somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান
আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

নৈতিকতা খুঁজছি, পাওয়া যাচ্ছে না: বস্তাপঁচা মূল্যবোধের পুঁজিবাজারে তরুণের দায়

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীতি-নৈতিকতা? ওটা এখন মিউজিয়ামে রাখা, ঘর থেকে কেউ খুঁজে না।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ ঘরে বাবা-মায়ের মুখের কথায় সত্য-মিথ্যা বুঝতো। এখন সময় এমন যে, বাবা-মায়ের চালচলনে সন্তান আর প্রশ্ন করে না, “বাবা তুমি মাসে ক’টা টাকা আয় করো? আর এত রকম ব্যয় কীভাবে চালাও?” সেই সৎ-সাহসটাই এখন আর নেই। এটা সচেতনতা নয়, শ্লেষ নয়, এটা আত্মরক্ষার সুর। কারণ ঘরে মূল্যবোধ জন্মায় না, শুধু মুখোশ তৈরি হয়।

বয়স্ক মানেই ‘নৈতিক’ নয়, আর তরুণ মানেই ‘নেতৃত্ব’ নয়

আমরা বড়দের সম্মান করি ঠিকই, কিন্তু তাদের আচরণে যদি দেখা যায় সংসদের গন্ডগোল, দপ্তরে ঘুষের হাস্যরস, সন্তানের হাতে ব্যালেন্সশিট লুকানো, তবে প্রশ্ন উঠবেই নীতির জন্ম কোথায়, আর তার মৃত্যু কখন হয়েছে?

বৃদ্ধ বলেই যদি মানুষ ‘নৈতিক’ হয়, তাহলে চায়ের দোকানে রাজনীতির নামে গালাগাল করা কাকে বলবো? তরুণ বলেই যদি ভবিষ্যৎ হয়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে লোভী হওয়াটাকে কীভাবে ভবিষ্যতের ‘প্রতিচ্ছবি’ বলবো? নীতির বয়স নেই, মূল্যবোধের বংশ নেই।

পরিবার মূল্যবোধের বারুদের গুদাম না হলে, পচন শুধু সময়ের অপেক্ষা

পরিবার আজ এক সরবরাহ কেন্দ্র; আবেগ নয়, প্রশাসনিক নিয়মে সবকিছু চলে। বাবা বলছেন “উচ্চশিক্ষা নাও,” কিন্তু মা জানেন না ছেলেটা ফ্রড কোম্পানিতে ইন্টার্ন করছে। মেয়ে বলছে, “সিভি বানাচ্ছি,” অথচ বাবা ব্যাংকে আয় দেখিয়ে সংসার চালানোর ব্যয়ের হিসাব জানাতে নারাজ।

আমরা ‘পড়ো তোমার ধর্মগ্রন্থ’ বলি, কিন্তু ‘জীবন কীভাবে চালাতে হয়’ তা শেখাই না। আর শিক্ষার নামেই চলছে অদ্ভুত কিছু, যেমন মেধার চেয়ে নম্বর, সততার চেয়ে ফলাফল, চিন্তার চেয়ে ছক। এখন পারিবারিক শিক্ষাই সবচেয়ে বড় ইনফরমেশন গ্যাপ।

সততা কি পুরোনো বস্তা, যেটা এখন রিসাইকেল হয় না?

নীতি-নৈতিকতার কথা উঠলেই আমরা বলি “জীবন কঠিন,” “এখন আর সম্ভব না,” “সমাজটাই খারাপ।” তবু যখন সন্তান জিজ্ঞেস করে, “তোমার ইনকাম কতো, আর এত দামী ফোন কোথা থেকে আসে?” তখন বুঝতে হয়, পুরোনো গল্প কাজ করছে না।

যদি ঘরে শিশুটি দেখে বাবা পদের অপব্যবহার করছে, মা জীবনযাত্রায় ভুল জোয়ারে চুপচাপ, তবে সেই শিশু ভবিষ্যতে নতুন দুর্নীতির উদ্ভাবক হবে।

পুরাতন বস্তা, যেখানে সৎ থাকা মানে বোকা হওয়া, এখন রিসাইকেল করে নতুন তরুণ তৈরি হয়। এখন তরুণেরা বলছে দুর্নীতিকে ঘৃণা করি, কিন্তু ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, তাই নীতিকে কফিনে রাখতে হয়।

যে ঘর সৎ নয়, সেই দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে না

আমরা দেশের দুর্নীতির তালিকা দেখি, কিন্তু নিজ ঘরে দেখি না কতবার অপ্রকাশিত আয়, কতবার সুবিধাভোগ, কতবার মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে।

ঘর থেকেই তো শুরু হওয়া উচিত। বাবা-মায়ের খরচ সন্তানের সামনে স্বচ্ছ করা, প্রতিটি আয়-ব্যয়ের হিসাব শেয়ার করা, সন্তানকে বলা “সৎ থাকলে হয়তো ধীরে এগোবে, কিন্তু মাথা উঁচু থাকবে।” ঘরের এই অভ্যাস নীতির ছোট্ট সূর্য হয়ে ওঠে, যা সমাজে আলো ছড়ায়।

পুরনো মুখ আর পুরনো মুখোশ দিয়ে সমাজ বদলায় না

পুরনোদের কথা শুনে শুধু ত্যক্ত হয়ে নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। পুরোনো পঁচা মূল্যবোধ দিয়ে যখন তরুণদের পাথেয় বানাতে চাই, তখন তারা হাসে, শ্লেষ করে, মিম বানায়, কারণ তারা জানে, “বাবা যা বলছেন, তা নিজেও মানেন না।”

তরুণদের চাই স্বচ্ছতা, প্রাসঙ্গিকতা এবং পরিবার থেকে সততার শিক্ষা। এটা না দিলে শুধু পোস্টার আর প্রতিজ্ঞা দিয়ে দুর্নীতি রোধ হবে না, বরং বৈরাগ্যই হবে জাতির ভবিষ্যৎ স্লোগান।

শেষকথা: প্রশ্ন করো, শুরু করো, ঘর থেকেই বিপ্লব আনো

জাতি গঠনের কথা বলে যারা ঘরকে গড়ে না তোলে, তারা ভবিষ্যতের শত্রু। সন্তান যখন প্রশ্ন করে, “পিতামাতা, তুমি কতটা সৎ?”, সে সময় ঘরে পরিবর্তনের সূচনা হয়। ঘর হোক নৈতিকতার চর্চাগার, পরিবার হোক সততার উৎস, তরুণ হোক সত্যের সৈনিক। নইলে নীতি-নৈতিকতার প্রহসন চলতেই থাকবে, আর আমরা পোস্টারেই বলবো “এবার বদল চাই!”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৭
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×