গত কয়েক মাস ধরে মানবসভ্যতা অন্যরকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে । এর আগে পৃথিবীতে অনেকগুলো মহামারী আঘাত করেছে, কিন্তু কোন মহামারীর ব্যপ্তি এত বিশাল ছিলো না। দ্বিতীয় শতকের প্লেগ এর বিস্তৃতি ছিল তুরস্ক-গ্রিস- ইতালি এই অঞ্চলে , কেড়ে নেয় পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৩% প্রাণ। ৬ষ্ঠ শতকে আরো ভয়াবহ মাত্রার এক প্লেগ কেড়ে নেয় আড়াই কোটির মতো প্রাণ- ঐ সময়ের মোট জন সংখ্যার প্রায় ১০%। ঐ প্লেগের বিস্তৃতি ছিল ইউরোপ এবং ভুমধ্যসাগর এলাকা।
বর্তমান মহামারির আগে, পৃথিবীর জানা ইতিহাসের মধ্যে, সবচেয়ে ভয়ংকর প্লেগ দেখা দিয়েছিল চোদ্দ শতকে, ইউরোপে। অনুমান করা হয় ঐ প্লেগে ১৫ থেকে ২০ কোটি লোক মারা গিয়েছিল। এর বাইরে বেশকিছু কলেরা বা ফ্লুয়ের মহামারিও পৃথিবীতে সময়ে সময়ে হানা দিয়েছে। এগুলো অনেক মানুষের প্রাণহানীর কারণ হলেও প্রায় সবক্ষেত্রেই এগুলো আঞ্চলিক ছিলো বলে সমগ্র মানব সভ্যতা হুমকির সম্মুখিন ছিল না।
গত চারমাসে কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণ গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিচ্ছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। পৃথিবীর ২১৪ টি দেশে এই ভাইরাস থাবা মেরেছে। আজ যারা সুস্থ আছেন কালকে এরা সুস্থ নাও থাকতে পারেন, কেননা এই ভাইরাস খুব বেশি সহজে ছড়িয়ে যেতে পারে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার জন্য আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে আসতে হবে এমনটা শর্ত নেই; কাগুজে নোট বা অসুস্থ রোগির ছোঁয়া লাগা সব্জি স্পর্শ করলে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির ছোঁয়ার সংস্পর্শে আসা দরজা বা লিফট স্পর্শ করলে , এমনকি কোন কিছু স্পর্শ না করলেও এয়ারবর্ন ভাইরাস কোনো ভাবে চোখের সংস্পর্শে আসলেও একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হতে পারেন। একদম ঘরে তালা বন্ধ অবস্থায় থাকা সম্ভব না। ময়লা ফেলার জন্য হলেও তো ঘরের বাইরে যেতে হয়।
ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সতেরো লাখ পার হয়ে গিয়েছে, লক্ষাধিক লোক মারা গেছে । এর শেষ কবে হবে তা বলা মুশকিল। দেড় বছরের আগে টিকা আসার সম্ভাবনা কম। কোনো কোনো সিমুলেশন অনুসারে পৃথিবীর তিনশতকোটি থেকে পাঁচশত কোটি লোক এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।
অতীতের বড় মহামারী গুলো বিদায় নেয়ার আগে লক্ষ-কোটি প্রাণ নির্মূল করে তবেই বিদায় নিয়েছে। প্রতিবারই মানব সভ্যতার অনেক ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু এর পরেও মানুষ বেঁচে ছিল, মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা এক বিরাট ঝুঁকির মুখে আছি।
আগেই বলেছি, এই মহামারি অন্যান্য প্লেগের মতো না। গোটা পৃথিবী জুড়ে এটি আঘাত করেছে। আমরা দেখেছি এই রোগের হাত থেকে কেউই নিরাপদ নয়। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীকে এই ভাইরাস আঘাত করেছে, রাজ পরিবারের সদস্যরাও এর হাত থেকে নিস্তার পান নি। আমেরিকায় সিনেটররা আক্রান্ত হয়েছেন।
আজ হোক, কাল হোক , আঠারো মাস পর হোক বা দু'বছর পরে হোক এই ভাইরাসকে আমরা পরাস্ত করব, তা ঠিক; তবে আজ যারা পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবাই যে আমাদের মাঝে দু বছর পরেও থাকবেন এ কথা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়? বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের নরেন্দ্র মোদী , আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প, বৃটেনের বরিস জনসন, রাশিয়ার পুতিন ,চীনের লি কেকুয়াং , সৌদির সালমান, কোরিয়ার কিম জং উন, সিরিয়ার আসাদ-এদের কোনো বিকল্প আছে কি? এদের কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয়ে অফিস চালাতে অসমর্থ হয়ে পড়েন তবে পৃথিবীর সামনে এক ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। নেতাহীন জাতি সফল হতে পারে না। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি দেওয়া দরকার পৃথিবী যেন নেতৃত্বশূন্য না হয়ে যায়, কোনো জাতি যেন নেতা শূন্য না হয় এই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে বিশ্বনেতাদের পৃথিবীতে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । মানুষের চাঁদে পা রাখার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে বেশ কিছুদিন। স্পেস ট্রাভেল এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। ভার্জিন গ্যালাকটিক আড়াই লাখ ডলারে স্পেস ট্রাভেলের টিকিট বিক্রি করার কথা এর আগে জানিয়েছে। নাসাও এর আগে বলেছে ৩৫ হাজার ডলারে একদিনের জন্য পৃথিবীর বাহিরে ট্যুরের ব্যবস্থা তারা করবে-তবে এগুলো এখনো বাজারে আসেনি। ইলন মাস্ক সবার থেকে এগিয়ে গিয়ে বলেছে দুই মিলিয়ন ডলারে একটা ট্রিপ এর ব্যবস্থা করা সম্ভব ।
একটা রকেটে পাঁচ জন ধরবে। ইলন মাস্ক এর পরিকল্পনা ছিলো চার-পাঁচ দিনের ট্যুরের, কিন্তু আমাদের কমপক্ষে ৫০০ দিনের জন্য মহাশূন্যে থাকার প্রস্তুতি নেয়া দরকার। সম্ভব, আমরা যদি বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে দেই। বাজেট আরো কিছুটা বাড়ালে বড় আকারের একটা বা দুটো রকেট তৈরি করে সবাইকে অ্যাকোমোডেট করার চিন্তা করা যায়।
পৃথিবীর আনুমানিক ২০০ টি দেশের নেতাদের যদি আমরা পৃথিবীর বাইরে দেড়-দু'বছরের জন্য পাঠিয়ে দেই, তবে পার হেড দুই মিলিয়ন ডলার খরচ ধরলেও চারশত জনের জন্য মোট খরচ দাঁড়াবে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো , পৃথিবীর জনসংখ্যা পিছু মাত্র পাঁচ টাকার কিছু বেশি। মানব সভ্যতাকে যদি আমরা টিকিয়ে রাখতে চাই তবে আমাদের সকলের উচিত আমাদের নেতৃবৃন্দ কে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসা । ওঁনাদের কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য সব মহাকাশযানে উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবস্থ থাকে। কাজেই ওঁনারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওঁনাদের দেশের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন, নির্দেশনা দিতে পারবেন। এই মুহূর্তে এমনিতেই যুক্তি সঙ্গত কারণেই ওঁনাদের পক্ষে জন সমক্ষে আসা উচিৎ না। তাছাড়া ২০০ বিশ্ব নেতা এক সাথে দেড় বছর থাকলে বিশ্ব শান্তির আলোচনায় অনেক অগ্রগতিও হবে।
ফান্ড রেইজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যারা ব্লগে আছেন তাদের কাছে আমি আকুলভাবে অনুরোধ করবো, আপনারা ফান্ড রেইজের ব্যবস্থা নিন । আমি আমার শেয়ারের টাকা যে কোন মুহূর্তে চাহিবা মাত্র দিতে তৈরী আছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬