somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ২

০১ লা মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তায় জ্যাম একটু বেশী, ভয় ছিল সময় মত এয়ারপোর্ট পৌছতে পারব কিনা। ভাবলাম এইতো শেষ জ্যাম, ঢাকার এই জ্যাম আর কখনো আমাকে বিরক্ত করবেনা, শেষ বারের মত না হয় একটু সহ্য করলাম। যাই হোক, সমস্যা হয়নি, সময় মত এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলাম। কিন্তু বিপত্তি ঘটল আমার শ্বশুর বাড়ির কেউ এসে পৌছাতে পারেনি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন দেখলাম সময় খুব কম, আমি বাবা – মা কে সালাম করে ভেতরে ঢুকে গেলাম। বোর্ডিং পাশ নিতে গিয়ে দেখি কিছু ওজন বেশি, ২০০০ টাকা দিলাম এক্সট্রা ওজন বহন করার জন্য। বোর্ডিং শেষ করে বাহিরে কল দিয়ে জানতে পারলাম শ্বশুর শাশুড়ি এসেছে। বোর্ডিং করার পর সাধারানত বাহিরে আসা যায় না, আমি অনেক অনুরধ করে বাহিরে আসলাম, শেষ বারের মত সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাবা মা কে ছেড়ে এর আগেও বিদেশে ছিলাম, তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু বউ এর জন্য একটু মন খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার নাই......
ইমিগ্রেশন অফিসার সবসময় আমাকে জালাতন করে, যতবার দেশের বাহিরে গেছি ততবার ই আমি কেন যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি, দেশে কি করতাম, লেখাপড়া কোথায় করেছি, এত ঘন ঘন কেন দেশের বাহিরে যাই, আরও হাজারো প্রশ্ন। আমার মনে হয় আমাকে সন্দেহ ভাজন লোক মনে হয় তাদের, তাই এত প্রশ্ন। মেজাজটা খুব খারাপ হচ্ছিল, আমার পাসপোর্ট এ ভিসা আছে, আমার টিকেট আছে, আমি কেন যাব, কোথায় যাব এতে তার মাথা ব্যাথা কেন। আমার নামে যদি তাদের কাছে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে তারা এসব প্রশ্ন করতে পারে। শেষ বারের মত এই ইমিগ্রেশন পাড় হচ্ছি ভেবে ঠাণ্ডা মাথায় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলাম, মনে হল পরিক্ষায় পাশ করলাম। অবশেষে ইমিগ্রেশন শেষ করে, লাউঞ্জ এ অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ খেয়াল হল আমার American Express Gold ক্রেডিট কার্ড আছে, আমি লাউঞ্জ এর ভেতর তাদের যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে ফ্রী খাবার খেতে পারি, যেমন চিন্তা তেমন কাজ। আরেকটা সিকুরিটি চেক পাড় হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আসলো সেই কাঙ্খিত ক্ষণ, বিমানে উঠার পালা।
আগেই বলেছি, কিংফিশার এয়ালাইন্স এ ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইট। কিংফিশার এর বিমান বালাদের সৌন্দর্যের গল্প শুনেছি রাজু ভাই এর কাছে, আজ দেখলাম, সত্যি বেটা বিজয় মালিয়ার (কিংফিশার এর মালিক) পছন্দ আছে বলতে হয় । বিজয় মালিয়ার ছেলে সিদ্দার্থ মালিয়া, শুনেছি দিপিকা পাদুকনের বয় ফ্রেন্ড সে। বাপকা বেটা, কারো পছন্দ কারো চেয়ে কম না। টাকা কথা বলে।
দেখতে দেখতে ৫০ মিনিটে কলকাতার নেতাজি সুবাশ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এসে পৌঁছলাম। এত ছোট ফ্লাইটে এর আগে কখনো ভ্রমন করিনি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বাহিরে আসলাম। ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বলতে যেরকম বুঝায় তার ধারে কাছে ও না এই এয়ারপোর্ট। অনেক দেশের ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট ও এর চেয়ে ভালো, কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নাই, পরিবেশটা ও নোংরা।

ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল থেকে ডোমেস্টিক টার্মিনাল এ চলে আসলাম, ৪ ঘণ্টা পর দিল্লি ফ্লাইট। ডলার চেঞ্জ করে দেশে কল দিলাম। বাবা-মা-বউ এর সাথে কথা বললাম। সবার কণ্ঠ খুব ভার, মনে হল সবাই কান্নাকাটি করেছে। কলকাতা- দিল্লী ফ্লাইট এ একজনের সাথে কথা হল, সে ঢাকা তে চাকরি করে, হুয়াওয়াই এর ইঞ্জিনিয়ার, দিল্লি বাড়ি। ৬ মাস পর বাড়ি যাচ্ছে। ভাবলাম, আমাদের দেশের দৈন্যতার কথা। একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ধার করে আনতে হয় পাশের দেশ থেকে। হায়রে সোনার বাংলা, সোনার ছেলেদের শুধু অস্ত্র ধরতে শেখায়, যে কয়েক জন কলম ধরতে শিখে তারাও দেশে থাকেনা, থাকতে পারেনা, যেমনটা আমি পারিনি। বিদেশে লেখাপড়া শেষ করে দেশে এসেছিলাম ভালো কিছু করার জন্য, ৪ বছর আমি শুধু হতাশ হয়েছি। ব্যাবসা করে কিছুই করতে পারিনি, শুধু শিখেছি ব্যাবসা করতে গেলে কিভাবে চুরি করতে হয়। চুরি না করে, মানুষকে না ঠকিয়ে এই দেশে কেউ ধনী হয়েছে এমন লোক আছে বলে আমার বিশ্বাস হয়না। যদিও ২/৪ জন থেকে থাকে, আল্লাহ নিজে তাদের রক্ষনাবেক্ষন করেছেন।
রাত দশটায় নিউ দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এসে পৌঁছালাম। এটা কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এর সব স্ট্যান্ডার্ড পূর্ণ করে। চমৎকার এয়ারপোর্ট, ভেতরটা দেখতে সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্ট এর মত, মনে হল ডিজাইন কপি করেছে। যাই হোক, রাত ৪ টায় পরবর্তী ফ্লাইট।
অপেক্ষা করতে লাগলাম। এমন সময় এক লোক এসে পাশে বসলো। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম সে একজন মেডিটেসিয়ান, পোল্যান্ড যাচ্ছে ক্লাস নিতে। একি ফ্লাইট এ যাব ২ জন মস্কো পর্যন্ত। তার সাথে গল্প করে মেডিটেসন এর অনেক কিছু জানলাম। সময় চলে আসলো নেক্সট ফ্লাইট এর। বোর্ডিং করতে গিয়ে পরলাম মহা বিপদে। এক্সট্রা ওজন এর জন্য প্রতি কেজি ৩০ ইউরো। ৭ কেজি এক্সট্রা (টোটাল ২৭ কেজি ছিল), ১ কেজি ও ছাড় দিবেনা। কি র করার, ওমর ভাই এর কিছু মাংস ও শুটকি ছিল ৩ কেজি, ওমর ভাই কে কল দিয়ে জানালাম। সে বলল এত টাকা খরচ করার দরকার নাই, ওইগুলো ফেলে দেন। একটা বড় জ্যাকেট, কিছু ফাইল হাতে নিলাম। আবার গেলাম বোর্ডিং করাতে। ২ কেজি বেশি, অনেক অনুরোধ করলাম। ছাড়বে না। হাতে ও আর নেয়া যাবেনা। ভেতরে সব শিতের পোশাক, সেগুলোতে হাত দেয়া যাবেনা, শিতের দেশে যাচ্ছি, সেগুলই তো বেশি ইম্পরট্যান্ট, টাকা ও খরচ করবনা, অজানা দেশে যাচ্ছি, আগেই টাকা খরচ করলে, পড়ে যদি দরকার পড়ে কোথায় পাব। তাছাড়া গিয়ে জব পেতে কতদিন লাগে কে জানে। ভেতরে কয়েকটা ডায়েরি ছিল অনেক মোটা, বাধ্য হয়ে সেগুলো ফেলে দিলাম। খুব মন খারাপ হল। অনেক দিনের পুরাতন ডায়েরি, অনেক স্মৃতি আছে ডায়েরিগুলো নিয়ে। কি আর করার, ডায়েরি ফেলে দিলেইতো আর মন থেকে সেই স্মৃতিগুলো মুছে যাবে না। এক হিসেবে ভালই হয়েছে, অনেক গোপন কথা লেখা ছিল ডায়রিতে। পড়ে যখন আরেকটা মেশিন এ মাপতে গেলাম, গিয়ে দেখি এইবার ১ কেজি কম, উফ...সবি কপাল। ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইট এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

চলবে.............
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×