somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান
আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

ডিজিটাল ডিটক্স: প্রযুক্তি আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার এক জরুরি প্রয়াস

০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক যুগে প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রাপ্তির প্রধান মাধ্যম। তবে, প্রযুক্তি আমাদের জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ হলেও, যখন তার ব্যবহার মাত্রাহীন হয়, তখন তা এক ভয়ানক আসক্তির রূপ নেয়। এই প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রযুক্তি আসক্তি বা ডিজিটাল আসক্তি একটি নতুন ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দিনে দিনে এটি মানসিক চাপ, একাকিত্ব, মনোযোগহীনতা ও উদ্বেগের অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে, যা আমাদের জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় “ডিজিটাল ডিটক্স” বা প্রযুক্তি থেকে সাময়িক বিচ্ছেদ একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। “ডিজিটাল ডিটক্স” হয়ে উঠেছে এক অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুশীলন, যা শুধুমাত্র প্রযুক্তির ব্যবহার হ্রাস নয় বরং এক গভীর আত্মবিশ্লেষণের সূচনা। এই লেখায় আমরা ডিজিটাল ডিটক্সের প্রয়োজনীয়তা, প্রযুক্তি আসক্তির প্রভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কীভাবে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তা বিশদভাবে আলোচনা করব।

প্রযুক্তি আসক্তি: একটি ক্রমবর্ধমান নীরব মানসিক বিপর্যয়ের নাম

প্রযুক্তি আসক্তি বলতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন গেমের অতিরিক্ত এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারকে বোঝায়, যা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক এবং মানসিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন মানুষ ডিজিটাল আসক্তির সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এই সমস্যা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

প্রযুক্তি আসক্তির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১) অতিরিক্ত সময় ব্যয়: সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং বা অনলাইন কনটেন্টে অত্যধিক সময় ব্যয় করা। অফিস, ঘর, সামাজিক মঞ্চ, প্রতিটি মুহূর্তে নোটিফিকেশনের ঝনঝনানি আমাদের মনোযোগ চুরি করছে।
২) অবহেলা ও সম্পর্কে প্রভাব: ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পড়াশোনা বা কাজের প্রতি উদাসীনতা। ভার্চুয়াল সম্পর্ক বাস্তব যোগাযোগের জায়গা দখল করে নিচ্ছে; ঘনিষ্ঠতা হারাচ্ছে বাস্তব সম্পর্কের গভীরতা।
৩) শারীরিক ও মানসিক সমস্যা: ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, হতাশা এবং চোখের সমস্যা; যা দিনভর ক্লান্তি ও মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে।
৪) নিয়ন্ত্রণের অভাব: ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করতে অক্ষমতা। স্ক্রল করার নেশা, লাইক পাওয়ার উত্তেজনা এবং মেসেজের অপেক্ষা, সবই ব্রেনে ক্ষণস্থায়ী সুখ উৎপন্ন করে, যা ধীরে ধীরে আসক্তির দিকে ধাবিত করে।

এই আসক্তি শুধু ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং সামাজিক সম্পর্ক, কর্মক্ষমতা এবং জীবনের সামগ্রিক গুণগত মানের উপরও প্রভাব ফেলে।

ডিজিটাল ডিটক্স কী এবং কেন এটি প্রয়োজন?

ডিজিটাল ডিটক্স হলো প্রযুক্তি বা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেয়। এটি শুধু স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট বন্ধ করার বিষয় নয়, বরং জীবনের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন, মননশীলতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমানোর একটি সচেতন প্রচেষ্টা।

এককথায়, ডিজিটাল ডিটক্স হলো প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করে নিজেকে মানসিক, শারীরিক এবং আত্মিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করার একটি প্রক্রিয়া। এটি মানে -
 নির্দিষ্ট সময় অনলাইনে না থাকা (যেমন: সান্ধ্যকালীন বা উইকএন্ড ডিটক্স),
 ‘নোটিফিকেশন সাইলেন্স’ দিয়ে দিন শুরু করা,
 প্রযুক্তিহীন সকালের অভ্যাস গড়ে তোলা,
 অফলাইন সময়কে বই পড়া, প্রকৃতি দেখা কিংবা আত্মমগ্নতায় ব্যয় করা।

ডিজিটাল ডিটক্সের প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য আমাদের প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের মধ্যে তুলনামূলক মনোভাব, নিম্ন আত্মসম্মান এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের ধরন নষ্ট করে এবং দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার মনোযোগের ঘাটতি এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। ডিজিটাল ডিটক্স এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সহায়তা করে এবং মানসিক শান্তি ও জীবনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রযুক্তি আসক্তির প্রভাব

প্রযুক্তি আসক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নিম্নে এর কিছু প্রধান প্রভাব উল্লেখ করা হলো:

১) উদ্বেগ ও হতাশা: সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো দেখে নিজের জীবনের সাথে তুলনা করা (সোশ্যাল কম্প্যারিসন) উদ্বেগ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নেতিবাচক মন্তব্য বা সাইবার বুলিং মানসিক চাপ বাড়ায়।

২) ঘুমের সমস্যা: রাতে দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন ব্যাহত করে, যা অনিদ্রা ও অন্যান্য ঘুম-সংক্রান্ত সমস্যার কারণ হয়।

৩) মনোযোগের ঘাটতি: ডিজিটাল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগের সময়কাল কমিয়ে দেয়, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং কর্মজীবীদের কাজের উৎপাদনশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪) সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: বাস্তব জীবনের সম্পর্কের পরিবর্তে অনলাইন সম্পর্কে বেশি মনোযোগ দেওয়া সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে, যা একাকীত্ব ও মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।

৫) আত্মসম্মানের হ্রাস: সোশ্যাল মিডিয়ায় আদর্শিক জীবনধারা ও শারীরিক চেহারার উপস্থাপনা মানুষের মধ্যে নিজের প্রতি অসন্তুষ্টি ও নিম্ন আত্মসম্মান সৃষ্টি করে।

ডিজিটাল ডিটক্সের সুবিধা

ডিজিটাল ডিটক্স মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি জীবনের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো:

১) মানসিক প্রশান্তি: নীরবতাও একধরনের ওষুধ; প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক চাপ কমে ও মানসিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। মননশীলতা বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের চিন্তাভাবনার সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

২) উন্নত ঘুমের গুণমান: স্ক্রিন টাইম কমানোর ফলে ঘুমের ধরন উন্নত হয়, গভীর ও স্বাভাবিক ঘুম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩) বাস্তব সম্পর্কের উন্নতি: ডিজিটাল ডিটক্স পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়, যা সামাজিক বন্ধন মজবুত করে। বাস্তব কথা ও অনুভূতির পুনর্জাগরণ ঘটে। বাস্তব আলাপ, চোখে চোখ রাখা, হাসির শব্দ, এসব সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়।

৪) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে যে সময় নষ্ট হয়, তা ডিটক্সের মাধ্যমে সৃজনশীল কাজ, পড়াশোনা বা শখের জন্য ব্যবহার করা যায়। এতে মনঃসংযোগ বাড়ে, কাজের গতি ও গভীরতা বাড়ে। মনে রাখতে হবে যে কম স্ক্রিন ব্যবহার মানে বেশি সময় নিজের পছন্দমতো কাজে ব্যয় করার সুযোগ।

৫) আত্ম-আবিষ্কার: নিজের চিন্তা ও অনুভবগুলোকে বোঝা যায় যখন বাইরের শব্দ কমে। ডিজিটাল ডিটক্স ব্যক্তিকে নিজের লক্ষ্য, মূল্যবোধ এবং আগ্রহের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেয়। নিজের ভিতরের ভাবনা ও লক্ষ্য বোঝা সহজ হয়।

কীভাবে ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করবেন?

ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করা একটি সচেতন এবং পরিকল্পিত প্রক্রিয়া। এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

১) লক্ষ্য নির্ধারণ: ডিজিটাল ডিটক্সের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন ২ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম কমানো বা সপ্তাহান্তে সম্পূর্ণ ডিজিটাল-মুক্ত থাকা।

২) সময়সীমা নির্ধারণ: স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন। উদাহরণস্বরূপ, রাত ১০টার পর কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করা।

৩) বিকল্প কার্যক্রম: ডিজিটাল ডিভাইসের পরিবর্তে বই পড়া, ব্যায়াম, ধ্যান, বাগান করা বা রান্নার মতো কার্যক্রমে সময় ব্যয় করুন; অথবা আপনার পছন্দমতো কিছু।

৪) নোটিফিকেশন বন্ধ করা: সোশ্যাল মিডিয়া বা অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন, যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যাঘাত কমে।

৫) ডিজিটাল-মুক্ত জোন: বাড়ির নির্দিষ্ট এলাকা, যেমন শোবার ঘর বা খাবার টেবিল, ডিজিটাল-মুক্ত রাখুন।

৬) সচেতনতা বৃদ্ধি: নিজের ডিজিটাল ব্যবহারের অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করুন এবং এটি কীভাবে আপনার জীবনকে প্রভাবিত করছে তা বিশ্লেষণ করুন।

৭) পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন: ডিজিটাল ডিটক্সে সফল হতে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে এই পরিকল্পনা শেয়ার করুন এবং তাদের সমর্থন নিন।

ডিজিটাল ডিটক্সে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সামাজিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা

এই সচেতনতা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দায়বদ্ধতা শেখানো যেতে পারে। বিশেষ করে -
 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, শেখানো হোক স্ক্রিন-ব্যালান্স শিক্ষা।
 পরিবারে নির্দিষ্ট স্ক্রিন রুলস প্রতিষ্ঠা বা স্ক্রিন সময়ের নিয়ম।
 মিডিয়ার দায়িত্বশীল প্রচারণা, প্রচার হোক ইতিবাচক ডিজিটাল ব্যবহার।
 চিকিৎসকদের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল থেরাপি’ এর আলোকে প্রযুক্তি-আসক্তির সনাক্তকরণ ও পরামর্শ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল ডিটক্স

বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিটক্সের ধারণা এখনো ততটা প্রচলিত নয়, তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন গেমিং এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি পড়াশোনার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও, শহরাঞ্চলে ব্যস্ত জীবনযাত্রায় ডিজিটাল ডিভাইসের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানসিক চাপ ও একাকীত্ব বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিটক্স প্রচারের জন্য স্কুল, কলেজ এবং কর্মক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “ডিজিটাল-মুক্ত দিন” পালন বা কর্মক্ষেত্রে “মাইন্ডফুলনেস ওয়ার্কশপ” আয়োজন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ স্থাপন, যেমন গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটানো বা স্থানীয় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, ডিজিটাল ডিটক্সকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।

উপসংহার

ডিজিটাল ডিটক্স শুধু প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া নয়, বরং নিজের সাথে, পরিবারের সাথে এবং প্রকৃতির সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের একটি সুযোগ। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল ডিটক্সের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে পারি, মানসিক শান্তি অর্জন করতে পারি এবং আরও সুষম ও পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারি।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, সেখানে ডিজিটাল ডিটক্সের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারি, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। ডিজিটাল ডিটক্স নিয়ে এখনই পদক্ষেপ নিন, কারণ একটি সুস্থ ও সুখী জীবনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো বিকল্প নেই।

আমরা প্রযুক্তির যুগে বাস করছি, কিন্তু প্রযুক্তি যেন আমাদের মধ্যবিন্দু না হয়ে ওঠে, বরং আমরা যেন তার মালিক হই। মনে রাখবেন, ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু তার সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করাই হচ্ছে সচেতনতা। প্রযুক্তির মালিকানা যেন আমাদের হাতে থাকে, না-হয়ে সে যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না নেয়।

প্রকৃত মুক্তি আসে ভারসাম্যের মাধ্যমে। আর এই ভারসাম্যই হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রথম ধাপ। ডিজিটাল ডিটক্স মানে জীবনের এক নতুন ছন্দে ফেরত যাওয়া; যেখানে চিন্তা মুক্ত, সম্পর্ক গভীর, আর হৃদয় সংবেদনশীল। এই যাত্রা শুরু করা আজই সম্ভব; একটি স্ক্রিনহীন সন্ধ্যা, একটি আত্মদর্শী সকাল দিয়েই শুরু হোক নতুন অধ্যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:৩০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×