somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিটি ওয়ান হোস্টেলের দিনগুলো-২

২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম পর্ব

হোস্টেলে মাঝে মাঝে আমাদের আরেক বন্ধুবর জাহিদ ঘুরতে আসত।ওর জন্য ফ্রি ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করতে চমৎকার একটা ফন্দি বের করেছিলাম। যেহেতু ভাত আর ডাল আনলিমিটেড সুতরাং…… জাহিদকে রুমে রেখে আমরা তিনজন যেতাম ভাত আর ডাল আনতে। ভাত প্লেটে যত বেশি নেয়া যায়। প্লেটের উপর এক্কেবারে ভাতের পিড়ামিড বানিয়ে নিয়ে চলে আসতাম। তারপর যতটা পারি ডাল আর তরকারি। অতপরঃ আরাম মত চারজন ভাগযোগ করে খাওয়া শুরু করে দিতাম। সে এক জটিল খাই দাই। কোনটা যে কার প্লেট আর কার তরকারি কেডা খাইতেছে তার কোন ঠিক নাই। সেই খাবার কথা আজ মনে পড়লে অদ্ভুত লাগে। এমন মজা করে চারজন আবার কবে খেতে পারব?
বেচে থাকলে হয়ত আবার চারজনের দেখা হবে। হয়ত সেদিন আমাদের পকেটে অনেক টাকাও থাকবে। হয়ত সেদিন জমকালো কোন রেস্টুরেন্টে বসে আধুনিক কোন খাবার খাব। কিন্তু সেদিন কি এমন ভাবনাহীন মন নিয়ে নির্লজ্জ ভাবে খেতে পারব?

একবার মনে হল, রাত ১২টার পরে ফার্মগেট ঘুরে দেখা উচিত। বের হলাম আমরা তিনজন। ব্যস্ত এ শহরের ব্যস্ততম রাস্তার একদম মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের মধ্যে একধরনের ভাললাগা কাজ করতে লাগল। রাতের শুনসান নিরাবতার এই ফার্মগেট, সোডিয়াম বাতির মায়াবী আলো, পথের ধারে পরম আনন্দে ঘুমিয়ে থাকা ভাসমান মানুষ, ছন্দ-আনন্দের সামনে রাতপরীদের উৎকট চাহনী, দৃশ্যগুলোর মাঝে সভ্য সমাজের অসভ্য এক বেদনা লুকিয়ে আছে। এ বেদনা দিনের আলোয় দেখা যায় না। দিনের আলোয় নাগরিকতার মোড়কে সবকিছু ঢেকে থাকে।

শোভনের একটা মোটাসোটা কোলবালিশ ছিল। কোলবালিশটার নাম দিয়েছিলাম ময়ুরী। কোলবালিশটা নিয়ে এই শালা আরামে ঘুমাইত। আমার আর জুবায়েরের সহ্য হল না। আমরাও কোলবালিশের উপর আমাদের সমান দাবি পেশ করলাম। সমঝোতা হল পর্যায়ক্রমে আমরা ময়ূরীর সান্নিধ্য পাব। তবে যেদিন জাহিদ আসত সেদিন ময়ূরীকে কেউ পেত না। জাহিদের মাথার বালিশ হিসেবে নিত বলে।
একদিন কোলবালিশটা চুরি হয়ে গেল। এত জিনিশপত্র থাকতে ওইটার উপরেই চোরের চোখ পরল! অনেক খুজেও আমরা পেলাম না। সন্দেহের তালিকায় হরমুজ সবার উপরে ছিল। কিন্তু কোন প্রমানাদি না থাকায় কিচ্ছু করতে পারলাম না। অতপরঃ আমরা তিনজন একই সাথে বিপত্নিক হবার শোকে কাতর হয়ে পরলাম।

ঢাকায় এসে হাতে প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পেয়েছি। “দুরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন”--- এই নীতির মানেটা যে কি বোঝা দরকার। আমি আর জুবায়ের বেশ ডেস্পারেট হয়ে গেলাম। শোভনের মোবাইলে তাও কিছু মেয়ের নাম্বার ছিল। কিন্তু আমি আর জুবায়ের পুরাই ফাকা সেট। ভাবতেই খারাপ লাগে তখন কি আবালডাই না আছিলাম।
খবরের কাগজের পাত্র-চাই বিজ্ঞাপন গুলাতে ট্রাই মারতাম। বলতাম পাত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই। মাঝে মাঝে খেলা যা জমত। এর কোন তুলনা হয় না। একবার তো এক পাত্রীর সাথে ডেটিংই ঠিক করে ফেললাম। কিন্তু ভয়ে আর শেষ পর্যন্ত যাই নাই। কি হয় বলাতো যায় না। তবে পাঠক ভাই ও বোনেরা এই কাজটি কখনও করবেন না। এটা খুবই আবালিও এবং গর্হিত কাজ। Don’t try this at home

একটি ভয়ানক অভিজ্ঞতাঃ
হোস্টেলে পানির ভিষন সমস্যা। সময়মত পানি ধরে রাখতে হয়। গোসল করার জন্য দীর্ঘসময় লাইনে দাড়াতে হত। যাহক একদিন গোসলখানায় ঢুকে মাথায় পানি ঢেলে কেমন জানি মনে হল। পানি এইরকম কেন? আমার মনে হল পানির মধ্যে হাগু ভাসছে। ওয়াক থু!!!!! সেদিন মনে হয় সুয়ারেজের লাইন আর ওয়াসার লাইন ক্রস-কানেকশন হয়েছিল। ইয়া মাবুদ!
এরপর সপ্তাহখানেক আমি ভাল করে ভাত খাইতে পারি নাই। সে এক দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×