মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দাবি অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০২০ সালের আগষ্ট পর্যন্ত ৬০৪ জন গুম বলা হচ্ছে।
যদিও এর ভেতর অনেককেই তত্তাবধায়ক আমলেই ক্রসফায়ার বা ক্রসফায়ার করে লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। বা ক্রসফায়ারের ভয়ে দেশত্যাগ করেছিল এর দায় বর্তমান সরকারের উপর চাপিয়ে দেয়া।
প্রতি বছর গুম দিবসে কিছু নারী শিশুকে নিয়ে আসা হয়, চোখের পানি ফেলা হয়।
বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুসারে গুমের ঢালাও অভিযোগগুলো দেখলাম বেশীরভাগই গুম হয় নি। ফিরে এসেছিল।
ফিরে আসলে সেটা আবার গুম হয় কিভাবে?
গুম কাকে বলে?
কাউকে ধরে নিয়ে মেরেফেলে লাশ লুকিয়ে ফেললে সেটাকে গুম বলা যায়।
যেমন চিলি মেক্সিকো গুয়েতেমালা কলাম্বিয়াতে বহু অর্গানাইজড ড্রাগ ডিলার, আর্মড রিবেল ও সন্ত্রাসি ডাকাতদের বিরুদ্ধে অভিযানে ধরে নিয়ে মেরেফেলে লাশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছি. একটা হাড্ডিও খুজে পাওয়া যায় নি হাজার খানেক লোকের। সেসব হল গুম।
নিখোজের মাত্র ৩ দিন পর প্রথমে পুলিশের কাছে, এরপর জামিন। ফিরে আসা জাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা শাকিল উজ্জামান। উনি মুক্ত, ইউটিউব করে বেড়াচ্ছেন, উনি এখনো গুমের তালিকায়, প্রতিবছর ওনার ছবি নিয়ে কাঁদাকাটিও চলে।
যারা কথিত গুম হয়েছিলেন কিছুদিন পরই সুস্থভাবে ফেরত এসেছেন ৫৭ জন,
আর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল ৯৭ জন, জামিনও হয়ে যায় দ্রুত। অর্থাৎ আছে, গুম হয় নি।
আর কিছু নিখোজ অনেকেই পাওনাদারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে ফিরেও এসেছিল। সেটা পত্রিকায়ও এসেছিল।
একসময় দন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদেরকেও গুম বলা হচ্ছিল।
গতকাল জুলহাস হত্যা রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বর্খাস্ত মেজর জিয়া ২০১২ তে যখন জঙ্গিদলে যোগ দিতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালায়,
তখন খালেদা জিয়া এই জঙ্গি মেজর জিয়ার সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। জিয়ার পলায়ন কে "গুম করা হয়েছে" বলেন। মেজর জিয়া ছিল প্রথমে হিজবুত তাহেরি, পরে নিউ জেএমবি, এরপর আনসারুল, এরপর ব্লগার হত্যা ও বিদেশী হত্যার পর ব্যাপক ভাবে 'আইএস' দাবী
তিনি এক ভাষনে বলেছিলেন সেনাবাহিনী থেকে অফিসার গুম করা হচ্ছে। একটি ইমেইল দেখিয়ে মেজর জিয়া ইমেইল বার্তায় বলেছিলেন, “তাকে সাভার রেখে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অপহরণ করেছে। তাকে চোখ বেঁধে অজানা স্থানে নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিদেশি র গোয়েন্দা সংস্থা র সদস্যরাও সেখানে ছিল। (রর হাতে গ্রেফতার অবস্থায় মেইল করা যায়?)
বিএনপি জামাত যে জঙ্গি লালন-পালন করে এটিই তার স্পষ্ট প্রমান।
তবে সরকার কিছুই করে নি, আইনশৃক্ষলা বাহিনী ধোয়া তুলসি পাতা, এমন কোন দাবি আমি করছি না।
২০১৩-১৬ বছরটা ছিল বিদেশী হত্যা ব্লগার হত্যা ও হলিআর্টিজান গণহত্যার বছর।
২০১২ থকে ২০১৬ পর্যন্ত নব্য জেএমবি, আনসারুন্না সিরিয়াতে আইএস যেহাদে যোগ দিতে গিয়েছিল ৩০০০ এর মত বাংলাদেশী যুবক,
সিরিয়া গামি অনেক যুবক ও তরুন মহিলাও নিখোজ ছিল, ব্রিটিষ/বাংলাদেশী শামীমাকে নিয়ে অনেক উচ্ছাস ছিল। বাংলাদেশ সহ অনেকে দেশে থেকে জঙ্গিপনা করতে পলাতক বা তুর্কি ভিসা নিয়ে বা ইস্তাম্বুলে ট্রাঞ্জিট ভিসা নিয়ে, তুরষ্কে। খুব কাছেই সিরিয়া সীমান্ত।
এরা ইস্তামবুল সিরিয়ার উদ্দেস্যে বিমানে উঠার পর বিতর্ক এড়ানোর জন্য কিছু পরিবার থেকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে গুম করা হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছিল।
২০১৩-১৪ যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের ব্যাপক সহিংসতা সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অতি কঠোর অবস্থানে যেতে বলা হয়েছিল। তখন বেপরোয়া না হয়ে উপায়ও ছিলনা
২০১৬ জুলাই হলিআর্টিজান বিদেশী হত্যার পর সরকার আরো কঠোর অবস্থানে যায় সেই সময়ে কঠিন ভাবে জঙ্গি ক্রাকডাউন করে ব্যাবস্থা নিয়ে জঙ্গি হামলা শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসে। তখন অনেক পিতামাতা নিখোজ পুত্রকে পলাতক বা গুম থেকে ডেকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছিল। পত্রিকায় দেখা যাচ্ছিল।
সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে লাদেন বা আইএস জঙ্গিদের মত ভিডিও বার্তা দেয়া, আগুন সন্ত্রাস হুমকি দেয়া সালাউদ্দিনকেও গুম তালিকায় রেখেছে আসক।
সালাউদ্দিন তো পলাতক গুমই ছিল, প্রতিদিন অজ্ঞাত স্থান থেকে (বিদেশ থেকেও হতে পারে) অবরোধ হরতালের অগ্নিসন্ত্রাস ঘোষনা দিত। পরে সব অগ্নিসন্ত্রাস ভেস্তে গিয়ে ঢাকা অনেকটা শান্ত হয়ে গেলে, বিএনপি নেতা মেজর সমসের মবিন চৌ রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা করল।
হটাত একদিন ভিডিও বার্তায় সালাউদ্দিন নিজেকে নিখোজ (গুম) ঘোষনা করে, বিএনপির তরফ থেকেও বলা হয়েছিল পুলিশ সালাউদ্দিন গুম করেছে। যে বহু আগে থেকে গা ঢাকা দিয়ে ভিডিও বার্তা মিডিয়ার অফিসে পাঠাচ্ছিল, তাকে পুলিশ গুম করে কেমনে?
আসলে উনি সিলেট সীমান্তে উলফা ও মেঘালয়ে থাকা শশুরবাড়ীর সহায়তায় শিলং শহরে পুলিশের কাছে আত্নসমর্পন করে, মিডিয়াকে বলে আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম জ্ঞ্যান ফিরে দেখি এখানে এসে গেছি। আর কিছু মনে নেই। (সরকার তো গাধা নিরাপদে শিলং শহরে পৌছে দিয়ে মিডিয়ার কাছে যা ইচ্ছে তা বলতে দিবে।)
এক শিবির নেতা পালিয়েছিল, গুম বলা হচ্ছিল। শাকা চৌ পুত্র হুকাও ৩ মাস গা ঢাকা দিয়ে গুমের গুজব ছড়িয়ে ছিল। পরে গোপনে ফিরে আসলেও এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি।
আলোচিত ফরহাদ মাজহার তার নারীসংগির সাথে কয়েক দিন নিরাপদ জাপন করতে গফুর নামে বাসে টিকেট কেটে বাসে উঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমি একটি কালো মাইক্রবাসে, 'আমাকে এইমাত্র মাইক্রোবাসে চোখ বেধে নিয়ে যাচ্ছে' আমি গুম হয়ে গেছি!
সারা বাংলাদেশ সহ বিশ্ব মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেছিল।
ওনার নারী নিয়ে রাতযাপন হল। রাষ্ট্রকে, শেখ হাসিনাকেও একহাত দেখে নেয়া হলো।
ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে জনৈক পিনাকীভট্ট ফ্রান্সগামি বিমানে উঠে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো 'আমি এইমাত্র আমার অফিস থেকে পুলিশ ডাকছে ধরে নিয়ে গেল, এরপর সোশাল মিডিয়ায় লাগাতার ৬ মাস গুমের গুজব।
কিন্তু এরপর ৬ মাস পর আবার নির্লজ্জের মত ফ্রান্সে উদয়।
একই ঘটনা বহুল আলোচিত ত্বহা গুম। গুম না বলে ঘুম বলাই ভাল। ৩য় বউয়ের খপ্পর থেকে বাচতে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে রংপুরে। গাইবান্ধা থেকে ঢাকার স্ত্রীকে বললেন আমি গাবতলি এসে গেছি! এক বন্ধু নিজের বাসায় বাজার করে খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা করে ৪ জনকে বাসায় রেখে, শহরে গুমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিল।
গোপন ইনফরমারের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশের হাতে ত্বহা ধরা পরার পর তিনি বলেন মা এদের ৪ জনকে আশ্রয় দিয়েছে, আমাকে জানায় নি। মা বলেছিলেন ওরা আগেও আসতো। উলংগ মিথ্যাচারের জন্য লোকটি ফোন কম্পানির চাকুরিও হারিয়েছিল।
এদিকে তথাকথিত ত্বহা গুম নিয়ে ১সপ্তাহ হিউমেন রাইট ওয়াচ ও এমনিষ্টি সরকারকে নিন্দার ঝড় মুন্ডুপাত চালিয়ে গেছে, আর দেশের মানুষের ঘুম নষ্ট। ইচ্ছেকৃত পলাতক ত্বোহা ৪ অনুসারি নিয়ে ধরা খাওয়ার পরও আসক এখনো তাকে তালিকায় রেখেছে,
হিউমেন রাইট ওয়াচ ও এমনিষ্টিও এদের (ফরহাদমাজহার, পিনাকি ত্বহা, সালাউদ্দিনকে) গুমের তালিকায় রেখেছে।
আর ফিরে আসাদের বোবায় ধরলেও দোষ।
সিরিয়া থেকে পরাজিত হয়ে ফিরে বাসায় বসে চুপচাপ থাকা। কেউ নারীঘটিত কারনে ধরা খেয়ে লজ্জায় বাকরুদ্ধ হলে, তার দায়ও কি রাষ্ট্রকে নিতে হবে?
আর রিসেন্ট ইলিয়াস আলিদের গুমের গোমর এক বিএনপির শির্ষ নেতাই ফাঁস করে দিয়েছেন। এরপরও লজ্জা নেই এদের।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪২