করেছিলো কোনো এক স্থবির প্রাণি, রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করি কিংবা সে জানায় তার বদন্যতায় কিভাবে উড়তে পেরেছিলো কোনো আবদ্ধ পাখি। আমরা আমাদের বদন্যতায় ঈর্ষান্বিত যে হইনা তা নয় তবে কখনো সেটা প্রকাশ করিনা কিংবা কুন্ঠিত হই অথবা স্তুতি করি নিজেকে তার ঘটনায় কোথাও প্রভু হিসাবে উপস্থিত করে। তারপর নিজের মনেই প্রশান্তির হাসি দিয়ে জানিয়ে দেই আমি কিংবা আমরা খুব ভালো আছি। যেখানে আমিই প্রভু সেখানে ভালো না থাকার প্রশ্ন আসেই না।

এটাই আমি কিংবা আমাদের দৈনন্দিন জীবন। নিজেদের প্রভুত্বের প্রশস্তি চলে পাড়ার মোড়ের জীর্ণ চায়ের দোকানের প্রায় ভেঙ্গে যাওয়া লম্বা টুলে বসে বসে। কখনোবা আমাদের প্রশস্তিতে যোগ দেয় শীর্ণ দেহের অধীকারি চা ওয়ালা, হয়তো সেও চায় আমাদের আশির্বাদ। আমাদের ঈশ্বরত্বের সমালোচনায় বাদ পড়ে না কেউ। শুরু হয় ছোট কোনো ঘটনা থেকে কিংবা কোনো ঈশ্বরের মত ঈশ্বর হতে চেয়ে। তার প্রশস্তি আমাদের প্রভুত্বকে খাটো করতে পারেনা। বরং সুখস্বপ্ন দেখে ফেলি আমরা। ভেসে চলি সুখের সাগরে। নিজেকে পূজারী পরিবেষ্টিত দেখতে পাই। আর পদলেহন করার চেষ্টা করি কিংবা নিজেদের মাঝেই প্রতিযোগীতা করি কে পাই সান্নিধ্য সেই মহান প্রভুর। যারা পায় তারা আরো প্রশস্তিতে মেতে উঠে, আর যারা পায়না তার বলে উঠে সেই প্রভু তাদের জন্যই প্রভু হতে পেরেছে সুতরাং সে কখনোই প্রভু নয়। বরং যারা তার পদলেহনে ব্যস্ত তারা সবাই বোকাদের সপ্তম স্বর্গে বাস করে ভেবে আস্বস্ত হই। পাওয়া না পাওয়াটা আমাদের জন্য মুখ্য নই বলে দম্ভের সাথে স্বীকারোক্তি দিলেও সেটা যে মনের কথা নয় সেটা প্রকাশে আমরা কুন্ঠিত থাকি সবসময়। আমরা কখনোই নিজেদের প্রভুত্ব বিসর্জন দিতে রাজি নই সেটা কাউকে অসৎ, ক্ষমতালোভী, কুপ্রররচনাকারী বানিয়ে হলেও। নিজেদের পূজারীর সংখ্যা গণনায় পিছিয়ে পড়তেও আমরা রাজি থাকিনা, পাছে প্রতিযোগী বন্ধুর বিজয়ে উদযাপন করা লাগে সেই ভয়ে। হোকনা মিথ্যা অহমিকা তবুও আমরা নিজেদের কল্পনাতে ভাবতে ভালোবাসি আমাকে ছাড়া অচল অসংখ্য অনুসরনকারী। কখনোবা নিজদের মাঝে মতভেদের জন্য বাক বিতন্ডা ছড়িয়ে পড়ে। উষ্ণ হয়ে উঠে জীর্ণ দোকানটা, হয়তো কোনো পথিক কিছুক্ষনের জন্য হলেও আগ্রহ অনুভব করে আমাদের উষ্ণতায়, তারপর ফিরে যায় তার গন্তব্যে। কিছু সময়ের জন্যে হলেও আমরা শীর্ণ দোকানির মুখে হাসি এবং চোখে স্বপ্ন ফিরিয়ে নিয়ে আসি। তার চোখে হয়তো ভাসে জীর্ণতার পরাজীত প্রতিচ্ছবি। শুধুমাত্র দোকানটির পাশেই শুয়ে থাকা জারজ কুকুরটি মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে আবার নিতান্ত অবহেলায় পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে কিংবা আশির্বাদকে তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য করে। যা আমরা দেখেও দেখিনা বরং শান্তি লাভ করি এই ভেবে যে সেটা নিছকই একটা জারজ শারমেয়।

আমাদের প্রভুত্বের ক্লান্তি চলে আসে সময়ক্ষেপনের সাথে সাথে। যখন ফেরার তাড়া অনুভব করি সাথে দ্বায়বোধটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখন প্রভুত্বকে ভুলে যেয়ে মানুষ হয়ে উঠি। যার দরুন ক্লান্ত, শীর্ণ দেহের অধীকারী দোকানির মুখের হাসি হারিয়ে যেয়ে ক্লান্তি ভেসে উঠে। তার স্বপ্নের করুণা আমরা করতে পারিনা বরং তার করুণার জন্য অপেক্ষা করি। কিংবা অপেক্ষাটা আমাদের জন্য অপমানজনক বলে তাকে ভুলিয়ে পরেরদিনের স্বপ্ন দেখিয়ে চলে আসি। আমরা আমাদের প্রভুত্ব নিয়ে সুখস্বপ্ন দেখি কিন্তু অন্যের স্বপ্নকে, শান্তিকে, ভালোবাসাকে নিজের ভাবতে অস্বীকার করে চলি প্রতিনিয়ত। কারন আমরা দাম্ভিক, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক প্রভু হয়েই জীবন চালাতে পছন্দ করি। সেই প্রভুত্বের মাঝেই আত্মপ্রসাদ অনুভব করে এক একটা দিন পার করি এবং ভাবি এই বেশ আছি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৬
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×