somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধন্যবাদ সেনাবাহিনী, অভিনন্দন সেনাপ্রধান

৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ স্বলিখিত "শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ" বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছেন। এ বইতে তিনি তাঁর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় তুলে ধরেছেন। আমাদের কাছে প্রচন্ড কৌতুহলের বিষয় হল "ওয়ান ইলেভেন"। আর সেনাপ্রধানও তাঁর বইতে "ওয়ান ইলেভেন" নামে একটি অধ্যায় লিখেছেন যা প্রথম আলো-তে প্রকাশিত হয়েছে।

পুরো অধ্যায়টি আমি পড়লাম। লেখাটি পড়ে আমার অনেক কৌতুহলই নিবৃত হয়েছে। মনে হয়েছে, তিনি সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক যিনি তাঁর দেশকে ভালবাসেন এবং সেনাবাহিনীকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে চান। এখানে বেশ কিছু কথা আছে যা অতি সরলীকরণ বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। তবে, হ্যাঁ, তিনি যেভাবে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন, তাও ফেলে দেয়ার মত নয়।

যাই হোক, এবার আমার কিছু ব্যক্তিগত মূল্যায়ণ আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে চাই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস জন্মলগ্ন থেকেই নেতিবাচক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, মেজর জিয়াকে হত্যা, অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল, নিজেদের ইচ্ছেমত সংবিধান পরিবর্তন, বারংবার ক্যু-পাল্টা ক্যু, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি- এসব ছাড়া সেনাবাহিনীকে নিয়ে গর্ব করার মত কিছু ছিল না। কিন্তু নব্বইয়ের পর থেকে সেনাবাহিনী তার নেতিবাচক ভূমিকা থেকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান অসাধারণ। কিছুদিন আগেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সবচেয়ে বেশি সৈন্য কর্মরত ছিল। এখন অবশ্য পাকিস্তান শীর্ষে রয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

তারপরও শুনতে পাই, সেনাবাহিনী '৯৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছে যদিও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণে সে অপচেষ্টা ভেস্তে গেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত।

কিন্তু ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বাহ্যিক ভূমিকা ছিল খুবই প্রশংসাযোগ্য এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিকসুলভ। দেশ যেভাবে ক্রমান্বয়ে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, সেনাবাহিনী সেখানে অনেকটা ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। সেনাপ্রধানের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পূর্ণ সুযোগ থাকলেও তিনি সে পথ অনুসরণ করেন নি। তবে অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই সেনাপ্রধান প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নি। অবশ্যই একথার যু্ক্তি রয়েছে। তবে, এটাও সত্য যে, তারপরও সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বিচক্ষণ বলেই, ক্ষমতা গ্রহণের ফলে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তা আচঁ করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নি। সেনাবাহিনী একটি চমৎকার ভোটার তালিকা জাতিকে উপহার দিয়েছে। এবারে তাদের নির্বাচনকালীন কর্মকান্ডও ছিল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। সবচেয়ে বড় কথা হল, তারা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নির্দ্বিধায় নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।

সার্বিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, এবার সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল বেশ ইতিবাচক যা তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমি মনে করি, এজন্য সেনাবাহিনী আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ পেতে পারে। এবং অতি অবশ্যই সেনাপ্রধান খুবই প্রশংসার দাবিদার এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে সে প্রশংসা করতে এবং ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য বোধ করি না।

কিন্ত তারপরও কিছু কথা থেকে যায়, থেকে যায় কিছু প্রশ্ন। এখনো আমাদের কাছে বেশ কিছু বিষয় খুবই অস্বচ্ছ। সরকারের ভিতরে কারা দল ভাঙার জন্য নীল নকশা তৈরী করেছিল, মাইনাস টু থিওরী কাদের মাথার উর্বর মষ্তিস্কের ফসল, কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হয়রানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নতুন দল করার পিছনে কাদের প্রধান ভূমিকা ছিল, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চিন্তা কাদের মধ্যে ছিল, দুর্নীতি দমনের নামে ঢালাওভাবে রাজনীতিকদের হেয় করার প্রচেষ্টা কারা করেছিল- এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে অস্বচ্ছ। এসব ভূমিকার জন্য কিন্তু সমালোচনার তীর সেনাবাহিনীর প্রতিই তাক করা থাকবে। কারণ সবাই খুব ভাল করেই জানে যে সদ্যবিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পিছনে সেনাবাহিনী আরেকটি ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। সেনাবাহিনী বিশেষ করে সেনাপ্রধান উল্লিখিত সব প্রশ্নের স্বচ্ছ, যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দিবেন কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:০০
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×