ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের লোকদের সাথে সমপ্রীতি বজায় রাখতে দেশের ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, রাসূল সা: মসজিদের অর্ধেক হিন্দুদের পূজার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মাধ্যমে সব ধর্মের লোকদের মধ্যে সেই ধরনের সমপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অন্য দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজল বলেন, রাসূল সা: ইহুদিদের ইবাদতের জন্য মসজিদের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই নবীর উম্মত। মসজিদের ইমাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান প্রতিনিধি ও ইফার কর্মকর্তাদের নিয়ে বায়তুল মেকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় গতকাল তারা এ কথা বলেন। তাদের বক্তব্যের পর উপসি'ত ইমামরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই বক্তব্যকে ডাহা মিথ্যা আখ্যায়িত করেন।
ইমামরা ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর কাছে তার এই বক্তব্যের সপক্ষে কুরআন-হাদিসের দলিল চাইলে প্রতিমন্ত্রী জবাব না দিয়েই দ্রুত অনুষ্ঠানস'ল ত্যাগ করেন। পরে অন্যান্য কর্মকর্তা ইমামদের শান্ত করেন। বিকালে ইফার ডিজি একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে ইমামরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা নিজ নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে কুরআন-হাদিসের দলিল জানতে চান। এ সময় সভাস'লে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ইমামরা এ কথা কুরআন-হাদিসের কোথাও নেই মর্মে বক্তব্য রাখার পর ডিজি প্রসঙ্গ পাল্টালে পরিসি'তি শান্ত হয়।
‘মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক সভা ও কর্মশালা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রকল্প ধর্মমন্ত্রণালয় ও ইউএনএফপিএ যৌথভাবে পরিচালনা করছে। অনুষ্ঠানে শতাধিক ইমাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সমপ্রদায়ের ৪৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে ২০ জন নারীও রয়েছেন।
কর্মশালার উদ্বোধন করতে গিয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ইফার ডিজির কাছে শুনলাম, রাসূল সা: মসজিদের অর্ধেক হিন্দুদের ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারা সেখানে তাদের ইবাদত করেছিল। এ সময় উপসি'ত ডিজি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়েন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব ধর্মের লোকদের সাথে সে ধরনের সমপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, রাসূলের আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। বিদায় হজের ভাষণে তাই তিনি বলে গেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ইমামদের সহযোগিতা কামনা করেন। তার এই বক্তব্যের পরই ইমামরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একে অপারের সাথে এ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। কেউ কেউ কথা বলতে চাইলেও প্রতিমন্ত্রী অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। আসরের নামাজের পর আবার সভা শুরু হলে ইফা ডিজি বক্তব্য রাখেন। ইমামরা প্রশ্ন করার আগেই একপর্যায়ে ডিজি বলেন, আমাদের নবী ইহুদিদের জন্য মসজিদের অর্ধেক ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই নবীর উম্মত। তার এই কথার পরই ইমামদের অনেকে দাঁড়িয়ে এটা কোন্ কিতাবে আছে জানতে চান। তখন ডিজি বলেন, আমি তো রেওয়ায়েত দিতে পারব না। সঠিক না হলে আপনারা বলেন। এ সময় অন্তত ১০ জন ইমাম দাঁড়িয়ে এক যোগে উচ্চস্বরে তাদের কথা বলতে থাকলে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ডিজি মাইকে বলার জন্য আহ্বান করলে কয়েকজন মাইকের দিকে এগিয়ে যান। তখন এক ইমাম বলেন, সকালে প্রতিমন্ত্রী হিন্দুধর্মের লোকদের মসজিদের অর্ধেক ছেড়ে দেয়ার যে কথা বলেছেন তা সঠিক নয়। যদি এমন কিছু হয়েও থাকে সেটা খ্রিষ্টানদের বেলায় হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।
এরপর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ইমাম মুফতি রবিউল ইসলাম বলেন, মসজিদের অর্ধেক বিধর্মীদের ছেড়ে দেয়ার কোনো বর্ণনা সিহাহ সিত্তাহসহ কোনো হাদিসের কিতাবে নেই। তবে আসহাবে সিয়ারে একটি ঘটনার বিবরণ আছে। তাতে ইয়ামেনের ৪০ জন খ্রিষ্টান নবীর কাছে আসার পর তিনি তাদের মসজিদে নববীর পাশের একটি জায়গায় থাকার ব্যবস'া করেন বলে উল্লেখ আছে। তার এই বক্তব্যকে উপসি'ত ইমামরা সমর্থন করলে ইফা ডিজি প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন, আমি জেরুসালেম গিয়েছিলাম। তখন ইহুদিরা আমাকে নামাজের ব্যবস'া করে দিয়েছিল।
মুফতি রবিউল ইসলাম পরে এই প্রতিবেদককে বলেন, আসহাবে সিয়ারে যে বর্ণনাটি এসেছে সেটিও গ্রহণযোগ্য বর্ণনা নয়। এটি একটি কাহিনী।
ইমামদের ডেকে এনে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির মতো সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক অসত্য বক্তব্যে উপসি'ত সবাই হতবাক হয়ে যান। চাঁদপুরের এক ইমাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও নারী-পুরুষের সমতার কথা বলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে বিধর্মী নারীদের এনে ইমামদের সাথে বসানো হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কিশোরগঞ্জের আরেক ইমাম বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই ইসলাম সম্পর্কে যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এটা খুবই আশঙ্কাজন।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইমামদের সামনে ব্যালে নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছিল। এ দিকে ইফা ডিজি সমপ্রতি বলেছিলেন, জিহাদ বিদায় করতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



