somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় - বন্ধুত্বের দিনগুলো: পর্ব ৪

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগের পর্বগুলো: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: প্রারম্ভিকা / বন্ধুত্বের দিনগুলো: পর্ব ১ / বন্ধুত্বের দিনগুলো: পর্ব ২/ বন্ধুত্বের দিনগুলো: পর্ব ৩)

এক
সঙ্গমের দ্বিতীয় সংখ্যাটা বের হলো। আগের সংখ্যার সবাই লিখলেন। তবে সাদিকের লেখা বাদ দেওয়া হলো। আমার নিজের লেখাও। আমার লেখার চেয়ে ভালো ভালো অনেক লেখা এসেছিলো। সম্পাদকীয় এবং সূচীর বিন্যাস ছাড়া আমি আর কিছুই করলাম না। পুরো কাজটাই করলো এমদাদ আর ইমদাদ। এই সংখ্যায় সুমন এবং মিল্টন লিখলো। দুজনেই কবিতা দিয়েছিলো। আগেরটার চেয়ে এ সংখ্যাটা অনেক ভালো হলো। চমৎকার লিখেছিলো জাহিদ। কবি পলাশ দত্তের কবিতার কথা আর কিইবা বলবো! এবারও তাঁর একটা দীর্ঘ কবিতা গিয়েছিলো।

বঙ্গাব্দ ১৪০৭। শুরু হতে তখনো দিনসাতেক বাকী। সিভিলের সুমনকান্তি স্টেটিসটিকের ফয়ছাল জানালো শাবি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবার নতুন বছর উৎযাপন করবে। বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বুকমেলা আর মঙ্গল শোভাযাত্রায়। সে উৎযাপন অনুষ্টান চলবে টানা দুইদিন। আমরা পরিকল্পনা করলাম মেলায় একটা বুকস্টল দেবো। অনেকদিন থেকেই পলাশ জাহিদ ওঁরা শাবিতে একটা বইমেলা করার চেষ্টা করে আসছিলো। নানা কারণে তা হয়ে উঠেনি। এবার যেহেতু একটা সুযোগ এলো তাই এটা হাতছাড়া করে লাভ নেই। বইয়ের জন্য দীন ভাইয়ের সাথে আলাপ হলো। দীন ভাই বললেন, ঠিক আছে তোমরা বইপত্রের বই নাও। বইপত্র যে দামে বই বিক্রি করে সেই দামেই। আমরা বই সিলেকশানে লেগে গেলাম। পলাশ বেশির ভাগ বই সিলেক্ট করলো। প্রচুর বই নিয়েছিলাম। শঙ্খ, জয়, ইলিয়াস, দেবেশ, মহাশ্বতা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাশার, অতীন, শ্যামল কেউ বাদ যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকদের বই নিয়েছিলাম। গল্প প্রবন্ধ কবিতা উপন্যাস। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ভালো কিছু বই বিক্রি করা। ভালো বইয়ের অন্তত এক দুজন পাঠক সৃষ্টি করা। আমি স্টল বরাদ্দের কাজটা শেষ করলাম। আমাদের বন্ধুরাই সাংস্কৃতিক জোটের নেতানেত্রী । তাঁরাই মূলত এ উৎযাপন অনুষ্টানের আয়োজক। আমাদের বুকস্টলের কথা শুনে আনন্দের সাথেই তাঁরা একাজটা করে দিলেন। পলাশ স্টলের নাম ঠিক করলো “মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়” । কবি শঙ্খ ঘোষের একটা লাইন। আমাদেরও ভালো লাগলো।

কাল ভোরেই উঠবে ১৪০৭ এর প্রথম সূর্য। সারারাত আমরা স্টল সেটআপ করলাম। একটু কাজ একটু আড্ডা। আর বেশীরভাগটুকু প্রতুলের গান আর সিগারেট করে করে। আমার ভাঙা একটা রেকর্ডার ছিলো। পলাশ সিগারেট ধরানো আর টানার কাজটা ভালোই করে যচ্ছিলো। বাগবাড়ীর এক পরিচিতজনের বাড়ী থেকে বাশ কেটে আনা হলো। পিএসএর আজীজ সারারাত আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছিলো। গাইতোও ভালো। উকিল মুন্সীর গান। লালনেরও। সবচেয়ে ভালো করতো রাধা রমন দত্তের গান। হাহাকার আর দুখে:র দরদী গলা ছিলো। উকিল মুন্সীর “আমার গায়ে যতো দুখ: সয়, বন্ধুয়ারে করো তোমার মনে যাহা সয়”-খুব দরদ দিয়ে সে এ গানটা করতো। একটা উৎসব উৎসব ভাব নিয়ে আমারা কাজ করতে থাকলাম। বেড়া দেওয়া হলো। সালাম আজীজ এমদাদ ইমদাদ বেড়া দেবার কঠিন কাজটা করেছে। নাম লেখা নিয়ে আমি ব্যস্ত। নামটাই নাকি স্টলের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেবে। তাই সুন্দর করে লিখতে হবে। পাতাসহ নারিকেল ডাল কেটে আনা হলো। তার উপর লিখতে হবে। মহা হাঙ্গামার কাজ। অনেক সাধণার পর শেষ হলো। বড়ো বড়ো সাদা অক্ষরে লেখা হলো “মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়”।

বরাবরের মতো সকাল থেকেই প্রাণের টানে,নতুনের আবাহনে বর্ষ বরণের উৎসবে সবাই মেতে উঠেছে। শিকড়, থিয়েটার সাস্ট, ডিবেটিং ক্লাব, অহণা পর্যদ একে একে নিজেদের ইভেন্ট পরিবেশন করে যাচ্ছে। অতি পরিচিত ক্যাম্পাস আমার কাছে কেমন জানি অপরিচিত ঠেকতে থাকলো। বাসন্তি রঙে ছেয়ে গিয়েছিলো সারা ক্যাম্পাস। পাঞ্জাবী পড়া শতশত ছেলে। কেমন জানি অপরিচিত হয়ে উঠেছিলো। অতি পরিচিত মুখগুলো। অতি পরিচিত মেয়েদেরকেও। পড়নে বাসন্তি রঙের শাড়ি, মাথায় বেলী ফুলের মালা। কপালে লালাটকটকে টিপ। ভয়াবহ যুবতী হয়ে উঠেছিলো একেকজন। সবাইকে অপরিচিত মনে হচ্ছে । এদের কাউকেই যেন আমি চিনি না, কখনো ক্যাম্পাসে দেখিনি। কখনোই না। এদেরকে কাধে বইয়ের ঝোলা মুখে ক্লাস-এসাইনমেন্টের পরিশ্রমের ক্লান্তি-টেনশান নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘূরতে দেখেছি। কিন্তু আজ সবাই যেন কেমন, আমার চেনা গন্ডির বাইরের কেউ।

বিকেলের দিকে লক্ষ্য করলাম অনবরত মানুষ শাবির দিকে আসছে। ভীড় বাড়তে থাকলো। ইমদাদ এমদাদ এবং সালামকে স্টলে বসিয়ে একটু বেরুলাম। শাবির এককিলোমিটারের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। এতো মানুষ! এতো শিশু কিশোর পৌঢ় যুবক যুবতী। প্রেমিক প্রেমিকা। বাবা মা। ভাই বোন। সবাই আসছে। ক্যাম্পাসের পথ যেন আনন্দে নেচে উঠেছে। এর আগে সিলেটের কোন মেলায় এতো প্রাণের সম্মিলন আমি দেখিনি। কেন্টিনের দিকে গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। সোসিওলজির শিলু ও ইকোর সারিকাকে দেখলাম হলদে শাড়ীতে অপূর্বরকম সুন্দরী হয়ে হিমুদা সুশান্ত পলক অভিদের সাথে আড্ডা মারছে।

স্টলের দিকে পা পা করে এগুচ্ছি। মুগ্ধ হয়ে এতো প্রাণের নাচন দেখছি। কানে ভাসছে রবীন্দ্রনাথ, কবিতা। তরু আবুল হাসানের একটা কবিতা পড়ছে। অসম্ভব ভালো লাগা নিয়ে সামানে এগুচ্ছি।
স্লামালাইকুম স্যার।
আমি চমকে উঠলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি এক ঝাঁক তরুনী। বাসন্তি রঙে রাঙানো। আমার কোচিং এর ছাত্রী। প্রাণের উচ্ছ্বাসে কলকল । ঝলমল। আমি আবার বোধবুদ্ধি হারালাম। লাইব্রেরীর সামনে ইমদাদ এমদাদের ক্লাসমেট মুক্তাকে দেখলাম কার সাথে যেন চুটিয়ে কলকল করে যাচ্ছে। অতিজানা এমেয়েটিকেও কেমন জানি অনেক অজানা মনে হচ্ছে।

এমদাদ দ্রুতপায়ে এদিকে আসছে। বুঝলাম প্রচন্ডরকম মেজাজ খারাপ।
কি হইছে?
আরে দেখেনতো, ফাজলামির একটা সীমা আছে, শালার বেটা আমাদের স্টলে এসে মওদূদীর বই খোঁজে।
রাগে ওর শরীর কাঁপছিলো।
আরে মিয়া কুল ডাউন। এতো উত্তেজিত হয়ে গ্যালা ক্যান? কি হইছে আমাকে পরিস্কার করে বলো।
আমাদের স্টলে এক লোক এসে মাওলানা মওদূদীর বই খোঁজছে। জামাতে ইসলামীর বড়োআব্বার লেখা বই। স্পেসিফিক কিছু আদর্শের বই। এমদাদরা ওকে বুঝিয়ে বলেছে যে এই স্টলে এই সব বিক্রি হয় না। লোকটি নাকি এর পরেও কোথায় পাওয়া যাবে, কেন আপনারা বিক্রি করেন না, এইগুলো তো ভালো বই-এই সব বলেছিলো। এর পরেও এমদাদরা বলেছে যে আপনি জিন্দাবাজারের কোন ব্যাবসায়ী বইয়ের দোকানে খোঁজ করুন সেখানে পেতে পারেন। এতেও নাকি ঐ লোক টেপরেকর্ডারের মতো বলেই যাচ্ছিলো কোথায় পাওয়া যাবে, কেন আপনারা বিক্রি করেন না। লোকটির উদ্দেশ্য বুঝে এমদাদরা ক্ষেপে গেলো। প্রায় গলাধাক্কা দিয়ে লোকটিকে বের করে দিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে স্টল থেকে বের হয়ে এদিকে এসেছে।

সন্ধ্যার মুখে পশ্চিমাকাশ কালো হয়ে উঠলো। ঝড়-বৃষ্টির একটা সম্ভাবনার কথা আমারা ভাবছিলাম। লোকজন কিছুটা কমে এসেছিলো। আচমকা ধমকা হাওয়া আর বৃষ্টি নেমে এলো। আমরা দ্রুত সব বই ট্রাঙ্কে নিতে থাকলাম। পলাশ কোথা থেকে হুড়মুড়িয়ে এসে বইয়ের উপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো । এক ফোঁটা পানিও বইয়ের উপর পড়তে দেবে না। যে কয়ফোঁটা পানি বইয়ের উপর পড়লো তার বুকেও যেন ততগুলো আগুণের ছেঁকা লাগলো। সে হাহাকার আর চিৎকার করে উঠেছিলো প্রতিবার। ইমদাদ অনবরত এটা আগে তোল, এটা তোল সেটা তোল করছে আর ট্রাঙ্কে বই নিচ্ছে। আমরা সবাই ভিজে একাকার। পলাশ-ইমদাদ বইভর্তি ট্রাঙ্ক নিয়ে লাইব্রেরী ভবণের নীচতলায় রেখে আবার দৌড়ে আসছে দ্বিতীয় ট্রাঙ্ক নিতে। দ্বিতীয়টা রেখে আবার আসছে তৃতীয়টার জন্য।

কাক ভেজা সবাই। লাইব্রেরী ভবণের সিঁড়িতে বসে আছি। একের পর এক গোল্ডলীপ সাবার করে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে ঝড়ের তান্ডাব চলছে।


দুই
মনটা কয়দিন থেকেই ভীষন খারাপ। আর কতোদিন ক্লাস-বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এইভাবে বসে থাকবো? টানা ৬ মাস। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে। নামকরণ আন্দোলন ক্রমে ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ একের পর এক সিন্ডিকেট-মিটিং করেই যাচ্ছেন। কোনো সূরাহা হচ্ছে না। জাফর ইকবাল স্যার নামকরণ করেই ছাড়বেন। ইতিমধ্যে নামকরণের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন তাঁরা ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং করছে। স্বারকলিপি দিচ্ছে। সুশান্তর সাথে এক সকালে ক্যাম্পাসে দেখা। বলল, কই থাকো দুস্ত তোমারতো টিকিটাও দেখা যায় না। লেখালেখি করে আর কি হবে? ঐ শালা রাজাকারদের ডান্ডা দিয়ে সাইজ করতে হবে। আর বসে থাকা যায় না। বসে বসে এইভাবে ওদের সঙ দেখার কোনো মানে নেই। আজ রাজাকারদের মাথায় পানি ঢালা হবে। ওদের মাথা গরম হয়ে গেছে। দুপুরে মিছিল হবে। সবাইকে বলছি। আশা করি সবাই থকবে। তুমিও থেকো।

একদিকে মৌলবাদী এবং তাদের বাচ্চারা। তাদের সাথে আছে বিএনপি। আছে কিছু লোকাল লোকজনও। লোকালদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে আনা হয়েছে। চিলে কান নিয়েছে টাইপ বুঝানো আর কি! এতেই মাথামোটা টাইপের কিছু মানুষ রাজাকারদের পিছ নিয়েছে। রাজাকারেরা দৌড়ছে ওরাও দৌড়ছে। কেন দৌড়ছে তারা জানে না। অন্যদিকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। প্রগতিশীল মানুষ। সাংবাদিক, সাহিত্যক, লেখক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্র ইউনিয়ন। জাতীয় ছাত্র সমাজ। দেশপ্রেমি মানুষমাত্রই চাচ্ছেন শহীদ জননীর নামে বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবণের নামকরণ হোক। এই দুইদলের ঘষাঘষিতে সাধারণ ছাত্রদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা! সুশান্তকে পলককে অভিকে জিঞ্জেস করলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবো বলতে পারো? বলল, সেই জন্যেইতো ছাত্রলীগ আজ রাস্তায় দুস্ত। আমরা ঐ শালাদের ক্যাম্পাস থেকে আগে বের করবো। তোমরা আমাদের সাথে থেকো।

কেন্টিনে বসে আছি। ইমদাদ এমদাদ আসেনি। পলাশ এখন ঢাকায়। সে নিজে একটা কাগজ বের করে। কবিতার কাগজ। সম্ভবত সেটা নিয়ে ব্যস্ত। মনটা সত্যি খারাপ। কেন্টিনের বয় সাদ্দামকে এককাপ চা দিতে বলেছিলাম। তারো দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। খেয়াল করলাম বিএনপির জেলা ছাত্রদলের কিছু অছাত্র কেন্টিনে ডুকেছে। একের পর এক চা সিঙাড়া সিগারেট অর্ডার করছে। বুঝলাম সাদ্দামের উপর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সময়মতো না পেলেইতো থাপ্পর পড়বে। কি আর করবে বেচারা? আমাকে পরে দিলেওতো চলবে, আমি তো তাকে থাপ্পর মারতে যাবো না।

কেন্টিনের বড়ো বেঞ্চটায় শুয়ে আছি। সারা ক্যাম্পাস চোখের সামনে। মনভরে দেখছি। আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাস। (শুনেছি কেন্টিনটা নাকি সেখানে আর নেই, ছাত্রদলের এক কেডার গ্রুপিং এর শিকার হয়ে তারই স্বদলের অন্য কেডার দ্বারা খুন হবার পর পরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা সেখান থেকে তুলে দিয়েছেন)। আমাদের প্রিয় সেই বেঞ্চ। কতো গান কতো স্মৃতি সেই বেঞ্চের চারধারে। গোলহয়ে। কতো অঞ্জন কতো নচি কতো সুমন। আরো কতো কতো গান হতো। হিমুদার সেই গলা, সেই গান। বাবু ভাইর গিটার। এখনো কানে বাজে “লাশকাটা ঘরে যদি ছেঁড়া হয় তারবুক সঙ্গোপনে, দেখবে সেখানে রাখা বিমূর্ত একমুটো স্বপ্ন যতনে” । “ও রাই জাগো গো”। সেই হিমুদ। সেই বাবু ভাই।

একটা ছোট মিছিল এদিকে আসছে। মৌলবাদী বাচ্চাদের মিছিল। স্লোগান শুনে বুঝা যাচ্ছে নামকরণের বিপক্ষে। জাহানারা ইমামকে মুরতাদ বলছে। মেজাজটা সপ্তমে ছড়ে গেলো। কেন্টিন থেকে বেরুলাম। হাটতে থাকলাম লাইব্রেরীর দিকে। সেখানে যাবার পর দেখলাম কেন্টিনে বসে থাকা বহিরাগত অছাত্ররাও মৌলবাদী বাচ্চাদের সাথে যোগ হয়েছে। মিছিলের লাইনটা কিছুটা বড়ো হয়েছে। শ্লোগানের অশ্লিলতাও বেড়েছে। মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো। একের পর এক সিগারেট টানছি আর মৌলবাদীদের দৌড় দেখছি। দেখলাম শিকড়ের নিজস্ব বোর্ডে রাজাকারেরা নামকরণের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগিয়েছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। হঠাৎ দেখলাম সুশান্তরা মিছিল করে এদিকে আসছে। অনেক বড়ো মিছিল। রাজাকারদের তুলোধুনো করে পলাশ (সে আমাদের কবিবন্ধু কবি পলাশ দত্ত নয়, শাকসু নেতা ফখরউদ্দিন আলী আহমদ পলাশ ) শ্লোগান দিচ্ছে। কিছু সাধারণ ছেলেমেয়েও আছে মিছিলের পেছনে। প্রায় ভুতে পাবার মতো আমিও মিছিলের পেছনে পেছনে হাটতে থাকলাম।

হুমায়ুন আহমদ স্বপরিবারে শাবিতে আসবেন, দিনব্যাপি অনশন করবেন। উনার সাথে আসাদুজ্জামান নূর সাহেবেও ছিলেন। নামকরণের পক্ষে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্জকম স্বাভাবিক করে দেবার দাবীতে উনার সাথে যোগ হয়েছিলেন সিলেট এবং দেশের প্রথিতযশা অনেক মানুষ। অনেকের মতো আমিও সকালে ক্যাম্পাসের দিকে বেরুলাম। দেখি হুমায়ুন আহমদ কি বলেন। বিডিআর ক্যাম্পের সামনে যেতেই কয়েকটা অচেনা ছেলে আমার রিকশাকে থামিয়ে দিলো।
আপনি বিশ্ববিদ্যালয় গেটে যেতে পারবেন না।
আমিতো অবাক। কেন পারবো না?
আমরা বললাম তাই পারবেন না।
দেখুন, আপনারা হয়তো কোথাও ভুল করছেন। আমি এমন কেউ না যে আমাকে আপনারা থামাবেন। আর তাছড়া দেখুন শত শত মানুষ যাচ্ছেন। উনাদের না আটকিয়ে শুধু শুধু আমাকে কেন আটকাবেন?
সাথে সাথে, কিছু বুঝে উঠার আগেই, আমরা মাথায় গায়ে জামায় পঁচা ডিম পঁচা পানির একটা ঝটকা বয়ে গেলো। পলিথিনে করে নিয়ে এসেছিলো। আমি রাগে দু:খে ঘৃণায় ফুঁসতে থাকলাম। চোখে সব ঝাপসা হয়ে এসেছিলো। সারা শরীর কাঁপছিলো। প্রায় পাগলের মতো চিৎকার করে উঠেছিলাম। কুত্তারবাচ্চা রাজাকারের বাচ্চারা, আয় এবার আয়। অনবরত চিৎকার করে যাচ্ছিলাম। কোন রাজাকারের বাচ্চাকে পাশে পাইনি। ক্যাম্পাসগামী মানুযেরা আমাকে রিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয় গেটে নিয়ে এলেন। স্বাভাবিক হবার পর দেখলাম আহমেদ নূর (প্রথম আলোর প্রতিনিধি) এবং আসাদ্দুজামান নূর সাহেবরা আমাকে নানারকম প্রশ্ন করে চলেছেন।

জহিরুল সিদ্দিকী (শামিম)
৭ই ডিসেম্ভর ২০০৮
মনাশ ইউনির (মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া) রসায়ন বিভাগে ইলেকট্টোকেমেস্ট্রিতে গবেষণারত।
(পরের পর্ব: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় - নামকরণ ও গ্রেড আন্দোলন )
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×