somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের কান্না

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ মনে হল, এই বৃষ্টি ভেজা রাত শেষ হয়ে গেলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।তাই বারান্দায় বসে আছি।আনমনে বসে বসে বৃষ্টির কান্না দেখছি।শেরেবাংলা হলের ফোয়ারায় পানি জমে ছোটো খাটো সুইমিং পুল
সৃষ্টি হয়েছে।সেই পানিতে লাফানোর লোভ সামলাতে পারছিলাম না।ক্রমেই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে।ক্রমেই আমার
মন চঞ্ছল হয়ে উঠছে।

এমন সময়,
মাসুদ আর ইমরান একটা চরম কুপ্রস্তাব দিয়ে বসল।পরীক্ষার সামনে, আসলেই কুপ্রস্তাব…………
প্রস্তাবনাটা ছিলো এইরকমঃ
“দোস্ত!চল ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে আসি।ভালই লাগবে, বৃষ্টির মধ্যে।
সেই সাথে, পেনাং থেকে চা খেয়ে শরীরটা গরম করা যাবে।’’

আমি মোটামুটি ঝুলে চলা পাবলিক।রাজি হয়ে গেলাম।
ছাতা হাতে বের হলাম তিনজন।দেখা যাক ফিলিংস কতদুর পাওয়া যায়।

হলের সামনে এসেই দেখলাম, ছোট-খাট পুকুর পার হয়ে আমাদের যেতে হবে।
সেটা ব্যাপার না, আসল ব্যাপার হলো পুকুরের পানির উৎস হল ড্রেনের পানি এবং হাগুর পানি।
কি আর করা, ফিরে তো যেতে পারি না।আমার হাফ-প্যান্ট আরেকটু হাফ করে নিলাম।ক্যাম্পাসের
কাছে আসতেই বৃষ্টি কেমন যেন কমে আসল।

ধুর! এইটা কোন কাজ হল? বৃষ্টি দেখতে বের হলাম, আর বৃষ্টিই যদি থেমে যায় কেমন লাগে?
যাইহোক, হাটতে লাগলাম পেনাং এর দিকে।চা খেয়ে ভাল লাগল। শুধু ভাল বললে ভুল হবে, বেশ ভাল
লাগল।বাইরে এসেই আমার মন ভাল হয়ে গেল।পূর্নউদ্দোমে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

রাস্তায় পানি জমেছে।সেই পানিতে হাঁটতে হাঁটতে আমার মন কেমন যেন উদাস হয়ে গেল।মনে পড়ল গ্রামের কথা।গ্রামের পুকুর পাড়, কাদা মাখা রাস্তা,টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ,ফুটবল খেলা,কদম ফুল, সারাদিন কাদায় মাখামাখি করে ভর-সন্ধ্যা তে মায়ের বকুনি…………।

হঠাৎ সম্বিত ফিরে পাই।আমার স্মৃতির পাতা গুলো কেমন যেন মলিন যাচ্ছে। খেয়াল করলাম আমার চোখে পানি। বৃষ্টির আঝর ধারা আমার চোখের নোনা জল গুলো ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ঠিক যেন, ব্যস্ত এই নাগরিক জীবন আমার ভেতরের আবেগ কেও একটু একটু করে ধুয়ে নিচ্ছে।কেমন যেন এক চিলতে কষ্ট অনুভব করলাম বুকের ভেতরে।এই কষ্ট যখন দীর্ঘশবাস হয়ে বের হয়, তখন তা দেখার কেও থাকে না।এই শহর বড়ই আবেগশুন্য।

আমারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারলাম না।এত রাতে নিরাপত্তা জনিত কারনে ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা হয়।তিনজন দাড়ালাম বুয়েট স্মৃতিসৌধের সামনে।বৃষ্টি ভেজা আড্ডা জমে উঠল।
ইমরান বলল, দোস্ত!এই দিনগুলর কথা কি কখনও মনে পড়বে না?
আমি বললাম, আজ হতে অনেক বছর পর এমনি কোন এক বৃষ্টির রাতে মনে পড়বে। তখন হয়ত আমাদের আবেগের রঙ আজকের মত সতেজ থাকবে না।তবুও মনে পড়বে।সেদিন মলিন হয়ে যাওয়া স্মৃতি গুলো খুব হাতরে দেখতে ইচ্ছে করবে।খুব ইচ্ছে করবে।মনের অজান্তে হয়ত একফোটা আনন্দঅশ্রু চোখের কোনায় এসে জমাট বাধবে।
কেমন যেন আমার গলা ধরে এল।আচ্ছা, একদিন তো এই বুয়েট ছেড়েও চলে যেতে হবে!তখন কি খুব খারাপ লাগবে? নাকি উচ্চ বেতনের চাকুরির আনন্দ সব কিছু ভুলিয়ে দেবে?
আমি এখন যে যেই বিছানায় ঘুমাই, বহুকাল পরে আমার একবারও কি মনে হবে না, সেই বিছানায় এখন কে ঘুমায়?বারান্দায় দাড়ালে কি সেই আগের মত করেই জীমনেসিয়াম দেখা যায়? ক্যাফেটেরিয়ার সামনে নিষেধাজ্ঞা সত্তেও কি এখনও ক্রিকেট খেলা চলে?পলাশীর চা এখন কেমন চলে?মরুভুমি ক্যাম্পাস এখন কেমন দেখায়?

নাহ!আর ভাবতে পারছি না।
…………………………………………………………………………………………………………………………………
হলে ফিরে এলাম।সাথে নিয়ে এলাম একটুকরো সুখস্মৃতি।
বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।









০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×