একবার আমার এক চাচার বাসায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন বাড়ির ডিজাইন করতে, কি যে আপ্পায়ন, বাড়িতে ইঞ্জিনিয়ার আসছে। মজার ব্যাপার হল আমি কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স শেষ করে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, কিন্তু আমাকে দেখে তাদের কখনোই মনে হয়না যে আমিও গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন। আসলে কথায় আছেনা গেয়ো যোগীরা ভিক্ষা পায়না, আমার দশাও তাই।
এই যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা চলে গেল, এতদিন কারো কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা। এখন মাথায় যদিও ব্যাথা আসছে, কিন্তু সেই মাথা ব্যাথা কমানোর জন্য যে ওষুধ খাচ্ছে, সেটা মাথা ব্যাথা সাময়িকভাবে কমাবে ঠিকি, কিন্তু স্থায়ীভাবে রাতের ঘুম হারাম করে দিবে। কোথা থেকে রাকেশ আস্তানা নামের এক লোককে ধরে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট বানিয়ে ফেলছে, আবার তার নিজের সরবরাহকৃত সফটওয়্যার কোনরকম যাচাই বাছাই ছাড়া ব্যাংকের সব কম্পিউটারে ইন্সটল করে ফেলছে, দায়িত্ব কে নিবে যদি এই রাকেশ আস্তানার সফটওয়্যার বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল তথ্য গোপনে ভারত বা আমেরিকার কাছে সরবরাহ করে দেয়, ভারত আমেরিকার নাম বলার কারন হল ভদ্রলোকের নাম শুনে মনে হল তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোন আমেরিকান হবেন।
রাকেশ আস্তানা নামটা জীবনে কোনদিন কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না, সে নাকি একটা কোম্পানির সিইও, সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করে একটা কোম্পানি যার নাম সারা সাইবার দুনিয়া ঘাটাঘাটি করে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তারচেয়ে বেশী তথ্য সাইবার দুনিয়ায় এলিফ্যান্ট রোডের অনেক কম্পিউটার দোকানের আছে। এখন সে নিজে পারছেনা তাই ফায়ার আই নামে আমেরিকান আরেকটা কোম্পনিকে নিয়ে আসছে যারা কিনা সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, খুবই ভালো উদ্যোগ, কিন্তু আমার দেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের দেশের কোন আইটি বিশেষজ্ঞ কেন তদন্ত দলে নাই। আমাদের দেশের আইটি বিশেষজ্ঞ বলতে বাংলায় পাশ করা কেউ কম্পিউটার চালাতে চালাতে আইটি বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে এমন কারো কথা বলছিনা। যারা সত্যিকার অর্থে আইটি বুঝেন তাদের কথা বলছি।
চতুর্দিকে জোয়ার উঠেছে দেশ নাকি ডিজিটাল হয়ে গেছে, যদিও ব্যাপারটা নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে, কিন্তু এই ডিজিটাল দেশ কে সুরক্ষা করার জন্য ডিজিটাল সৈনিক কোথায়, কোথায় যারা দেশকে ডিজিটাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। কোথায় আমার দেশের সেই সাইবার যোদ্ধার দল যারা সাইবার আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করবে।
এমন মেধাবি আমাদের দেশে নাই বললে কিন্তু ভুল হবে। এমন অনেক মেধাবি আমাদের দেশে অনেক তৈরি হয়েছে, কিন্তু আমার এই স্ট্যাটাসের শুরুদিকের লেখাগুলোর মত, তারা ঠিকি আছে কিন্তু আমরা তাদের মর্ম বুঝি নাই, তাই কখনো তাদের ধরে রাখার চেষ্টা করি নাই। আমাদের ধারনা নিজের বাড়ির মাস্টার্স পাস ইঞ্জিনিয়ারের থেকেও পাশের গ্রামের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের মুল্য অনেক বেশী।
ইন্ডিয়া আমেরিকা থেকে কেউ আসলেই আমরা মনে করি বিরাট কিছু কিন্তু কেউ ভাবিনা যে আমাদের নিজের ঘরের-ই Ragib Hasan, Dewan Tanvir Ahmed এর মত অনেক মেধাবি ছেলে রয়েছে যারা আমেরিকা মাতাচ্ছে। আমরা কেন তাদের দেশের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি না, বা দেশের ভেতর যে ট্যালেন্টগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের ব্যবহার করি না। বলবেন তারাতো দেশ থেকে চলে গেছেন, তাদের কেন দেশে ডাকব। তারা দেশ থেকে বাহিরে গেছেন উচ্চতর জ্ঞ্যান অর্জনের জন্য। একবার দেশের জন্য সেই জ্ঞ্যান কাজে লাগাতে ডাকুন তাদের, সুজোগ দিন তাদের, যোগ্য মর্যাদা দিন, দেখেন তারা দেশের জন্য তাদের নিজেকে নিয়োজিত করেন কিনা, আমার বিশ্বাস তারা করবেন।
আমরা চাইনা আর রাকেশ আস্তানাদের মত লোকদের দারস্ত হয়ে দেশকে ডিজিটাল ঝুকির মধ্যে রাখতে। আমরা চাই আমাদের দেশের স্বার্থ আমরা সংরক্ষন করব, আমরা প্রয়োজনে রাকেশ আস্তানাদের ডাকব, কিন্তু আমরা তাদের কাছে সবকিছু ছেড়ে দেব না। এর পরিনতি কিন্তু দেশের জন্য খুব ভয়াবহ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৫০