somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ৪

০৩ রা মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাগরের পানি ছুঁই ছুঁই করছে বিমানটা, এক্ষুনি মনে হয় সাগরে ডুবে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি একটা ব্রিজ, ব্রিজটা আমার অনেক পরিচিত। যতবার নেট-এ কোপেনহাগেন খুঁজেছি ততবার এই ব্রিজটাকে দেখেছি । এটা কোপেনহেগেন এর সাথে সুইডেন এর মালমো শহরের সংযোগ ব্রিজ। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে কোপেনহেগেন বিমানবন্দর অবতরন করলাম। ডেনমার্ক সময় দুপুর ২ টা। কোন ঝামেলা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পাড় হলাম।

বাহিরে ওমর ভাই অপেক্ষা করতেছে । দেখা হল ওমর ভাই এর সাথে। ফোনে কথা বলে ওমর ভাই কে যতটা ভাল মানুষ মনে হয়েছে বাস্তবে তার চেয়ে ও অনেক ভাল মানুষ সে। আমার নিষেধ সত্ত্বেও আমার একটা লাগেজ নিজের কাছে নিয়ে নিল। খুব লজ্জা হচ্ছিল যে তার মাংস, শুটকি আমি ফেলে এসেছি। সে আমাকে বলল এটা নিয়ে লজ্জা না পেতে, ভ্রমনে এমনটা হতেই পারে।
এয়ারপোর্ট থেকে মেইন শহর কয়েক কিলোমিটার দূরে। তার কাছে টিকেট ছিল আমার জন্য। মেট্রোতে চড়ে আমার রওয়ানা দিলাম। ক্রিসচিনা হেভেন নামক স্থানে এসে আমরা মেট্রো থেকে নেমে পড়লাম। শহরের ভেতর চলে এসেছি। মেট্রো থেকে বের হয়ে দেখি খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়া । ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। খুব একটা সমস্যা হচ্ছেনা। এর চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রায় থাকার অভ্যাস আছে। মনে পড়ে ইউক্রেনে একবার -১৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পেয়েছিলাম। হোস্টেল থেকে বের হয়েছিলাম বাজার করার জন্য। বাতাস এসে চোখে লাগার সাথে সাথে চোখ থেকে পানি বের হতে লাগলো, সেই পানি মুখের কাছে আসার আগেই বরফ হয়ে গিয়েছিল।
৬৬ নাম্বার বাসে চড়ে রওয়ানা দিলাম বাসার দিকে। অসম্ভব পরিপাটি, খুব চমৎকার একটা শহর। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু একটা জিনিস আমাকে অবাক করল। কোথাও কোন মানুষ দেখতেছিনা। অনেক্ষন পর পর ২/৩ টা মানুষ দেখা যাচ্ছে। ভাবলাম শহরের আরেকটু ভেতরে গেলে হয়তো দেখা যাবে। কিছুক্ষন পর ওমর ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম সেন্ট্রাল কোথায়। ওমর ভাই বলল একটু পেছনে কয়েকটা মানুষকে বাস এর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে একটা বড় বিল্ডিং এর বাহিরে, ওইটা কোপেনহেগেন সেন্ট্রাল স্টেশন। ঐটাই কোপেনহেগেন সেন্ট্রাল।

অবাক লাগলো। কোথায় আসলাম রে বাবা, এটা দেখি মৃত শহর। একটা শহরে সেন্ট্রাল যদি এমন হয়, বাকি শহরে তো আরও লোকজন খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
৫২ stefensgade, ৪র্থ তলায় আমার বাসা ঠিক করেছেন ওমর ভাই। সাথে আরও ২ জন থাকবেন। একজন দেবু ভাই, আরেকজন আসিফ ভাই। আসিফ ভাই আবার ইউক্রেন লেখাপড়া করেছেন। ইউক্রেন এর একসময়ের রাজধানী শহর ছিল খারকভ । সেখানে লেখা পড়া করতেন তিনি। আমি পরতাম ইউক্রেন এর দানেস্ক শহরে। দুই শহরের দূরত্ব প্রায় ৭০০ কিমি। আমি একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে। ভার্সিটি থেকে পারমিশন নিয়ে যাই নাই, পাসপোর্ট ভার্সিটিতে জমা ছিল। তাই অবৈধ ভেবে পুলিশ আটক ও করেছিল। পরে ভার্সিটির সহায়তায় ছাড়া পেয়েছিলাম।

তারা কেউ এখন বাসায় নাই, কাজে গেছে, রাত্রে আসবে। ওমর ভাই এর কাছে চাবি ছিল। সেটা দিয়েই ভেতরে ঢুকলাম। ২ রুমের বাসা, এক রুমে দেবু ভাই একা থাকবে, আরেক রুমে একটা খাট আছে সেখানে আসিফ ভাই ঘুমাবে আর আমাকে ফ্লোরে বিছানা করে থাকতে হবে। ভাবতে খুব কষ্ট লাগতেছিল, দেশে কত আরামে থাকতাম, ইউক্রেনে যখন থাকতাম তখনও একটা খাট আমার জন্য ছিল, কিন্তু জীবনে এই প্রথম ফ্লোরে ঘুমাতে হবে। কিছুই করার নাই, এটার নামই বিদেশ, এটা মেনে নিতেই হবে। কয়েকদিন পর যখন ভাল একটা কাজ পেয়ে যাব তখন একটা খাট কিনে নিব, এই ভেবে নিজেকে সান্তনা দিলাম। ৪৮ ঘণ্টা ঘুমাই নাই। খুব টায়ার্ড লাগতেছে। ওমর ভাই চলে যাবে, বিকেলে কাজে যেতে হবে, তাই আমাকে বলল তার সাথে যেতে, ডলার চেঞ্জ করতে আর একটা মোবাইল সিম কিনতে। আমি তার সাথে হেটে হেটে চলে গেলাম norrebro নামক স্থানে, বেশ খানিকটা পথ।

ইচ্ছে করেই পায়ে হেটে নিয়ে এসেছেন ওমর ভাই, যেন আমি পরবর্তীতে একাই আসতে পারি। এই norebbro হল ঢাকা শহরের ফার্মগেট এর মত, এখান থেকে সব জায়গায় যাওয়া যায়। আরেকটা জায়গা আছে norreport (পড়ে জেনেছি), এটা হল গুলিস্থান এর মত, কোপেনহেগেন এর প্রান। norrebro-norreport এর দূরত্ব ও ফার্মগেট- গুলিস্থান এর সমানই হবে। ৫০ ডলার চেঞ্জ করলাম (১ ডলার = ৫.৪০ ডেনিশ ক্রনার)।
মোবাইল সিম কিনলাম একটা, দেশে কল দিলাম। মনে হল অনেক বছর পর কথা বললাম, সবার কণ্ঠ ভেজা, বুজতে সমস্যা হল না যে সবাই খুব কান্না কাটি করেছে। বাসায় চলে আসলাম। এত টায়ার্ড লাগতেছিল যে খাবার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বাসায় এসে দেবু ভাই এর রুমের ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে পরলাম

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৭
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×