somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতিতে ইসলাম প্রশ্নের আবির্ভা - ফরহাদ মজহার :

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টান টান উত্তেজনা এবং আতংকের সাময়িক অবসান ঘটিয়ে হেফাজতে ইসলামের ছয় এপ্রিলের সমাবেশ শেষ হয়েছে। এই সমাবেশের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক রয়েছে।
১. এই নষ্ট শহরে যে সকল জালিম শ্রেণী এই দেশের জনগণকে শোষণ লুন্ঠন করে টিকে থাকে এবং যারা মনে করে এই দেশ শুধু তাদের, গণমানুষের পদভারে শহর প্রকম্পিত করে হেফাজতের জমায়েত বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ছাড়াও বাংলাদেশে আরও কোটি কোটি মানুষ আছে। যে যুদ্ধ এই জালিম শ্রেণী শুরু করেছে তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে এর খানিক আভাস মাত্র তারা দিয়ে গেল।
২. হেফাজতে ইসলাম শুধু ঢাকায় সমাবেশ করতে চায় নি, তারা তাদের কর্মসূচিকে বলেছে ‘লংমার্চ’। মাও জে দং-এর নেতৃত্বে চিনের নিপীড়িত লড়াকু শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গঠিত গণসৈনিকদের যুদ্ধকৌশল হিশাবে এই দীর্ঘ পদযাত্রার সঙ্গে তাদের কর্মসূচির নামকরণে মিল রাখার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছে মজলুমের যে কোন লড়াইয়ের ধরনের সঙ্গে তার লড়াইয়ের ধরণের মিল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাছাড়া তাঁরা দাবি করেছেন, দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করবার এই কৌশল কমিউনিস্টদের রণকৌশল বলা ঐতিহাসিক ভুল। কারণ, ইসলামের ইতিহাসে এই ধরনের পদযাত্রার প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।
৩. এই সমাবেশ প- করবার জন্য সরকার সব রকমের চেষ্টা করেছে। শেষ চেষ্টা ছিল সেক্টরস কমা-ার্স ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং আরও সাতাশটি সংগঠনকে মাঠে নামানো। হেফাজতে ইসলাম ‘প্রতিরোধ’ করবার জন্য হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে। ট্রেন, বাস, ফেরি, নৌকা, লঞ্চসহ সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরও লক্ষ লক্ষ মানুষের বৃহত্তম যে সমাবেশ ঢাকায় হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ঢাকায় যারা আসতে পারেন নি, তারা সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছেন। যদি তাদের হিশাব নেওয়া হয় তাহলে দেখা যায় বড়োজোর এক দশমাংশ মানুষ ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছেন। যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ মানুষ সমাবেশে আসতে পেরেছে। তাতেও যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকায় এসেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
৪. সমাবেশ আগাগোড়াই ছিল শান্তিপূর্ণ। হেফাজতে নেতৃবৃন্দ পুলিশ ও প্রশাসনকে যে কথা দিয়েছেন, সেই ওয়াদা মাফিক সময় মতো তাঁদের সমাবেশ শেষ করেছেন। এতে স্পষ্ট বোঝা গেল কর্মীদের ওপর নেতৃবৃন্দের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট শক্তিশালী। একটি শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের যাত্রা শুরু হল।
এই সমাবেশের দুই একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যের ইঙ্গিত দিয়ে শেষ করব।
এক. এ যাবতকাল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকলেও এই প্রথম বার ইসলাম নিজের প্রাধান্য নিয়ে হাজির হোল। শেখ হাসিনা ইসলামি রাজনীতিকে নির্মূল করতে গিয়ে তাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন। ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের যে আধিপত্য গত ৪২

বছর আমরা বাংলাদেশে দেখেছি, তার দুর্বলতা ও ক্ষয়ের দিকটাও এতে প্রকট হয়ে উঠল।
দুই. ইসলাম প্রশ্ন আগামী দিনে বাংলাদেশে রাজনীতির নির্ধারক হয়ে উঠবে। রাজনীতি যেভাবে গঠিত হতে থাকবে তার মধ্যে ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হয়ে নানা ভাবে হাজির হতে থাকবে। কে কিভাবে করবেন তার ওপর তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। ইসলাম প্রশ্নের সঠিক মোকাবিলা না হলে রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা বাড়বে। অন্যদিকে এর সঠিক মীমাংসা বাংলাদেশের রাজনীতির বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটাতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈপ্লবিক রূপান্তরের প্রশ্নও ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসার সঙ্গে আরও সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ল।
তিন. এই সমাবেশের তাৎপর্য হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে নয়, বরং সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রদর্শন। হেফাজতে ইসলাম সমাবেশে তাদের ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। আমরা চাই বা না চাই, ভবিষ্যতে এই দাবির পক্ষেবিপক্ষে তর্কবিতর্ক ও জনমতই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে উঠবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×