খানসামায় পরীা কেন্দ্রে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার
প্রলোভনে শিার্থী সংগ্রহ করছে কোচিং সেন্টারগুলো
খানসামা (দিনাজপুর) থেকে জসিম উদ্দিন ঃ
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিচিত পাকেরহাট। আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত এই হাটটি উপজেলা সদরের চেয়ে উন্নয়নে অনেকখানি এগিয়ে। এখানে রয়েছে উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ডিগ্রী, কামিল, মহিলা কলেজ, কারিগরী কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক প্রতিষ্ঠান। শিার্থীদের ভালো মানের পড়াশুনার প্রতিশ্র“তি দিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে স্কুল কলেজের শিক কর্তৃক একাধিক এসএসসি ও এইচএসসি প্রস্তুতি কোচিং সেন্টার। শুধু শিকই নয়, সরকারী কর্মচারীরাও কোচিং সেন্টার খুলে বসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মির্জারমাঠ হাসিমপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক শহীদুল ইসলাম দয়ালের ‘কাসিক’, শাপলা গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের জীব বিজ্ঞানের শিক তোফাজ্জল হোসেনের ‘প্রতিভা’, জমিরউদ্দিন শাহ্ গালস্ স্কুল এন্ড কলেজের রসায়নের প্রভাষক শফিকুল ইসলামের ‘কনফিডেন্স’, কাচিনীয়া স্কুল এন্ড কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক লোকমান হোসেনের ‘গোল্ডেন’, আলোকডিহি আইডিয়াল কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক ওয়াহেদুল ইসলামের ‘কনটেস্ট’, পাকেরহাট ফাজিল মাদ্রাসার শিক শফিকুল ইসলাম মুকুলের ‘ক্রিয়েটিভ’, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মচারী শাহজাহান বাবলুর ‘স্কলারশীপ’। এছাড়া ‘ভরসা’ ও ‘ম্যাজিক টাচ’ নামক দুটি কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তরুন কান্তি রায় ও আব্দুল বাতেন নামে দুজন বেকার যুবক। অপরদিকে পল্লী দারিদ্র বিমোচনের জনৈক কর্মচারী নিতাই চন্দ্র একটি কোচিং খুলে বসেছে। এসব কোচিং সেন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ২/৩ জন শিক দিয়ে সবগুলো কাসই নেয়া হয়। বিষয়ভিত্তিক কোন শিক না থাকায় কোচিং এর ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র পরীা পাশের ধারণাটুকু নিচ্ছে কিন্তু পুথিগত বিদ্যা তাদের কপালে মিলছে না। ক্রিয়েটিভ ও কাসিক কোচিং সেন্টারের ছাত্র ফরহাদ, নাজমূল, রাসেল, মানিক, সাদিক হোসেন ও ছামিউল জানায়, স্কুলে লেখাপড়া এখন হয় না। তাছাড়া অল্প সময়ে স্যাররা বইগুলো সম্পূণরূপে শেষ করতে পারেন না, নিয়মিত কাস হয় না, পড়াশুনার কোন প্রকার চাপ নেই তাই বাধ্য হয়ে কোচিং এ ভর্তি হয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কজন ছাত্র জানায়, এসব কোচিংয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক নেই একজনই ৫/৬টি বিষয়ের উপর কাশ নেয়। এমনকি এনজিও কর্মীরাও এসব কোচিংয়ের শিক হিসেবে রয়েছে। আবাসিক ও অনাবাসিক এসব কোচিংয়ে ১৫০-২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান করছে। আবাসিক ছাত্ররা খাওয়া বাদে ৫শ এবং অনাবাসিকদের ৩শ টাকা মাসিক হারে নেওয়া হয়। এসব কোচিং সেন্টারের জন্য নিজ বাড়ীতে, ভাড়া বাসা, স্কুলের ক এমনকি এতিমখানাও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা।
কোচিংয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট পড়া রীতিমত এ অঞ্চলের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। কতিপয় শিক ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা জানায়, ওই স্কুলের ইতিহাস বিষয়ের শিকিা আঞ্জুমান আরা পাকেরহাটস্থ নিজ বাসায় ইংরেজী, গণিত বিষয়ের প্রাইভেট পড়ান। যেসব ছাত্র-ছাত্রী ওই ম্যাডামের কাছে পড়েন তাদেরকে পরীার সময় প্রত্যভাবে সাহায্য করেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া কাসে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি সর্বদাই রাগান্বিত দৃষ্টিতে দেখেন। গত বছর নবম শ্রেণীর কামিনী রায় নামক এক ছাত্র কে এইরূপ আচরণ করে কাশ থেকে বের করে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ছাত্রটি আর স্কুলে আসে না। বন্ধ হয়ে গেছে তার পড়াশুনা। তার কাছে প্রাইভেট না পড়াই এর কারণ বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, এসএসসি/এইচএসসির পরীা কেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে শিার্থীদেরকে কোচিং ও প্রাইভেটে আসতে বাধ্য করছে। ওই সূত্র মতে, বিগত ফাইনাল পরীায় প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের শিকরা ক পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করে। নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কে দায়িত্ব পালন না করলেও অন্য কে তাদের প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের শিার্থীরা স্বভাবতই রয়েছে। কারণ কোচিং কিংবা প্রাইভেট সংশ্লিষ্ট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাই শুধু পড়ে না - অন্য প্রতিষ্ঠানের শিার্থীরাও অধ্যয়ন করে। বিষয়ভিত্তিক শিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দিনে ক পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া না হলেও অন্যান্য বিষয়ের দিন সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটাচ্ছে। এজন্য পরীা কেন্দ্রে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একরকম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় বলে সূত্রটি উল্লেখ করে। প্রাইভেট পড়ার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিকরা অন্য বিষয়েও প্রাইভেট পড়ান। এরমধ্যে পাকেরহাট ডিগ্রী কলেজের নির্মল চন্দ্র ও মাহবুবার রহমান, ছাতিয়ান গড় উচ্চ বিদ্যালয়ের কৈলাশ চন্দ্র, হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজের মুকুল হোসেন, চক সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সুকুমার রায় ও মোতালেব হোসেন, গোয়ালডিহি গালর্স স্কুলের বাদল চন্দ্র, উত্তর নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বীর ভদ্র রায়, পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অমৃত চন্দ্র, আব্দুল মান্নান, দুহুশুহ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাসুদ, আকবর আলী শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের হাসান আলী, জমিরউদ্দিন শাহ্ স্কুল এন্ড কলেজের আসাদ আলী ও মাহ্ফুজ, কুমুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম, মোকছেদ আলী, ভাবকী ইসলামিয়া মাদ্রাসার আজিজুল হক, শফিকুল ইসলাম ও মশিউর রহমান, আলোকডিহি আইডিয়াল কলেজের রমানাথ চন্দ্র।
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
মোঃ জসিম উদ্দিন
মোবাইল ঃ ০১৭২০-৬৮৯১০৮
তাং- ২৯/০৮/০৯ইং

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




