অ্যাস্টন ভিলার কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ওখানে খুব বেশিদিন টিকতে পারবেন না ম্যারাডোনা। হয়তো বিদায় নিতে হবে অর্ধেক মৌসুম না পেরোতেই। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কিন্তু কম ঘটেনি। হোসে আন্তোনিও কামাচো-মার্সেলো লিপ্পির মতো কোচরাও কম হেনস্তা হননি ক্লাব ক্যারিয়ারে। কোচদের এমন কিছু দৃষ্টান্ত নিয়েই আজকের এ আয়োজন
* লেরয় রোসেনিয়র
টোরকুয়ে ইউনাইটেড, ২০০৭
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন ইংলিশ কোচ লেরয় রোসেনিয়র। এ কারণে চক্ষুশূল ছিলেন অনেকের। তবে যে যতই অপছন্দ করুক, এ কারণে মাত্র ১০ মিনিটে চাকরি যেতে পারে কারো? অথচ তা-ই ঘটেছে টোরকুয়ে ইউনাইটেডের এই কোচের ক্ষেত্রে। রোসেনিয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরই ক্লাবের মালিকানার সবচেয়ে বড় অংশীদার মাইক বেটসন বিক্রি করে দেন তাঁর হাতে থাকা ক্লাবের ৫১ শতাংশ শেয়ার। নতুন মালিক শেয়ার কেনার পরই কোচ হিসেবে রোসেনিয়রকে না রাখার ঘোষণা দেন। তাই ১০ মিনিটের ব্যবধানে চাকরি হারান তিনি। বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে রোসেনিয়র বলেছিলেন, 'এখানে আসার পর মাইক বলেছিল, সে তার শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। আমাকে যেতেই হতো। তাই বলে যোগ দেওয়ার ১০ মিনিট পরই চাকরি হারাব, এতটা ভাবিনি আমি।'
* লুইজি দেল নেরি
পোর্তো, ২০০৪
পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর চেলসিতে এসেছিলেন হোসে মরিনহো। 'স্পেশাল ওয়ান' নামে পরিচিত এই কোচের জায়গায় জুভেন্টাসের বর্তমান কোচ লুজিও দেল নেরিকে নিয়োগ দেয় পর্তুগালের ক্লাবটি। কিন্তু ৩ বছরের চুক্তি করা নেরি চাকরি হারান অভিষেকের আগেই! ইতালিতে ব্যক্তিগত কাজে যাওয়ার পর ফিরতে দেরি হওয়ায় নেরিকে চাকরিচ্যুত করেন পোর্তো প্রেসিডেন্ট হোর্হে পিন্টো। হতবাক নেরি তখন বলেছিলেন, 'গত দুই বছর রূপকথার মতো সাফল্য পাওয়া পোর্তো হয়তো পরিবর্তনে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমাকে বরখাস্ত করার কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।' পোর্তোর চাকরি হারানোর পরপরই অবশ্য রুডি ফোলারের জায়গায় রোমা নিয়োগ দিয়েছিল নেরিকে।
* হুয়ান্দে র্যামোস
সিএসকেএ মস্কো, ২০০৯
সেভিয়াতেই ভালো ছিলেন এই স্প্যানিশ কোচ। ২০০৫-০৬ ও ২০০৬-০৭ মৌসুমে টানা দুইবার উয়েফা কাপ জিতিয়েছিলেন স্পেনের দলটিকে। তারপর নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে টটেনহামে গিয়ে ইংলিশ দলটিকে জিতিয়েছিলেন লিগ কাপের শিরোপা। কিন্তু রাশান দল সিএসকেতে গিয়ে টিকতে পারেননি ৬ সপ্তাহের বেশি। চির প্রতিদ্বন্দ্বী এফসি মস্কোর বিপক্ষে লিগ ম্যাচে বিরতির আগে ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়ায় দর্শকদের রোষানলে পড়েছিলেন র্যামোস। ম্যাচ শেষে তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয় পুলিশ প্রহরায়। ক্লাবও ছাড়তে হয় এরপর। তাঁর অধীনে খেলা ৯ ম্যাচে রাশান দলটি জয় পেয়েছিল ৪টি, হেরেছিল ৪টি আর ড্র করেছিল ১টি ম্যাচে। রাশিয়া ছাড়ার পর থেকেই বেকার আছেন র্যামোস।
* মার্সেলো লিপ্পি
ইন্টার মিলান, ২০০০
২০০৬-বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ইতালিকে। সিরি এর সেরা কোচের সম্মান পেয়েছেন তিনবার। অথচ সেই মার্সেলো লিপ্পিই কি না অপদস্থ হয়েছিলেন ইন্টার মিলানে। রবার্তো বাজ্জিওকে ছেড়ে দিয়ে ২০০০-০১ মৌসুমে তিনি এনেছিলেন রবি কিনকে। বাজ্জিও ছাড়া যেন অচল হয়ে পড়েছিল ইন্টারের গাড়ি। চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায় তারা। এই ক্ষততে মলম পড়তে না পড়তেই সিরি এর প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে রেজিনার বিপক্ষে। এরপর আর ইন্টারে থাকা হয়নি লিপ্পির। তবে লিপ্পি এখানে একেবারেই অসফল ছিলেন_এটা বলা যাবে না। কেননা, ইন্টার মিলানকে ২০০০ সালের কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
* হোসে মরিনহো
চেলসি, ২০০৭
পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর ২০০৪ সালে চেলসিতে এসেছিলেন বছরে ৪.২ মিলিয়ন পাউন্ড বেতনের চুক্তিতে। পরের বছর সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫.২ মিলিয়নে। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, 'দয়া করে আমাকে উদ্ধত ভাববেন না; আমি স্পেশাল ওয়ান।' নিজেকে 'বিশেষ একজন' মনে করা মরিনহো ৫০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন চেলসিকে। ৩ বছরে মোট ৬টি শিরোপা জিতিয়েছিলেন দলকে। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে পারেননি ব্লুজদের। তাই তাঁর ওপর কিছুটা ক্ষোভ ছিল ক্লাব মালিক আব্রাহমোভিচের।
বার্মিংহামকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ঘরের মাঠে ৬৪ লিগ ম্যাচে অপরাজিত থাকার নতুন রেকর্ড গড়ে ২০০৭-০৮ মৌসুমটা শুরু হয়েছিল মরিনহোর। কিন্তু এরপর অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে হার আর ব্লাকবার্ন রোভার্সের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রর পরই তাঁকে চাকরিচ্যুত করে চেলসি। তাঁর বিদায়ের পর দায়িত্ব পান আব্রাহাম গ্রান্ট। কিন্তু চেলসিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর লিগ কাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়েও পরের বছর চাকরি হারাতে হয় গ্রান্টকে।
* হোসে আন্তনিও কামাচো
রিয়াল মাদ্রিদ, ১৯৯৮ ও ২০০৪
রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের অন্যতম সফল ফুটবলার হিসেবেই ধরা হয় কামাচোকে। এখানে ২০ বছর খেলার পর রিয়াল সমর্থকরা কোচ হিসেবে পেতে চেয়েছিল এই লেফট ব্যাককে। ১৯৯৮ সালে সেই দায়িত্ব নেন কামাচো। তবে রিয়ালের হয়ে স্প্যানিশ লিগের ৯টি আর চ্যাম্পিয়নস লিগের ২টি শিরোপা জেতা কামাচো কোচ হিসেবে ২৩ দিনের বেশি থাকতে পারেননি। তখনকার ক্লাব প্রেসিডেন্ট লরেনজো সানজের সঙ্গে দ্বন্দ্বে চাকরি ছাড়েন তিনি।
তবে ন্যাড়া একবার বেলতলায় গেলেও কামাচো গিয়েছিলেন দুইবার। ১৯৯৮-এর পর ২০০৪ সালে আরো একবার রিয়ালের কোচের দায়িত্ব নেন তিনি। অভিজ্ঞতাটা ভালো হয়নি সেবারও। প্রথমবার ২৩ দিনের পর ২০০৪ সালে তাঁর মেয়াদ ছিল ১১৫ দিন। ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে প্যাট্রিক ভিয়েরাকে কেনার কথা বলেছিলেন কামাচো। অথচ রিয়াল কিনে মাইকেল ওয়েনকে। মেজাজটা খিচড়ে ছিল এ কারণে। এরপর এসপানিয়লের বিপক্ষে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন ডেভিড বেকহাম আর রাউল গঞ্জালেসকে। ম্যাচটায় আবার দু'জন লাল কার্ড দেখেছিল রিয়ালের। এরপর নিজেই 'লাল কার্ড' দেখে রিয়াল থেকে বিদায় নেন কামাচো।
* ব্রায়ন ক্লফ
লিডস ইউনাইটেড, ১৯৭৪
ইংলিশ লিগ জয়ী লিডস নতুন মৌসুমে নিয়োগ দেয় ব্রায়ান ক্লফকে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুশীলনের প্রথম দিনই খেলোয়াড়দের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি। আগের মৌসুমে জেতা শিরোপাটা 'বৈধ' ছিল না জানিয়ে পদকগুলো গর্তে ছুড়ে ফেলতে বলেছিলেন ক্লফ। ফুটবলাররা কোচকে মেনে নিতে না পারায় ৪৪ দিন পরই চাকরিচ্যুত হন তিনি। এরপর ক্লফের করা প্রতিক্রিয়া অমর হয়ে আছে ইংলিশ ফুটবলে, 'ফুটবলের কালো দিন আজ।'

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




