somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপদ কাকার স্বপ্ন ও একটি বড় দীর্ঘশ্বাস

০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই প্রতিদিনের মত আজও বিদ্যুৎ চলে গেল, এ যেন প্রতিদিনের বাধা সময়, নিরাপদ কাকা কিন্তু এতে একটুও বিরক্ত নয়, নিয়তি মেনে নেয়ার মত ধৈয্য, সাহস, মনোবল সবই তার ভিতর বিদ্যমান। তাছাড়া নিয়তি তে যাই থাকুক না কেন সহজে মেনে নিতে পারলে জীবনে আনন্দের অভাব হবে না, নিয়তি মেনে নেওয়াও একটা আনন্দ, নিরাপদ কাকা এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।

শহরে থেকে অদূরে সাজানো ছোট্ট একটা গ্রামে নিরাপদ কাকার বাস। সন্ধ্যা হলেই এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো নিরাপদ কাকার বাড়িতে এসে হাজির। বাড়ির সামনে বিশাল উঠোন, চারপাশ গাছপালায় ঘেরা। দক্ষিণমুখী বাড়িটির কোণায় পাটি বিছিয়ে নিরাপদ কাকার মুখে গল্প শোনার মজাই যেন আলাদা। নিরাপদ কাকাও প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প বলে সবাইকে হাসায়, কাদায়, ভয় দেখায়। মুগ্ধ হয়ে সকলে তা শ্রবণ করে। একসময় বিদ্যুৎ চলে আসলে সেদিনের মত গল্প বলা শেষ।

এভাবেই সকলকে আগলে রেখে একত্রে মিলেমিশে থাকার শিক্ষাটা নিরাপদ কাকার মাধ্যমেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শিখছে। তারা হয়তো জানেও না যে, তারা তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়ে রয়েছে।

সময় চলতে থাকে এভাবে, একদিন সন্ধ্যায় নিরাপদ কাকা বলল, "কাল রাইতে আমি একটা স্বপ্ন দেকছি আজক্যা হেইডা শুনাই তোদের। স্বপ্নে দেখতাছি, আমি বাজারে যাইতাছি ওই গঞ্জের রাস্তা দিয়্যা, দেহি বিশাল বড় কি একটা আকাশ থিক্যা আমাগো গ্রামের দিকে আইতাছে, আমিতো ভয় পাইয়্যা গেছি, আমি ঘুইরা দৌড় দিমু তহনই ওইট্যা আমাগো গ্রামের উপর পড়ল, একটা খন্ড আইস্যা আমার ঘাড়ে লাগলো, আমি উল্টাইতে উল্টাইতে অনেক দূরে গিয়্যা পরলাম, মনে অইলো আকাশ ভাইঙ্গা পরছে, চারিদিকে শুধু ধুয়া আর ধুয়া। বুঝতাছি না কি অইল, উটার চেস্টা করলাম কিন্তু প্রচন্ড ব্যতা, তারপরও উটলাম সবকিছু আবছা লাগে, কিছু চিনা যাইতাছে না, নাই কুনু গাছপালা, নাই কুনু বাড়িঘর, দুরের গ্রামগুলা দেহা যায়, মানুষজন দেহি কেউ দাড়াই আছে, কেউ বইস্যা আছে, কেউ শুইয়্যা আছে, বুঝতে পারতাছি আমাগো গ্রাম আর গ্রাম নাই, চক অইয়া গেছে কিন্তু কোন মানুষ মরে নাই। এরপর ঘুমটা ভাইঙ্গা গেল।

স্বপ্নটা শুনে সকলের মনে এক রহস্য দানা বাধলো, কেউ মনে মনে ভাবলো এটা কেমন স্বপ্ন, কেউ ভাবলো তারপর কি হল, কেউ ভাবলো আসলেই কি এমন কিছু হবে নাকি। নিরাপদ কাকা বলল আমাদের গ্রামে হয়তো কোন বিপদ আসতে চলেছে। সবাইকে একসাথে মিলেমিশে থাকতে হবে, পড়ালেখা করে অনেক কিছু জানতে হবে, একসাথে কাজ করতে হবে।

গ্রামের পশ্চিম দিকে সুদীর্ঘ ফসলের ক্ষেত, তারপর রয়েছে বিশাল নদী, কয়েক মাস পরেই এক বর্ষাকালে নদীটি ভাঙতে শুরু করলো, গ্রামের সকলের এক চিন্তা শুরু হল, বর্ষার পর সকলে একসাথে নদীতে বাধের কাজ শুরু করলো, কিন্তু তাতে কোন লাভই হল না, প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে নদীটি গ্রামের একদম নিকটে চলে আসলো।

গ্রামে যেন হাহাকার পরে গেল, কারো মনে এতটুকু পরিমাণ সুখ নেই, অনেক চেষ্টার পরও সরকারী কোন সাহায্য এলো না। এক এক করে ভাঙতে থাকলো এক এক বাড়ি। বাড়িহারা, জমিহারা মানুষের চিৎকার, হাহাকার দেখে নিরাপদ কাকা নিয়তি মেনে নেওয়ার মত ধৈয্য, সাহস ও মনোবল সবই হারিয়ে ফেলল। জীবনে আর কোন দিন আনন্দ আসবে না, নিয়তি মেনে নিলেও জীবনের এই ফাকা জায়গাটা কোনদিন পূরণ হবে না, সব নিয়তি মেনে নেওয়াতে যে আনন্দ আছে এই বিশ্বাস তার ভেঙে গেল।

সাজানো গোছানো নিজ বাড়ি, গাছপালা, নিজ গ্রাম তছনছ হয়ে একেকজন একেক দিকে চলে যাওয়া যে কতটা যন্ত্রনার তা কেবলমাত্র নদীভাঙ্গা মানুষগুলোই জানে।

সেই ছোট ছেলেমেয়েরা আজ অনেক বড়, নিরাপদ কাকার সাথে দেখা হয়না অনেক বছর। তার কথা কেউ হয়তো ভুলতে পারবে না। গ্রামটি নেই কিন্তু নদীটি এখনো রয়েছে। নিজ গ্রামকে খুজতে তারা যায় সেই নদীর পাড়ে, শুধু পানি আর পানি। মনের কোণায় শুধু একটা আফসোস, একটা বড় দীর্ঘশ্বাস।

ছবিসূত্র-গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৪০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×