বইয়ের নাম:চাঁপাতলীর মোড়ে...
লেখকঃ মৌরী হক দোলা (ব্লগ নিক মৌরি হক দোলা)
প্রকাশ কালঃ ২০১৯
প্রকাশকঃ মাহবুবুর রহমান বাবু, বইপত্র প্রকাশন, ৩৮/২ -খ, বাংলা বাজার, ঢাকা।
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৪ ।
মূল্য: দেশে ১২০ টাকা, বাইরে ৫ ডলার।
চাঁপাতলীর মোড়ে ... বইটিতে ১৫টি ছোট গল্প স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বেশ অনেকগুলি গল্প আগে ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প গুলির মধ্যে কোন কোনটির দৈর্ঘ বেশ ছোট (একটি গল্প আছে এক পৃষ্ঠার), অধিকাংশের দৈর্ঘ ৩ থেকে ৫ পৃষ্ঠা।
প্রথম গল্পটিতে (অচেনা দেশে চেনা অতীত) দেশের বাইরে প্রথম বারের মত পড়তে যাওয়া একজন মেয়ের প্রবাস জীবনের প্রথম সময়ের হোম সিকনেস এবং সম্ভবত হারানো প্রেমের কথা উঠে এসেছে। গল্পটিতে অনেক অসংলগ্নতা চোখে পড়েছে। যেমন বাঙালি মেয়েরা দৈনন্দিন কমিউট করার সময়ে সিল্কের শাড়ি ব্যবহার করে এমন কখনো দেখিনি। এক জায়গায় বলা হয়েছে মেয়েটি এক মাস ধরে হোস্টেলে আছে কিন্তু তার রুমমেট এর সঙ্গে দেখা হয়নি। বিষয়টি বাস্তব সম্মত মনে হয় নি। গল্পটির শেষ তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে, ঘটনার কোন ধারাবাহিকতা আমি খুঁজে পাইনি। বইয়ের তৃতীয় গল্প 'লক ডায়েরিতে বাবা' । গল্পটিতে বাবাকে হারানো একজন মানুষের মনের আবেগ প্রকাশ পেয়েছে । গল্পটি আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছে। তবে লক ডায়েরি মূলত কম বয়সী মেয়েরাই ব্যবহার করে, অ্যাডাল্ট পুরুষকে ব্যবহার করতে দেখিনি। সেই হিসাবে গল্পটির নাম 'আমার বাবা' বা 'বাবা তুমি কোথায়' এরকম হলেই ভাল হতো বলে আমার মনে হয়। 'স্বার্থপর দেশপ্রেমিক' এবং 'অস্তিত্ব' গল্প দুটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। গল্পদুটি আমার কাছে গতানুগতিক মনে হয়েছে। 'চৈতালী জীবন' গল্পটিতে একজন নারীর মা / শাশুড়ি অথবা মেয়ে /বউ হিসেবে চরিত্রের বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে । আমার কাছে গল্পটি ভালো লেগেছে। 'চাঁপাতলীর মোড়ে ...' গল্পটিতে লেখক কি বলতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারিনি। বইয়ের শেষ গল্প 'স্বপ্নের রোদ' । গল্পটি যথেষ্ট ম্যাচিওর লেখা। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। 'তোমাকেই প্রয়োজন' গল্পটি মেয়েদের সংগ্রামের, লড়াই করার, বেঁচে থাকার গল্প। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় দেশের সমস্ত কিশোরীর গল্পটি অবশ্যই পড়া উচিত, এবং সম্ভবত ছেলেদেরও পড়া উচিৎ।
বইটির কয়েকটি গল্প খুব ম্যাচিওর হাতের লেখা হলেও কিছু গল্প বেশ কাঁচা হাতের লেখা বলে আমার মনে হয়েছে। গল্পগুলির কোনোটিতেই রচনাকাল লেখা হয়নি, কাজেই বোঝা যায় না বয়সের সঙ্গে সঙ্গে লেখকের লেখার ধার কিভাবে বেড়েছে। বইটিতে গল্পগুলির ক্রম সিলেকশন ভালো লাগেনি। বিশেষ করে বলা যায় 'অচেনা দেশে চেনা অতীত' গল্পটি প্রথম গল্প হিসেবে স্থান না পাওয়া বেশি বাঞ্ছনীয় ছিল। মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন রাতুল নামের কেউ একজন বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। ভূমিকা লেখক এর ভাষা অত্যন্ত দুর্বল যা বইটির সৌন্দর্যহানী করেছে। ভূমিকাটি না থাকলেই বরং বেশি ভালো হতো। বইটির প্রুফ খুব ভালোভাবে দেখা হয়েছে, বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠায় অনেকগুলি বানান ভুল চোখে পড়ে। প্রুফ দেখার কাজ সম্ভবত একাধিক জনকে দিয়ে করানো হয়েছে। বানান কম ভুলের বিষয়টি আনন্দ দিয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ মোটামুটি, ছাপা-বাধাঁই এর মান গ্রহনযোগ্য।একজন ক্রেতা বইটি শুধু পড়ার জন্যই কেনেন না, তিনি বইটি সংগ্রহেও রাখতে চান । কাজেই বইটিতে আরেকটু ভারি কাগজ ব্যবহার করা হলে আরো ভালো লাগতো।
এটি আমার দ্বিতীয় রিভিউ এবং আগেরটির মতো এই বইয়েও লেখা আছে 'প্রকাশকাল অমর একুশে বইমেলা ২০১৯'। কাল এবং স্থান এর পার্থক্য করতে পারে না এমন লোকদের প্রকাশক হওয়া সত্যি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
পূর্বের প্রজন্মের পাঠক হিসেবে লেখক এর কাছে অনুরোধ বছর বছর বই বের না করে লেখা প্রথমে ব্লগে প্রকাশ করে এখানে পাঠকের প্রতিক্রিয়া যাচাই করে তার পর বই বের করলে তা পাঠকের কাছে বেশি সমাদৃত হবে।
আমার রিভিউ স্কোর: ৫.৫/১০
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
রিভিউ স্কোরের ব্যাখ্যা- স্কোর ০- বইটি পুড়িয়ে ফেলুন । স্কোর ১- বইটির পাতা কেটে অরিগামি বানাতে পারেন। স্কোর ২- জঘন্য বই, সংগ্রহে রাখার মতো না। স্কোর ৩ - বইটি পড়া কষ্টকর। রিভিউ স্কোর ৪- বইটি পড়ে ভাল লাগবে না। রিভিউ স্কোর ৫- বইটি নিজের পয়সায় কিনে পড়া যায় না, ধার করে আনলে ঠিক আছে। রিভিউ স্কোর ৬- বইটি কিনে পড়ে সংগ্রহে রাখার মতো। রিভিউ স্কোর ৭- বইটি পড়ার মতো এবং মানুষকে গিফট করার মত। রিভিউ স্কোর ৮- বইটি নিয়ে সেমিনার/ আলোচনা সভা করা যায়। রিভিউ স্কোর ৯- কালোত্তীর্ন, বইটির লেখক এর সঙ্গে সেলফি তুলতে পারলে আপনিও বিখ্যাত হয়ে যাবেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যেহেতু মেলা শেষ, এখন বইটি রকমারি থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
ডিসেম্বর ২০১৮এর দ্বিতীয়ার্ধে ব্লগারদের একটি গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়। আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শারীরিক কারণে তাতে অংশ নিতে পারি নি। পরবর্তীতে গেট টুগেদার সম্পর্কে কিছু পোস্ট থেকে জানতে পারি, অন্য অনেকের সঙ্গে একটি কলেজে পড়ুয়া ব্লগারও গেট টুগেদারে অংশ নিয়েছিল। আমার ক্লাসমেটদের অনেকেরই ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । পরের প্রজন্মেরএকজন ব্লগার ব্লগে লিখছে তা ভাবতেই আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমাদের পরের প্রজন্ম কি ভাবছে, কি লিখছে জানার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। সে কারণে চাঁপাতলীর মোড়ে... বইটি পড়া। আমি চাই অন্য ব্লগাররাও বইটি পড়ুক। সে কারনেই এই রিভিউ লেখা। রিভিউ স্কোর করার সময়ে লেখকের বয়সের ব্যাপারটি বিবেচনা করা হয় নি। লেখিকা বলার চেয়ে লেখক শব্দটি ব্যবহারেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ পাই। আগামী ৩৬ ঘন্টা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবো বিধায় কমেন্টের জবাব দিতে কিছু বিলম্ব হতে পারে, যার জন্য আগাম ক্ষমাপ্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৩