somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়তো নয়তো

২২ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয় আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত রোহিঙ্গা সৈন্য সম্ভবত সেনাপ্রধানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ৩০-৪০ বছর আগে আমরা দয়া করে এদের চট্রগ্রামের ছোট একটা এলাকায় থাকতে দিয়েছিলাম,এরা আমাদের আশ্রিত।এদের ভয় পাবার কিছুই নেই, কিন্তু মুহিব, শাবাব, মঈনের হাটু কাঁপছে।

নাক বোঁচা,কালো ,বেটে রোহিঙ্গাদের এমন সুদর্শন পেশিবহুল সেনাপ্রধান কোথা থেকে এল, কে জানে?তবে শরীরের তুলনায় মাথা একটু ছোট।চোখদুটো বিড়ালের চোখের মত, সিরিয়াল কিলারদের চোখ এমন ফ্যাকাশে হয়।২০০২ সালে পাকিস্তানি জাবেদ ইকবাল ২০০ শিশু হত্যা করেছিল, অনেকটা তারই মত ইনার চেহারা। এত বছর পর, এই ২০৫১ সালে নিশ্চয়ই জাবেদ ইকবাল আবার জন্ম নেয়নি?

সেনাপ্রধানই আগে কথা বলল,"আমি মেজর কাদের, সি ফোর্স-১।১৯৭১ সালে তোমাদের যে অবস্থা ছিল আমাদের তার চেয়েও খারাপ অবস্থা।তোমরা থাকার জায়গা দিয়েছ, কাজ দাওনি!আমরা একটা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারি না।আমাদের মেয়েদের তোমরা বিয়ে করছো না, তোমাদের সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করতে দিচ্ছো না।আমাদের জন্য বিদেশি অনুদান তোমাদের মন্ত্রীরা খেয়ে ফেলছে, আমাদের তরুণ ছেলেমেয়েদের কোন ভবিষ্যৎ নেই!নতুন যে শিশুটা জন্মগ্রহণ করছে সে একটা কুৎসিত নাম পাচ্ছে, "রোহিঙ্গা"! এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে?আমরা চট্টগ্রাম দখল করেছি, আমরা স্বাধীনতা চাই।এটা কি অযৌক্তিক?"
আধো-জড়ানো বাংলায় মেজর কাদের একটানা কথা বললো। মুহিব, শাবাব, মঈন তিনজনই চুপ করে রইলো।

মেজর কাদের রাগে চিৎকার করে উঠলো, আরাকানী ভাষায় বললো, "এরা কি কথা বলবে?নাকি এদেরও মেরে হোটেলের সামনে ঝুলিয়ে দিব!" হোটেল সি-প্যালেসের সবচেয়ে সুন্দর রুমটি গমগম করে উঠলো। জয় বলল, "তাতে লাভ কি?১৯৭১ সালে পাকিরা এত অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ করেও তো জিততে পারেনি।"

মেজর তীক্ষ্ণ চোখে জয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, "আমরা পাকিদের মত বোকা না।যেমন আমি তোমাকে এক চুলও বিশ্বাস করি না।পাকিরা তোমাদের রাজাকার নামে বিশ্বাস করে ঠকে হেরেছে। আমি কক্সাবাজারের প্রতিটা হোটেল বোমা লাগিয়ে রেখেছি, যদিও হেরে যাবার সুযোগ নেই তবু কোন সমস্যা হলেই বুম!বুম!বুম! হা হা হা!"

মুহিব, শাবাব, মঈনকে আটকে রাখা হল।জয় ও মেজর কাদের হোটেল সায়মান ও হোটেল অভিসারে যাচ্ছে। এই দুটো হোটেল রোহিঙ্গাদের প্রধান আস্তানা। জয় গাড়ির পিছনে বসতে যাচ্ছিল, মেজর বললেন, "আমার পাশেই বস।এখন তুমি অনেক গোপন খবর জানো, তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না।"

সন্ধ্যা নেমে আসছে, বিচে কোন প্রাণী নেই,তারা হাটছে।
"কে যায়, কেডা যায়?" পাশ থেকে কেউ জোরে জোরে জিজ্ঞেস করলো। জয় এগিয়ে যেতে চাইল।মেজর যেতে দিলেম না।নিজে গিয়ে বললেন,"চাচা মিয়া, আমি মেজর কাদের।আপনারা আমাদের রোহিঙ্গা বলেন। আসসালামু আলাইকুম চাচা, যাই।"

জয়ের দিকে তাকিয়ে মেজর বলল,"কি অবাক হলে?আমার বাবাও অন্ধ ইনার মত অন্ধ ছিলেন।কারও পায়ের শব্দ শুনলেই জিজ্ঞেস করতেন।যেদিন মায়ানমারের উগ্রবাদী বৌদ্ধরা এলো, তিনি দুবার প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি।তাকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়।"
"আচ্ছা, চট্টগ্রামের মেয়েরা নাকি খুব অহংকারী হয়,গায়ে খুব জোর, তাদের কি বুক সুন্দর?তাদের পেটে আমার সন্তান হলে, তোমরা কি তাকেও রোহিঙ্গা বলবে?"

জয় কোন উত্তর দিচ্ছে না।মেজর একটানা কথা বলে যাচ্ছে,"আমি তোমাকে মারবো না, পাকিরা যা পারেনি তা আমরা করে দেখাবো।পাকিরা পারেনি কারণ ভারতীয় মালাউন তোমাদের পক্ষে ছিল, এখন তোমাদের কে বাঁচাবে।খুব বেশি না, আমরা স্বাধীন চট্টগ্রাম চাই।এটা শুধুই আমাদের, জয়লাভ করা মাত্র তোমায় পয়েন্টব্ল্যাঙ্কে গুলি করে মারবো।আর যে আর্মির দলটা চট্টগ্রামে ঢুকেছে;মুহিব, শাবাব, মঈন সাহায্য করেছে। তাদের ধরতেও তোমাকে দরকার।তোমার আয়ু বাড়লো।"

জয় ও মেজর কাদের হোটেল সায়মানে ঢুকল।একদল সৈন্য চুপচাপ বসে আছে, পাশেই তাস খেলার আড্ডা, একদল বাঙালী একপাশে গল্প জমাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বিশাল রুমের দেয়ালের সাথে ৩০-৪০ জন নগ্ন মেয়ের হাত উঁচু করে বাধা,তারা হাটু ভাজ করে লজ্জাস্থান ঢাকার চেষ্টা করে পারছে না।কয়েক জনের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, সৈন্যরা যখন ইচ্ছে আসছে আর শরীরে ঝাঁপিয়ে পরছে! কান্নার আওয়াজে বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছে না।

তারা হোটেল সায়মানের দোতলায় ডানদিকে প্রথম রুমটা প্রবেশ করল। এখানে সেতারা, নিশাত ও পরীকে আটকে রাখা হয়েছে। পরীকে ঝাপটে ধরে আছে তার ফুটফুটে ৫ কি ৬ বছরের মেয়ে নীলু! মেয়েটি আমাদের দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। শিশুরা অনেক কিছু আগে থেকেই বুঝতে পারে।

মেজর নীলুকে আদর করে কাছে নিলেন। নীলু আতঙ্কে ফুপিয়ে কাঁদছে।মেজর শান্ত গলায় বলল,"তোমাদের যা জিজ্ঞেস করা হবে, দ্রুত সত্য বলবে।নইলে আমি তোমাদের সাথে যৌনসঙ্গম করবো, তারপর জোয়ান সৈন্যদের মাঝে ছেড়ে দিবো।জয়, এদের কাপড় খোল।"

জয় বলল,"স্যার, এসবের কি দরকার?"
মেজর বলল,"কি দরকার, কি দরকার নয়? তোমার কাছে শিখতে হবে!যা বলছি কর।আর বাঙালির লজ্জা নেই। এদের জিজ্ঞেস কর, মরণ অথবা নগ্ন থাকা এরা কোনটা চায়?সবাই বাঁচতেই চাইবে।"

জিজ্ঞেস করতেই তিনজন একসাথে বললো তারা বাঁচতে চায়।নীলু এখন আর কাঁদছে না, অবাক হয়ে মাসহ বাকিদের নগ্ন দেহের দিকে তাকিয়ে আছে।

"তোমাদের সাথে যে আর্মির দল এসেছে, তারা কোথায়?"
"আমাদের সাথে কোন আর্মি আসেনি"

"তাদের সংখ্যা কত, অনুমান করে বল।"
"জানি না।"

"তাদের আক্রামণের প্ল্যান কি?"
"জানি না।"

"তাদের সাথে কি কি অস্ত্র আছে?"
"জানি না।"

"তারা কখন আক্রামণ করবে?"
"জানি না।"

"আমাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় কি প্ল্যান হচ্ছে?"
"জানি না।"

"তোমরা কি জানো?" বলেই পরীকে কষে চড় মারল।পরী দুহাত দূরে ছিটকে গেল।বুট থেকে চাকু বের করে নিশাতের বুকের একপাশ কেটে ফেলল।ভয়ে নীলু হিশু করে দিলো।

"তোমরা সত্য কথা বল, নয়তো রাস্তার কুত্তা দিয়ে তোমাদের...... তোমার বাচ্চা মেয়েকেও ছাড়বো না।"
পরী,সেতারা, নিশাত একসাথে বলল যে তারা মৃত্যু চায়। নিশ্চিত দ্রুত মৃত্যু।
মুহিব, শাবাব ও মঈনকে আনা হল।তারা এ দৃশ্য দেখবে।সেতারা, পরী,নিশাতকে সমুদ্রে লাইন ধরে দাঁড় করানো হল।

মেজর জিজ্ঞেস করলেন,"ভয় লাগছে?
"হ্যা"

"বেঁচে থাকতে চাও?"
"না"

খুব বেশি গুলি খরচ হল না।মুহিব বমি করে দিল, শাবাব অজ্ঞান হয়ে গেল, কেবল মঈনের কোন ভাবান্তর নেই।জয় তাদের ধরে তুলতে গেল, মেজর বাধা দিল।বুটের লাথি দিয়ে তুলল।
নীলু এতক্ষণ জয়কে জড়িয়েই ছিল।হঠাৎ দৌড়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

জয় আর মেজর হোটেল সি-প্যালেসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।মেজর বলছেন,"তোমাদের এখানে বৃষ্টি বেশ দারুণ। ভিজতে ইচ্ছে করে।সমুদ্রে কেমন মুক্তোদানার মত ঝমঝম করে বৃষ্টি পরছে।দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।" অকস্মাৎ কথা ঘুরিয়ে বললেন,"জয়, এমনতো নয় যে তুমি নীলুর কানেকানে কিছু একটা বলেছ আর সে সেই খবরটা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল?"
জয় হেসে বললো," নীলু একদম শিশু, ভয়ে পালিয়েছে।আর খুব বেশি দূর হয়তো যেতেও পারেনি, ধরা পরেছে কোন রোহিঙ্গা সৈন্যের হাতে।"

মেজর ঘুমাতে পারছেন না।জয় দিব্যি নাক ডাকছে।মেজর ভাবলেন, বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম পুরোটা রোহিঙ্গারা দখল করে আছে, স্বাধীনতা দাবি করছে। অথচ জয়ের এটা নিয়ে কোন ভাবনা নেই, দিব্যি ঘুমাচ্ছে,একজন আরাকানী মেজরকে সাহায্য করছে।কেন?

ফজরের আযান দিচ্ছে, ঝুম বৃষ্টি থামেনি। তিন-চারবার রুমটা দুলে উঠলো, মেজর ভাবলেন ভূমিকম্প। কিন্তু মেজর ব্যালকনিতে এসে অবাক হলেন, হাজারো জিম্মি করা বাঙালী বীচে দাঁড়িয়ে!তারা বাইরে এলো কি করে?তাদেরতো হোটেলগুলোতে জিম্মি থাকার কথা।দূরে দূরে আকাশে বৃষ্টি ভেদ করেও ধোঁয়া উড়ছে!আহত কয়েকজন সৈন্য তার কাছে এসে বললো যে কাল রাতে হটাৎ হোটেলগুলো বাংলাদেশ আর্মিরা আক্রমণ করেছে।পুরো চট্টগ্রাম এখন তাদেরই দখলে।

মেজর কাদের রেগে আগুন হয়ে গেলেন।লাত্থি দিয়ে জয়কে নিচে ফেলে দিলেন। জয়ের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে ধাক্কা খেলেন,
জয়ের চোখে কোন মৃত্যুভয়, আতঙ্ক নেই।চোখে আছে সন্তুষ্টি, ঠোঁটের কোণে হাসি!শান্ত চোখজোড়া মেজর কাদেরকে খুব ভীত করলো।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×