somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডানাকাটা পরী

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৌশিকের বয়স ২৩। এই বয়সের একজন ছেলের যা যা গুন থাকা দরকার তার প্রায় সবই তার মধ্যে আছে। সে পড়ালেখায় ভাল। ছবি আকায় ভাল। ক্রিকেট খেলা, গান গাওয়া বা কবিতা লেখায়ও তার জুড়ি নেই। এসব কাজে সে যে শুধু ভাল তাই না। অসম্ভব রকমের ভাল। গণিত অলিম্পিয়াডে সে জাতীয় পর্যায়ে দু'বার পুরষ্কার পেয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে নিজ শহরের হয়ে ক্রিকেট খেলেছে। জাতীয় দলের বয়সভিত্তিক ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছে। অনেক গুলো চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে পুরষ্কার পেয়েছে। এমনকি তার লেখা দু একটা কবিতা জাতীয় দৈনিকে পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি তার সামনে সম্ভাবনার সকল দরজাই খোলা ছিল। কিন্তু h.s.c পরীক্ষার পর সে যখন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেয়েও ঢাবি'র চারুকলায় ভর্তি হল হল তখন তার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু বান্ধবরা একটু অবাক না হয়ে পারলো না। তবে এ বিষয়ে কৌশিকের যুক্তি ছিল খুব সোজাসাপ্টা। তার নাকি বাঁধা ধরা পড়াশোনার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নেই। নিজের সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটানোর জন্য সে এরকম কিছুই নাকি খুঁজছিল। মেডিকেল বা বুয়েটে সুযোগ পেয়েও সে যদি চারুকলায় ভর্তির সুযোগ না পেত তাহলেই নাকি সে বেশি কষ্ট পেত। কারন এখানে পড়ে সে নাকি একই সঙ্গে ছবি আকার পাশাপাশি খেলাধুলা, লেখালেখি আর গান বাজনা সব দিকেই সমান মনোযোগ দিতে পারবে। কাজেই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ খুব একটা আপত্তি করে নি।

তবে কৌশিকের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক তা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রমান হয়ে গেল। ভার্সিটিতে ভর্তির দ্বিতীয় বছরই একুশের বইমেলায় তার লেখা প্রথম কবিতার বই বের হয়ে গেল। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখা চালিয়ে যাবার সুবাদে বই প্রকাশ করতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। ভার্সিটির বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে তৈরী ওদের ব্যান্ডটাও বেশ পরিচিতি পেয়ে গেল। ভার্সিটির বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত স্টেজ শোতে দেখা যেতে লাগলো ওদের। শুধু তাই নয় একটা বিদেশী সংস্থার আয়োজিত আর্ট কম্পিটিশনে প্রথম হয়ে কৌশিক স্কলারশিপ নিয়ে ঘুরে এল অস্ট্রেলিয়া থেকেও। প্রয়োজনীয় সময়ের অভাবে শুধু খেলাধুলাটাই বোধহয় বাদ পড়ে গেল। এহেন নানাবিধ সাফল্যের সাধ পেয়ে স্বভাবতই কৌশিক একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল। নিজের কাজে আরো বেশি মনোযোগ দেয়ার জন্য ভার্সিটির হল ছেড়ে একটা ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করল। শুরু হল রাত দিন ব্যাপী তার ছবি আকা, বই পত্র পড়া আর নিজের গানের কম্পোজিশন করা।

আর এমন গুনধর যে ছেলে তার গার্লফ্রেন্ড থাকবে না তা কি হয়? আমাদের কৌশিকও এর ব্যাতিক্রম নয়। সে তার কল্পনার রাজকন্যার দেখা পায় কলেজ জীবনে। তার প্রেয়সীর নাম সোমা। সে ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতি মাসে-দুমাসে কৌশিক একবার রাজশাহী যায় সোমার সাথে দেখা করার জন্য। মাঝে মাঝে সোমাও ঢাকায় চলে আসে। তাদের সম্পর্কটা যে শুধুই প্রেমের চেয়েও বেশি কিছু এটা বুঝতে কাউকে খুব একটা বেগ পেতে হয় না।

কৌশিক যে বাড়িটায় উঠেছিল সেটা একটু পুরোনো ধাচের একটা দশতলা বিল্ডিং। মূল সড়ক থেকে একটু দূরে গলির ভেতর বাড়িটা। তাই ভাড়াটা একটু কম। প্রতি তলায় দুটা করে ফ্লাট। কৌশিক থাকে অষ্টম তলায়। একা মানুষ হিসেবে তার ছোটখাট একটা কামরা হলেই চলত। কিন্তু ছবি আকা আর ব্যান্ডের সরঞ্জামাদী রাখার জন্য সে আসলে একটু বড় জায়গায়ই খুজছিল। তাই পুরো ফ্ল্যাটটাই ভাড়া নিতে সে কার্পণ্য করে নি। তাছাড়া নিজের লেখালেখি, গান আর পেইন্টীং নিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ সাবলম্বী হয়ে উঠছে সে। তাই পুরো ফ্লাট ভাড়া নেবার বিলাসিতাটা সে দেখাতেই পারে। কৌশিকের ফ্লাটের ঠিক অপর পাশেই থাকেন ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা রহমান সাহেব। স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সুখের সংসার। প্রথম দিন এসেই পরিবারটির সাথে পরিচত হয় কৌশিক। কৌশিকের ছবি আকা আর গান গাওয়ার প্রতিভার কথা জানতে পেরে তাকে খুবই পছন্দ করে ফেলেন রহমান সাহেব। পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করে দেন তিনি। যদিও তখন তার মেয়ে নিশা বাসায় ছিল না। কৌশিকও পরিবারটির সান্নিধ্যে যারপরনাই খুশি হয়। মফস্বলে ফেলে আসা বাবা মা'র কথা প্রায় ভুলেই যায় সে।

কিন্তু এমন কঠিন পরিস্থিতির সামনে যে তাকে পরতে হবে তা সে ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করে নি। ঘটনার শুরু কৌশিক যেদিন ভাড়া ঐ বাসায় ওঠে তার দ্বিতীয় দিন। ভার্সিটি থেকে ফিরে সে যখন নিজের ফ্লাটের তালা খুলতে যাবে তখন তার চোখে পড়ে পাশের ফ্লাটের দরজায় দাঁড়ানো স্কুল ড্রেস পড়া কোঁকড়া চুলের অপূর্ব সুন্দরী এক ষোড়শী কিশোরী। এই বয়সের মেয়েদের চেহারায় যে লাবন্য থাকার কথা তার পুরোটাই তার মধ্যে প্রবলভাবে আছে। আর মেয়েটার চেহারায় আত্মবিশ্বাসের একটা পরিস্কার ছাপ স্পষ্ট। মেয়েটা এক দৃষ্টীতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েদের এই দৃষ্টিটার সাথে কৌশিক মারাত্মকভাবে পরিচিত। কিন্তু এত কম বয়সের কোন মেয়ের কাছ থেকে কৌশিক এটা আশা করেনি। কৌশিক বুঝতে পারল এটা হচ্ছে রহমান সাহেবের ক্লাস নাইনে পড়ূয়া মেয়ে নিশা। সে ডাক দিয়ে কথা বলবে কিনা ভাবতে ভাবতেই মেয়েটা কেমন যেন লজ্জা পেয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিল। অবশ্য মেয়েটা তার লজ্জা ভাঙ্গতে খুব বেশি সময় নেয় নি। পরদিনই তার মায়ের হাতে বানানো পিঠে দেবার উছিলায় কৌশিকের ঘরে তার প্রথম প্রবেশ। অল্প কিছুক্ষনের আলোচনায়ই কৌশিক বুঝতে পারে যে মেয়েটা অসম্ভব বুদ্ধিমতি আর মারাত্মক চঞ্চল। কয়েকদিনের মধ্যেই কৌশিকের ঘরে তার যাতায়াত নিয়মিত হতে শুরু করল। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কৌশিক যখন ভার্সিটির ক্লাস আর বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি শেষে বাড়ি ফিরত তখনই নিশার দেখা পাওয়া যেত। কৌশিক আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করল যে মেয়েটা তার বয়সের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত পরিণত। এই বয়সে তার যেখানে তার সাজগোজ আর বন্ধু বান্ধবিদের সাথে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানোর কথা সেখানে তার বেশির ভাগ সময়ই কাটে কৌশিকের সাথে বিভিন্ন বই পুস্তক, গান আর ছবি নিয়ে আলোচনা করে। কৌশিক বুঝতে পারল তার অনেক বন্ধুবান্ধবের চাইতেও মেয়েটার সাহিত্য বিষয়ক রুচি অনেক উন্নত মানের। প্রথমে শুধু হুমায়ুন আহমেদ এ আটকে থাকলেও একসময় কৌশিকের কাছ থেকে বই নিয়ে নিশা নির্মলেন্দু গুণ, সৈয়দ শামসুল হক, কাবেরী রায়, হরিশংকর জলদাস, হুমায়ুন আযাদ এমনকি তসলিমা নাসরিনের বই পর্যন্ত পড়া শুরু করল। কৌশিক প্রথম দিকে একটু শংকায় থাকলেও নিশার ম্যাচিউরড ব্যাবহারে শেষ পর্যন্ত অবাক না হয়ে পারল না। একটা সময় চলে আসল যখন কৌশিক নতুন কোন গল্প বা কবিতা লিখলে সেটা সবার আগে নিশাকে দেখাত। এমনকি একটা সময়ে কৌশিকের আকা ছবি গুলোর পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়ে ঊঠল নিশা। শুধু তাই নয় কৌশিকের ব্যান্ডের জন্য লেখা বিভিন্ন গানের লিরিক্সে পর্যন্ত নিশার সাহায্য পেতে শুরু করল। এভাবেই কখন জানে না নিশার ওপর সে বেশ নির্ভরশীল হয়ে ঊঠল। কিন্তু বিনিময়ে নিশার প্রতি তার আচরণ আগের চেয়ে খুব একটা যে বদলাল তা কিন্তু না। নিশা তার কাছে পাশের বাসার ষোড়শী কিশোরীর চেয়ে বেশি কিছু কোনদিনই ছিল না।

বলাই বাহুল্য রহমান সাহেবের বাড়িতে ওঠার পর থেকে কৌশিকের সাফল্যের পরিমাণ আরো বেড়ে গেল। ছয়মাসের মাথায় তার লেখা দ্বিতীয় বই বাজারে আসল। একটা টিভি চ্যানেলের মিউজিক্যাল নাইট শোতেও তার ব্যান্ডের ডাক পড়লো। এমনকি তাদের ব্যান্ডের প্রথম এলবাম পর্যন্ত বাজারে আসার কথাবার্তা চুড়ান্ত হয়ে গেল। আর ছবি আকা তো পুরোদমে চলছিলই। এরই মাঝে সোমার সাথে যোগাযোগও তার ঠিকমতই চলছিল। তাই নিশা তাকে নিয়ে কি ভাবছে বা তাকে কোন দৃষ্টীতে দেখছে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কোন সময় কৌশিকের খুব একটা ছিল না।

এদিকে নিশা কৌশিকের প্রতি ভয়ানক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়তে লাগল। কৌশিকের আচার ব্যাবহার, দৈনন্দিন জীবনের খুটিনাটি তার প্রায় মুখস্থ হয়ে গেল। কৌশিকের ছবি আকার সময় সে প্রায়ই পাশে গিয়ে বসে থাকে। নিজ থেকে ঊঠে গিয়ে রান্নাঘর থেকে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। আর সারাদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসাহাসি, খুনসুটি, ঝগড়া তো আছেই। কৌশিকের সাথে যতই মেশে সে ততই যেন মুগ্ধ হয়। লোকটার লেখা কবিতা, তার আকা ছবি বা তার গাওয়া গানের প্রতি তার যত ভালবাসা জন্মায় তার চেয়ে বেশি ভালবাসা জন্মাতে শুরু করল কৌশিক নামের এই মানুষটার প্রতি। মানুষটা সত্যিই অসাধারণ। কি সহজ সরল কথাবলার ভঙ্গী, এলোমেলো চুল, হাই পাওয়ারের চশমার নিচে ঢাকা চোখ দুটিতে কি অপার্থিব সৌন্দর্য! নিশার মনে হতে লাগল এই মানুষটার যদি এত গুন নাও থাকতো তবুও সে নিশ্চিত ভাবেই এই মানুষটার প্রেমে পড়তো। আর তার গার্লফ্রেণ্ড আছে এ কথা সে জানে। সোমা এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কৌশিকের ফ্লাটে এসেছে। তাদের মেলামেশাটা কোন পর্যায়ের সেটাও নিশা বেশ ভালভাবেই আচ করতে পেরেছে। নিশা খুব ভাল করেই জানে এই মেয়ের চেয়ে দেখতে সে হাজারগুন বেশি সুন্দরী। আর এই মুহুর্তে যদি সে না থেকে যদি সোমা কৌশিকের পাশে থাকত তাহলে সে কি পারত কৌশিকের ছবি আকার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে? তার জন্য নতুন নতুন গানের লিরিক্স লিখে আনতে? বা তার লেখা কবিতাগুলো আরেকটূ ছন্দমধুর ও অর্থবহ করে তুলতে? নিশার ষোড়শী মন হঠাত করেই ভীষন রকম একরোখা আর জেদী হয়ে উঠতে শুরু করে। নিশা খুব ভাল করেই জানে সে অন্য কোন ছেলের চোখে ঠিক কতটা আকর্ষণীয়। কিন্তু শুধু কৌশিকের কাছেই তার সৌন্দর্যের কোন মূল্য নেই। যদিও নিশার চেষ্টার কোন কমতি নেই। সে মাঝে মাঝেই দারূন সেজ়েগুজে কৌশিকের ঘরে যায়। তাকে দেখে কৌশিকের খুব একটা ভাবান্তর হয় না। মাঝে মাঝে হয়ত বলে ওঠে, "কিরে নিশা এত সাজুগুজু কিসের? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?"
নিশা মৃদু হেসে উত্তর দেয়," তাতো পড়েছিই। কবেই..."
-"তাহলে বল তো কার প্রেমে পড়লি? who is the lucky dog?"
-"তা জেনে তোমার কি হবে? তোমার তো একজন আছেই। অন্য কেউ সাজুগজু করলে কি আর তোমার চোখে পড়ে?"
-"কে বলছে পড়ে না? এই যে পড়ল। এখন বল কে সেই হতভাগা যে আমার বারবি ডলটাকে কষ্ট দেয়?"
-"সে কেউ না। তোমার না জানলেও চলবে। আর বললেও বুঝবে না।"
-"বললেও বুঝব না? আচ্ছা থাক। বলবি না যখন তখন বলিস না। তারচেয়ে বরং এই ছবিটা দেখ। কালকে রাত্রে শুরু করেছি। পুর্ণিমার রাত্রে নীল শাড়ি পরা একটা মেয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আলো ছায়ার কম্পোজিশন্টা ঠিক মত আকতে পারলে মনে হবে মেয়েটা এখনই ছাদ থেকে ঊড়াল দেবে। ঠিক যেন ডানাকাটা পরি। তাই না?"
-"হুম তাই।" মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নিশা।
"আমিও একদিন আকাশে ঊড়াল দেব। তখন দেখব আমাকে ডানাকাটা পরির মত লাগে কি না।" মনে মনে ভাবে নিশা।

এদিকে কৌশিক যে একেবারেই কিছু বোঝে না তা কিন্তু নয়। আসলে সত্যি কথা বলতে কি বোঝার চেষ্টা করে না। তার মতে এই বয়সে এরকম ভাললাগা সবার মনেই তৈরী হয়। কৌশিকের ধারনা নিশার এই ছেলেমানুষীও বয়সের সাথে সাথে কেটে যাবে। তাই সত্যি যখন নিশা জীবনানন্দ দাসের কবিতার বইয়ের মাঝে করে কৌশিককে চিঠি পাঠাল তখন সে অবাক না হয়ে পারল না। কৌশিক চিঠিটা আগাগোড়া পড়ল। মাত্র কয়েক লাইনের ছোট্ট একটা ছেলেমানুষী কবিতা। কিন্তু নিশার মনের ভাব বুঝতে কৌশিকের খুব একটা কষ্ট পেতে হল না।

"আমার মনের গহীন ঘরে একটা হলুদ পাখি,
সারাটা দিন কিচিরমিচির ভীষন ডাকাডাকি।
পাখি আমার ডাক শোনে না।
একলা একলা ওড়ে।
সারাটা ক্ষন কোন সে ছুতোয় যায় দখিনের ঘরে।
ঘরের মালিক বুঝতো যদি আমার মনের ব্যাথা,
তবে কি হায় করত আমায় এতই অবহেলা?"

চিঠিটা পড়ে কৌশিক কিছুক্ষন হাসল। তারপর নিশাকে ডেকে পাঠাল। বলল,
-"এই চিঠি তুই লিখছিস?"
-হুম। নিশার গম্ভীর উত্তর।
-"কেন লিখছিস?"
-আমার ইচ্ছা হইছে তাই।
-"কি চাস তুই?"
নিশা কোন উত্তর দেয় না।
-"বল কি চাস তুই?"
-"আমি যা চাই তুমি আমাকে দিতে পারবা?"
-"মানে?"
-"মানে টানে বুঝি না। বলছি আমি তোমার কাছে যা চাই তুমি আমাকে দিতে পারবা?"
কৌশিক হঠাত টের পায় নিশা বেশ জোরে জ়োরে কথা বলছে। তার গলার স্বরে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।
­-"কি হল জবাব দিচ্ছ না কেন? আমি যা চাই তুমি আমাকে দিতে পারবা?" নিশা প্রায় চিতকার করে ওঠে।
-"কি চাস তুই?" মিনমিনে, ভয় পাওয়া গলায় কৌশিক বলে ওঠে।
-''আমি তোমাকে চাই।'' বলেই কৌশিকের শরীরের ওপর লাফিয়ে পড়ে নিশা। কয়েক মুহুর্ত লাগে কৌশিকের বিষয়টা বুঝতে। তারপরই নিশাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দেয় সে।
-"তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?"
কৌশিক চেঁচিয়ে ওঠে। নিশা এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না। কাঁদতে কাঁদতে কৌশিকের ফ্লাট থেকে বের হয়ে যায়।
সারাটা রাত কৌশিকের খুব অস্থির কাটলো। সে বুঝতেই পারছিল না এরকম একটা পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত। মেয়েটার সাথে এখন ঠিক কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তাই তার মাথায় আসছিল না। সারারাত ছটফট করতে করতে বেশ গভীর রাতে তার ঘুম আসে।

পরদিন খুব ভোরে মানুষজনের হই চইয়ের শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কৌশিক বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখতে পায় পিচঢালা রাস্তায় পড়ে আছে নীল শাড়ি পড়া এক রক্তাত ষোড়শীর মৃতদেহ। ছাদ থেকে লাফ দেবার আগে অন্তত এক মুহুর্তের জন্য হলেও যে নিজেকে ডানাকাটা পরি ভেবে ভুল করেছিল।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×