জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি’র কিলার ভাগ্নে শহীদ
০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পরপরই জেএমবি জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠক করেন দু’জন জামায়াত নেতা। নাশকতার দায়িত্ব দেয়া হয় জেএমবির ভয়ংকর কিলার ভাগ্নে শহীদকে। ১২ জন রাজনৈতিক নেতার তালিকাও ধরিয়ে দেয়া হয় তাকে। এসব নিয়ে পরিকল্পনার মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন জেএমবির শীর্ষ নেতা ও কিলার ভাগ্নে শহীদ। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য ভাগ্নে শহীদ স্বীকার করেছেন। ফলে তাকে জামায়াত আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। ভাগ্নে শহীদকে বগুড়া থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে আনার প্রস্তুতি চলছে। ভাগ্নে শহীদ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করতে নাশকতার পরিকল্পনা করেন জামায়াত নেতারা। এরপরই তাকে ডাকা হয়। ১২ জন রাজনৈতিক নেতার একটি তালিকাও তাকে ধরিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায় তার পরিকল্পনা করছিলেন ভাগ্নে শহীদ। এর এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা ২ হাজার গ্রেনেডের বডি তৈরি করে দিয়েছেন আগে গ্রেফতার হওয়া মিজান। নাশকতার জন্যই এই গ্রেনেডগুলো বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন ভাগ্নে শহীদ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বুধবার রাতে সাইদুরের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে নিজামী ও মুজাহিদকে। প্রথমে সাইদুরকে হাজির করা হয় নিজামীর সামনে। তখন সাইদুর নিজামীর কাছে জানতে চান, ‘আপনি কোন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন’। তখন নিজামী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের। সাইদুর বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয় থেকেই তো সুদে টাকা দেয়া হয়। এর আগে আপনিই তো বলেছেন, সুদ খাওয়া আর মায়ের সঙ্গে জিনা করা সমান। তাহলে মন্ত্রী হয়ে আপনি কি করেছেন? আপনি আমাকে বলেছেন, বাংলাভাই ও শায়খ রহমান আপনার নির্দেশের বাইরে যাওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। আমিও আপনার নির্দেশের বাইরে গেলে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। কিন্তু আমি তো আপনার নির্দেশের বাইরে যাইনি তাহলে আমাকে কেন গ্রেফতার হতে হল? আপনি বলেছিলেন, গণতন্ত্র হল কুফরী। আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু বিএনপির পেছনে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করছেন। বিএনপির ঘাড়ে পাড়া দিয়ে দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করবেন।’ সাইদুর নিজামীকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘একাত্তরে যাদের হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছেন এখন তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। তারা ক্ষমা করলে তওবা পড়ে ভালো হয়ে যান। নাহলে দোজখেও আপনার জায়গা হবে না।’ জেএমবিতে এখনও ২৫ জন জামায়াতের রোকন রয়েছে বলে দাবি করেছেন মাওলানা সাইদুর রহমান।
এরপর মুজাহিদীদের মুখোমুখি করা হয় সাইদুর রহমানকে। একইভাবে সাইদুর মুজাহিদের কাছে জানতে চান আপনি কোন্ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। মুজাহিদ বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। এ সময় সাইদুর তার কাছে জানতে চান দেশের পতিতাপল্লীগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে তা আপনি জানেন? এখানে প্রতিদিন কত জিনা হয় তা আপনি জানেন? এসবের দায় থেকে তো আপনি রক্ষা পাবেন না। মুখে বলেন ইসলামী শাসনের কথা আর কাজ করেন ঠিক উল্টোটা। সাইদুর মুজাহিদকে বলেন, ‘৬৩ জেলায় একযোগে জেএমবি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। জেএমবির কি সেই সামর্থ্য আছে? জামায়াত কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে।’ সাইদুর একইভাবে মুজাহিদকে বলেন, ‘একাত্তরে যাদের হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছেন এখন তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। তারা ক্ষমা করলে তওবা পড়ে ভালো হয়ে যান।’