Sustainability Reporting, বাংলায় অর্থটা বেশ অদ্ভুত, টেকসই প্রতিবেদন । এই রিপোর্টিং তথা প্রতিবেদন কি, কেন করতে হয়, কে করে, কারা করে, কিভাবে করে, কোন সময় করে, বাংলাদেশে এই রিপোর্টিং এর কন্ডিশন কেমন, সারা বিশ্বে এই রিপোর্টিং এর অবস্থা কি ইত্যাদি সব কিছু নিয়েই লিখবো। পুরো লেখাটা যেহেতু বেশ লম্বা হয়ে যাবে, এই কারণেই ভাবলাম একবারে লেখা দিলে পড়তে পড়তে ঘুম চলে আসবে, তাই সমস্ত লেখাগুলোকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করলাম । জানি, যারা শুধুমাত্র এই বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ রাখেন, তারাই কেবল এই পোস্টটা একটু আগ্রহ ভরে পড়বেন, অবশ্যই পুরো লেখাটা পড়তে চাইলে সব পর্বগুলো সিরিয়ালি পড়বেন ।
একটা একটা করে প্রশ্নের উত্তর করার চেষ্টা করবো । হয়তো আমার উত্তর পরিপূর্ণ হবে না কিন্তু ইনশাআল্লাহ্ একটা ভালো ধারনা দিতে পারবো ।
Sustainability Reporting is a reporting practice where businesses/companies publicly disclose their economic, social, environmental, and governance practices to internal as well as external stakeholders.
অর্থাৎ টেকসই প্রতিবেদন হচ্ছে এমন একটি নিয়মিত অনুশীলন যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত দিক এবং প্রশাসনিক অনুশীলনগুলি অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত স্টেকহোল্ডারদের কাছে প্রকাশ্যে প্রকাশ করে।
একটু কি জটিল হয়ে গেলো? নাকি মনে প্রশ্ন চলে এলো, এতে লাভ? আপনার মনে আসা এই প্রশ্নটার উত্তর আমি দিবো দ্বিতীয় প্রশ্নের সাথে ।
বর্তমান বিশ্বের যে কোন ব্যবসার/কোম্পানির দিকে তাকালেই দেখবেন, সবকিছু উন্মুক্ত । আপনি জানেন, কে কি করছে । কে কতটুকু লাভ করছে, লস করছে, বিক্রি করছে, শেয়ার ছাড়ছে, শেয়ার বিক্রি করছে, কার পারসেন্টেজ কত ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আর একটা বিষয় তো আমরা সবাই জানি, যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যই কাজ করে। কিন্তু অতীতের নানান প্রতিকূলতা এই মুখ্য অর্থনৈতিক লক্ষ্যের পাশাপাশি এখন ঐ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান/কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কাঠামো কিরূপ ভাবে গঠিত হয়েছে, ঐ কোম্পানি তাদের কাজ, প্রোডাক্ট বা ব্যবসার ধরনে পরিবেশের কতটা ক্ষতি করে এবং ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত জনবলের চাহিদা ও সুরক্ষা কিভাবে নিশ্চিত হয়, এই সকল বিষয়কেও বর্তমান যুগে সামনে আনতে বাধ্য করেছে ।
এক কথায় বললে উপর দিয়ে ফিটফাট আর ভিতর দিয়ে সদরঘাট হলে চলবে না । তাহলে আপনি যে উপরের পাশাপাশি ভিতরেও ফিটফাট এটা আপনি কিভাবে জানাবেন সবাইকে? জনে জনে বলে বেড়ানো তো আর সম্ভব না । তাও ধরলাম, আপনি জনে জনে বলে বেড়ালেন, তবু সেটাও তো পরিচিতির গন্ডির মধ্যে, গন্ডির বাইরের লোকদের কিভাবে জানাবেন, যারা হয়তো এখন আপনার ব্যবসার সাথে জড়িত না কিন্তু মনে মনে ভাবছে কিংবা তাদের হয়তো আগ্রহ আছে আপনার সাথে কাজ করার, তখন? এটার সবচেয়ে ভালো ও সহজ সমাধান হচ্ছে এই টেকসই প্রতিবেদন বা Sustainability Reporting.
কারণ এটা আপনার অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত দিক ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো ইত্যাদি দিকসমূহ একটি মাত্র রিপোর্ট বা প্রতিবেদনের মাধ্যমে উন্মুক্ত ভাবে (নানান উপায়ে) প্রকাশিত হয় । তবে এমন না যে, আপনি জীবনে একবার এই প্রতিবেদন বের করলেন, আর মানুষ যুগ যুগ ধরে সেই প্রতিবেদন পড়ে আপনার ও আপনার কোম্পানি সম্পর্কে ধারনা নিতে থাকবে । এটা নিয়মিত (প্রতি বছর বা দুই বছর পর পর) আপনাকে প্রকাশ করতে থাকতে হবে । যুগ যেমন পাল্টায়, মানুষ পাল্টায়, কাজের ধরন বা কোম্পানির ধরনও পাল্টায়, এই পাল্টানো বা পরিবর্তন মানুষ আপনার নিয়মিত প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে যাবে ঠিকই ।
আচ্ছা অনেক কথা বললাম, কিন্তু এটা বলতে ভুলে গেছি, এটা কিন্তু একেবারে বাধ্যতামূলক কোন বিষয় না যে আপনাকে করতেই হবে, বরং মানুষ বা কোম্পানিগুলো স্বপ্রনদিত হয়েই এটা প্রকাশ করে । বিশ্বের কিছু সংগঠন এটাকে খুব ভালো প্র্যাকটিস হিসেবে দেখে, তবে বাংলাদেশে এমন কোন সংগঠন বা নীতিমালা ইত্যাদি নেই, তাই এ দেশে কোম্পানিগুলোর এই প্রতিবেশন প্রকাশের হার অনেক কম । ভালো কোম্পানিগুলো প্রতি বছরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে । ভালো কোম্পানি বলতে আমি এটা বুঝাইনি যে তারা টপ কোম্পানি বা সবচেয়ে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান কোম্পানি বরং আমি বুঝিয়েছি সে কোম্পানি গুলোই বেশি ভালো, যারা তাদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর কিন্তু অনেক বিস্তারিত ছিল । আশা করি এর মাধ্যমে তৃতীয় যে প্রশ্ন অর্থাৎ 'কে করে' এর উত্তরও পাওয়া হয়ে গেছে । তবে এখানে আরেকটু না বললেই নয় ।
আপনারা এখানে যারা যারা আছেন তারা কি Fortune 500 Companies এর নাম শুনেছেন ? Fortune 500 হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ৫০০ কোম্পানির একটি তালিকা যা মোট রাজস্বের ভিত্তিতে স্থান পেয়েছে। ১৯৫৫ সাল থেকে, ফরচুন ম্যাগাজিন বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করেছে, এবং এটি সবচেয়ে সুপরিচিত কর্পোরেট র্যাংকিংগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। যদিও শুরুতে এটার আইডিয়া শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই ছিল কিন্তু এখন আই আইডিয়া বৈশ্বিক । অর্থাৎ সারা পৃথিবী মিলিয়ে এখন এই ৫০০ কোম্পানিগুলোর তালিকা করা হয় । যাই হোক, এটা নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত লিখবো ।
Fortune 500 কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিন্তু এই Sustainability Reporting এর ধারনা বা প্র্যাকটিস বহুল জনপ্রিয় ও প্রচলিত । যদি বলি, সংখ্যাটা ২০১৯ সালেই ছিল প্রায় ৯২% অর্থাৎ প্রায় ৪৫০ এরও অধিক কোম্পানি এমন প্রতিবেদন প্রতি বছর প্রকাশ করে । কি, অবাক হচ্ছেন যে আপনি তো এর নাম আগে শোনেনিই? সমস্যা কি, আজ তো শুনলেন ।
এরকম আরও কয়েকটি র্যাংকিং প্রচলিত আছে যেমন S&P 500 companies, Russel 500 companies, Russel 1000 Companies ইত্যাদি । কোন র্যাংকিং-এ ই Sustainability Reporting করার পারসেন্টেজ ৮০ এর নিচে নয় । আর দিন দিন তো সংখ্যাটা বাড়ছে হু হু করে । বাংলাদেশে অবশ্য এটা জনপ্রিয় কোন আইডিয়া না । এটা নিয়েও বিস্তারিত বলবো পরবর্তী পর্বগুলোতে ।
(বাকিটা পড়তে চোখ রাখুন এই লেখার দ্বিতীয় পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:২৯