somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এটা কি নতুন শুনলেন?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশ থেকে এ জাবৎ নয় লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কিছুদিন আগে স্বীকার করেছেন যে এজাবৎ ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থা Money Laundering - Financial Action Task Force (FATF) বছরখানেক আগের রিপোর্টে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মত পাচার হয়েছে বলা হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে।

টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে এটা কি নতুন শুনলেন?
স্মাগলার, ঘুশখোর, ব্যাঙ্কলোন নিয়ে ফেরত না দিয়ে, জমি দখলদার মাস্তান। এদের কালো টাকা। ধরা না পরলে কালোটাকার মালিকরা টাকা দিয়ে কি করবে? টাকার কব্বর বানিয়ে পুজো দিবে? নাকি নিরাপদ যাগায় রাখবে। যাদের বিদেশে একটা অবস্থান আছে বিদেশে পাঠাবে।

দেশে কি কালো টাকা নেই?
দেশে এমন সুদিন এখনো আসেনি যে অবৈধ টাকা থাকবে না, কালো টাকা থাকবে না।
তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে একটা সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সেই সুবিধা নিয়েছিলেন অনেক অবৈধ টাকার মালিক।
তৎকালিন অর্থমন্ত্রী সাইফুর, খালেদা জিয়া, হাসিনার দলের অনেক ব্যাবসায়ী নেতা কালো টাকা সাদা করেছেন।
অর্থাৎ রাজনিতিকদের, রাজনিতিক ব্যাবসায়ী ও দুর্নিতিবাজ আমলাদের কালটাকা থাকে। এটাই সত্য।

এরপর আছে মৌলবাদিদের ফান্ডিং, জঙ্গি ফান্ডিং, ভারতীয় জামাতিদের জন্য ফান্ডিং ভায়া মমতা দিদির জন্য ফাইনান্সিং তো রেগুলার চলছে, আইএসআই, উলফাদের অস্ত্র কিনতে ফান্ডিং ভায়া বাংলাদেশ। অনেক আগে থেকেই তো চলে আসছে, চলছে।

এখন আসেন যারা ভদ্র, বৈধ টাকার মালিক।
বাংলাদেশ থেকে বৈধ টাকা বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ব্যাংকিং চ্যানেল নেই কোন আইন নাই।
অবৈধ টাকাও বিদেশে পাঠানোর কোন ব্যাংকিং চ্যানেল নেই উপায় নেই।
সুধু আমদানি করতে এলসির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক টু ব্যাঙ্ক বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো যায়।

আপনি বিদেশ থেকে যত ইচ্ছা ডলার আনতে পারেন, বেশী পরিমান হলে কাষ্টমসকে ও ইমিগ্রাশনকে একটু জানাতে হয়। কেউ গুনেও দেখবে না। পকেটে করে আনেন, ব্যাঙ্কিং চ্যানেলে আনেন, ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়নে .. ইত্যাদি যে ভাবেই হোক।
এয়ারপোর্ট বা ব্যাঙ্কে ডলারের সুত্র বৈধ না অবৈধ, কেউ কোন প্রশ্ন করবে না।

কিন্তু বৈধ ভাবে আপনি ৫ ডলার দামের একটি বই, বা ১ ডলার দামের কোন পন্যের দামও পাঠাতে পারবেন না।
ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়নের বা যে কোন মাধ্যমে ১ ডলারও স্বজনদের বা বন্ধুদের গিফট পাঠাতে পারবেন না।
সুধুমাত্র বৈধ ভিসা ও কনফার্ম টিকেট থাকলে হাতখরচ হিসেবে অল্প কিছু ডলার/ইউরো, তাও পাসপোর্টে ব্যাঙ্ক মারফত এন্ডোর্স করে নিতে হবে।

অন্য সব দেশে এত কঠিন নিয়ম নেই, সুধু বাংলাদেশেই এই নিয়ম।

দ্রুত বাড়ন্ত উদিয়মান অর্থনীতির দেশেটির বাইরে দেড় কোটি প্রবাসী, বাড়ী গাড়ী কিনে স্থায়ী। লেনদেন কি হবে না?

হচ্ছে তো চোখের সামনেই।
আমার নিকটাত্নিয়, স্থায়ী আমেরিকা প্রবাসী। ঢাকার বাড়ী বিক্রি করলেন ৮ কোটি টাকায়। শর্ত ছিল টাকার একটি অংশ পেমেন্ট হবে আমেরিকায়ই।
মনিটরদের দৃষ্টিতে ইহা নিশ্চিতই পাচার। কিন্তু কিছু বললে বলবে - "আমার টা আমি নিছি, টাকা কি তর বাপের"?

ব্যাবসায়ীরা কি সব পেমেন্ট এলসি বাদে অন্যভাবে পে করবে না?

ব্রীফকেস ব্যাবসায়ীদের কথা বাদ দিলাম।
বার্মার সাথে মাছ, পিয়াজ-রসুন আমদানি বেশিরভাগই নন ব্যাঙ্কিং চ্যানেল। বাট বৈধ ব্যাবসা। কিন্তু আন্তর্জাতিক মনিটরদের কাছে এটা পাচার হিসেবেই গন্য হবে। হচ্ছে।

বড় গার্মেন্টস কাঁচামাল ইমপোর্টের ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং রফতানির সময় আন্ডার ইনভয়েসিং
আপনি বিদেশ থেকে ১০০ কোটি টাকার জিনিস কিনবেন বলে ইনভয়েস করলেন। আসলে আপনি কিনলেন ২০ কোটি টাকার জিনিস।
কারন আপনার জরুরি ৮০ কোটি টাকা বাইরে দরকার, নিজস্য চ্যানেলে চাইনিজ মোবাইলের লট আনবেন।
আপনারই টাকা, কিন্তু এই ৮০ কোটি টাকা পাচার হসেবে গন্য হলো।

বৈধ ব্যাবস্থা না থাকলে মানুষ বিকল্প খুজবেই।
আরো ব্যাবস্থা আছে।
গার্মেন্টস বা অন্যান্ন এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে মেলা সুযোগ আন্ডার ইনভয়েসিং:
শশুর আমেরিকায়। টাকা দরকার বাড়ি কেনার ডাউনপেমেন্ট দিবে
আপনার ৫০ লাখ টাকার জিনিস রপ্তানি করার কথা। কিন্তু আপনি নয়ছয় করে ২০ লাখ টাকার ইনভয়েস দেখালেন। আর মাল পাঠালেন ৫০ লাখ টাকার। দেশ থেকে মাল গেল ৫০ লাখ টাকার। দেশে ঢুকলো ২০ লাখ টাকা। বিদেশে থেকে গেল কত? মাত্র ৩০ লাখ টাকা। আপনারই বৈধ ডলার শশুরকে ধার দিলেন। আপনারই বৈধ ডলার, কিন্তু পাচার হিসেবে গন্য।

এর উলটোটাও আছে।
আপনি বিদেশ থেকে মাল কিনলেন। দেশের একাউন্টে টাকা কম, তাই বিদেশে পেমেন্ট করলেন বিদেশ সোর্স থেকে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হলো না, কিন্তু মাল আসলো টাকা আপনার মালও আপনার। দেশের লাভ। তবু আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং মনিটরদের কাছে এটা পাচার।

আবার দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করে বিদেশে মাল পাঠিয়ে দিলেন। হুন্ডির মাধ্যমে আপনি ডলারের বদলে টাকা পেলেন পরিশোধিত টাকার অংক রাষ্ট্র জানে না। এটা অবস্য বৈধ ভাবেই আনা যেত, তবে ডলারের রেট একটু কম পাওয়া যেত। অল্পকিছু বেশি টাকার আসায় কাজটা করলেন।
কাজটা এমনভাবে করলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক আপনার কিছুই টের পেল না। কামের কাম কী হলো? দেশে রেমিট্যান্স ঢুকলো না। কিন্তু দেশি টাকায় (হুন্ডি) পরিশোধ হলো।

২০/৩০ লাখ স্টুডেন্ট দেশের বাইরে পড়ালেখা করে। ১ দেড় কোটি বাংলাদেশী দেশের বাইরে থাকে, অনেকেরই বাড়িগাড়ী আছে।
তারা কি করবে? কিভাবে তাদের বৈধ টাকা বিদেশে নিবে? বিশাল অংকের টিউশন ফি কে দেবে?

যেহেতু বাংলাদেশ থেকে বৈধ টাকা বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কোন আইন নেই। তাই সবাই ভিন্ন চ্যানেলে (হুন্ডি), নিজস্য লোকদের চ্যানেলে ডলার পাঠাচ্ছে।
নৈতিক ভাবে এসব বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো বৈধ হলেও আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং মনিটরদের চোখে ইহা সবটাই 'টাকা পাচার' হিসেবে গন্য হচ্ছে।
পাসপোর্টে এন্ডোর্স করা ডলার/ইউরো বাদে পাঠানো সব ডলারই অবৈধ পাচার হিসেবে গন্য হচ্ছে।
তাই পাচারকৃত টাকার অংক বিশাল।

পাচার প্রাপ্ত ইউওরোপ আমেরিকার মত তথাকথিত উন্নত দেশগুলো চাইলেই বড় অংকের পাচার সম্পুর্ন বন্ধ করা সম্ভব।
উন্নত দেশগুলোতে নিজ দেশে কঠিন মানি লন্ডারিং আইনের কারনে ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অভ্যন্তরিন হস্তান্তর অসম্ভব।
কিন্তু অজ্ঞাত কারনে বিদেশথেকে আগত ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে আগত টাকার ব্যাপারে ওনাদের আইন একচক্ষু বন্ধ।

দেশে টাকা রেমিটেন্স আসার আইন আছে, পাঠানোর আইন নেই। তাই যাই পাঠাবেন সবই পাচার হিসেবে গন্য আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং তদারকি সংস্থার চোখে।

তাই এত উতলা না হয়ে আপনি পারলে ঘুষখোর স্মাগলার হুন্ডি ব্যাবসায়ীদের ধরিয়ে দিন, জঙ্গি ফান্ডিং দাতা চিহ্নিত করুন। অবৈধ টাকার মালিকদের চিহ্নিত করুন। দুদকের চ্যানেলে, ৯৯৯ ফোনে, কাউন্টার টেররিজম এপের মাধ্যমে বা যে কোন মাধ্যমে জানান।

অযথা "হায় আল্লা কোন দেশে আছি! দেশের সব টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, দেশের সব শেষ হয়ে গেল! .. .. আমাদের কি হবে? হায় আল্লাহ" বলে চ্যাঁচালে কোন লাভ হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩১
১৮টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×