শাশুড়ি গত হয়েছেন ৩ দিন হল। বউ ২০ দিনের একমাত্র মেয়েটাসহ তার বাবার বাড়িতেই আছে, তাই অফিসের কাজ শেষে যত রাতই হোকনা কেন একবার দেখা করে আসি শশুর বাড়িতে। আজ প্রচণ্ড বৃষ্টির কারনে একটু বেশী দেরি হয়ে গেছে। রাত প্রায় ১২ টা, গ্রীন রোডের বাসায় ফিরতেছি।
মতিঝিল থেকে ফার্মগেট এর বাসে উঠেছি, প্রায় খালি গাড়ি, জানালার পাশেই বসলাম। প্রেসক্লাব এসে বাস একটু থামল। বাহিরে চোখ পড়তেই দেখি হলুদ রঙের সালোয়ার কামিছ পড়া একটা মেয়ে যাত্রী ছাউনিতে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে, একটা লোক ঘুমিয়ে আছে, আর একটা মেয়ে লাল টকটকে শাড়ি পড়ে, কপালে বড় একটা টিপ দিয়ে, হাতে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। বুঝতে দেড়ি হল না যে এরা সেই মেয়ে যারা প্রতি রাতেই হাত বদলায় সামান্য কিছু টাকার জন্য। প্রতি রাতে কত টাকাই আর আয় হয়, ৫০০-১০০০ টাকার বেশী নিশ্চয়ই হবেনা, সেখান থেকেও না জানি কত জনকে ভাগ দিতে হয়।
খুব কষ্ট হল,এমন বৃষ্টি ভেজা মাঝ রাতে, লাল পোশাকে একটা মেয়ে স্বপ্ন দেখে বাসর ঘড়ে ঢুকার, কিন্তু অভাব এদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে ছারখার করে দিয়েছে। এরা আজ সমাজের অভিশাপ, এদের দেখলে আমাদের মত সুশীলদের ঘেন্না লাগে। কিন্তু আমরা একবার ও চেষ্টা করেছি তাদের বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টটাকে উপলব্ধি করতে?
গাড়িটা কারওয়ান বাজার পাড় হবার পরেই দেখলাম এক জোড়া কপোত-কপোতী একটা হোটেল এর গেট দিয়ে বেড় হচ্ছে। দেখে বেশ স্মার্ট মনে হল দুজনকেই, ধনীর দুলাল-দুলালি ও হতে পারে। হয়ত তারা আরও আগেই বের হত, বৃষ্টির কারনে আটকা পরেছিল। এই যে এত রাতে একটা মেয়ে বাড়ির বাহিরে, এদের নিশ্চয়ই টাকার প্রয়োজন নাই, কিন্তু তারপরেও আমরা কেউ কখনো বাঁকা আঙ্গুল তাদের দিকে তুলি না।
এবার ফার্মগেট এসে গাড়ি থেকে নেমে দেখি যাত্রী ছাউনিতে বসা ২ জন মেয়ে, একজন পুরুষের সাথে কথা বলছে, পুরুষটা হয়ত তাদের দালাল নয়ত খদ্দের হবে। আশে পাশে আরও ২/৩ জনকে দেখা জাচ্ছে। এরাও মনে হয় অপেক্ষা করছে শিকার ধড়ার। আমি হলের সামনে থেকে রিক্সা নিয়ে চলে আসলাম আর ভাবলাম রাতের ঢাকা কি তাহলে নিশি কন্যাদের দখলে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪৫