আমি রাজনীতি বুঝিনা। কখনো কোনো ছাত্রসংগঠন এর সাথেও ছিলাম না। কিন্তু ছাত্র তো ছিলাম। তাই এক সপ্তাহের ব্যাবধানে দুই ছাত্রের মৃত্যু আমার ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের চরিত্রহীন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের প্রতি ঘৃণা টা বিবমিষায় রূপ নিয়েছে।
কি অপরাধ ছিলো আবু বকর এর? গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে, এটাই অপরাধ? দরিদ্র বাবা মা এর ভালবাসার ঋণ শোধ করতে হবে, এটাও অপরাধ? ভালো ছাত্র ছিলো, অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করছিলো, এই কি তার প্রতিদান? কি পেল সে বিনিময়ে? অসময়ে অর্থহীন মৃত্যু। তাইতো, সে কে ছিলো? সে তো কোনো রাজনৈতিক নেতার আত্মীয় না। একারণেই তার মৃত্যুর কারণ 'টিয়ার গ্যাস শেল' নাকি 'ভারী কোনো বস্তু' এ প্রশ্নের সমাধানে কেউ আগ্রহী না। মৃত্যুর পরে তার প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ ও আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকরা প্রদর্শন করে না। উপরন্তু, আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য,"এটা বিছিন্ন ঘটনা, এরকম হতেই পারে।" নিশ্চয়ই বকর এর মা-বাবার হৃদয়ে স্বান্তনার পরশ বোলাবে না!
রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের ফারুক এর মৃত্যুও কি একই রকম না? 'ইসলামী ছাত্রশিবির' নামে এক দল নৃশংস ভাবে খুন করল তাকে। এই নৃশংসতা cannibal holocaust সিনেমাকেও হার মানায়। ইয়া আল্লাহ! এরা এদের নাম দিয়েছে ইসলামী? যে ইসলাম আমাকে মানুষ হতে শিখিয়েছে, অন্ধকার পৃথিবীতে এনে দিয়েছে আলোর স্ফুরণ, সেই ইসলাম এর নাম নিয়ে এই জঘন্যতা? এদেরকে বাংলাদেশ এর মাটি থেকে দূর কর আল্লাহ!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি, আপনাদের কিছু activity চোখে পড়ছে ফারুক এর হত্যাকান্ড নিয়ে। বুকে হাত দিয়ে বলুন, আপনি কি আসলে মানুষ ফারুক এর কথা একবার ও ভেবেছেন? একবার ও ভেবেছেন ফারুক এর বাবা মা কি দুঃসহ জীবন যাপন করছেন? আপনার এরকম কিছু হলে আপনার কেমন লাগতো মন্ত্রি মহোদয়া? একবার, একবার কি পারবেন রাজনৈতিক নেতা না হয়ে মানুষ হয়ে ভাবতে? পারবেন না। আপনারা ফারুক এর মৃত্যুকে 'ছাত্রলীগ কর্মী' এর মৃত্যুর বাইরে কিছু ভাবতেই পারবেন না। আপনারা কখনো বুঝবেন ও না যে এই প্রতিটি মৃত্যুর সাথে আরো কতগুলো মৃত্যু জড়িত। স্বপ্নের মৃত্যু, ভালবাসার মৃত্যু, আশা-আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু, ভবিষ্যতের মৃত্যু।
ফারুকের বাবা যতবার 'গ্রামীণ ব্যাংক' শব্দটা শুনবেন, ততবার তার ছেলের কথা মনে হবে। তার হাহাকার কে শুনবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি? আপনারা তো তখন ব্যাস্ত থাকবেন জাতীয় আর আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে, নামকরণ নিয়ে, সংবিধান সংশোধন নিয়ে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা নিয়ে। আপনাদের সময় কোথায়?
বকর এর মা তার মুরগীগুলোকে খাবার দিতে দিতে ডুকরে কেঁদে উঠবেন, আর তখন আপনারা ব্যাস্ত থাকবেন ছাত্রলীগের কোন কোন নেতা শিবির এর অনুগ্রহপ্রাপ্ত এটা নিয়ে। এ যেন " Singing chorus on the graves of them and their relatives- (Jerome Klapka Jerome)"।
ফারুক, বকর, আমাদের ক্ষমা করে দিও ভাই। আমরা তোমাদের কিছুই দিতে পারলাম না। আল্লাহ তোমাদের আত্মার শান্তি দিক। আমীন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




