
নীতি-নৈতিকতা? ওটা এখন মিউজিয়ামে রাখা, ঘর থেকে কেউ খুঁজে না।
একটা সময় ছিল যখন মানুষ ঘরে বাবা-মায়ের মুখের কথায় সত্য-মিথ্যা বুঝতো। এখন সময় এমন যে, বাবা-মায়ের চালচলনে সন্তান আর প্রশ্ন করে না, “বাবা তুমি মাসে ক’টা টাকা আয় করো? আর এত রকম ব্যয় কীভাবে চালাও?” সেই সৎ-সাহসটাই এখন আর নেই। এটা সচেতনতা নয়, শ্লেষ নয়, এটা আত্মরক্ষার সুর। কারণ ঘরে মূল্যবোধ জন্মায় না, শুধু মুখোশ তৈরি হয়।
বয়স্ক মানেই ‘নৈতিক’ নয়, আর তরুণ মানেই ‘নেতৃত্ব’ নয়
আমরা বড়দের সম্মান করি ঠিকই, কিন্তু তাদের আচরণে যদি দেখা যায় সংসদের গন্ডগোল, দপ্তরে ঘুষের হাস্যরস, সন্তানের হাতে ব্যালেন্সশিট লুকানো, তবে প্রশ্ন উঠবেই নীতির জন্ম কোথায়, আর তার মৃত্যু কখন হয়েছে?
বৃদ্ধ বলেই যদি মানুষ ‘নৈতিক’ হয়, তাহলে চায়ের দোকানে রাজনীতির নামে গালাগাল করা কাকে বলবো? তরুণ বলেই যদি ভবিষ্যৎ হয়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে লোভী হওয়াটাকে কীভাবে ভবিষ্যতের ‘প্রতিচ্ছবি’ বলবো? নীতির বয়স নেই, মূল্যবোধের বংশ নেই।
পরিবার মূল্যবোধের বারুদের গুদাম না হলে, পচন শুধু সময়ের অপেক্ষা
পরিবার আজ এক সরবরাহ কেন্দ্র; আবেগ নয়, প্রশাসনিক নিয়মে সবকিছু চলে। বাবা বলছেন “উচ্চশিক্ষা নাও,” কিন্তু মা জানেন না ছেলেটা ফ্রড কোম্পানিতে ইন্টার্ন করছে। মেয়ে বলছে, “সিভি বানাচ্ছি,” অথচ বাবা ব্যাংকে আয় দেখিয়ে সংসার চালানোর ব্যয়ের হিসাব জানাতে নারাজ।
আমরা ‘পড়ো তোমার ধর্মগ্রন্থ’ বলি, কিন্তু ‘জীবন কীভাবে চালাতে হয়’ তা শেখাই না। আর শিক্ষার নামেই চলছে অদ্ভুত কিছু, যেমন মেধার চেয়ে নম্বর, সততার চেয়ে ফলাফল, চিন্তার চেয়ে ছক। এখন পারিবারিক শিক্ষাই সবচেয়ে বড় ইনফরমেশন গ্যাপ।
সততা কি পুরোনো বস্তা, যেটা এখন রিসাইকেল হয় না?
নীতি-নৈতিকতার কথা উঠলেই আমরা বলি “জীবন কঠিন,” “এখন আর সম্ভব না,” “সমাজটাই খারাপ।” তবু যখন সন্তান জিজ্ঞেস করে, “তোমার ইনকাম কতো, আর এত দামী ফোন কোথা থেকে আসে?” তখন বুঝতে হয়, পুরোনো গল্প কাজ করছে না।
যদি ঘরে শিশুটি দেখে বাবা পদের অপব্যবহার করছে, মা জীবনযাত্রায় ভুল জোয়ারে চুপচাপ, তবে সেই শিশু ভবিষ্যতে নতুন দুর্নীতির উদ্ভাবক হবে।
পুরাতন বস্তা, যেখানে সৎ থাকা মানে বোকা হওয়া, এখন রিসাইকেল করে নতুন তরুণ তৈরি হয়। এখন তরুণেরা বলছে দুর্নীতিকে ঘৃণা করি, কিন্তু ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, তাই নীতিকে কফিনে রাখতে হয়।
যে ঘর সৎ নয়, সেই দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে না
আমরা দেশের দুর্নীতির তালিকা দেখি, কিন্তু নিজ ঘরে দেখি না কতবার অপ্রকাশিত আয়, কতবার সুবিধাভোগ, কতবার মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ঘর থেকেই তো শুরু হওয়া উচিত। বাবা-মায়ের খরচ সন্তানের সামনে স্বচ্ছ করা, প্রতিটি আয়-ব্যয়ের হিসাব শেয়ার করা, সন্তানকে বলা “সৎ থাকলে হয়তো ধীরে এগোবে, কিন্তু মাথা উঁচু থাকবে।” ঘরের এই অভ্যাস নীতির ছোট্ট সূর্য হয়ে ওঠে, যা সমাজে আলো ছড়ায়।
পুরনো মুখ আর পুরনো মুখোশ দিয়ে সমাজ বদলায় না
পুরনোদের কথা শুনে শুধু ত্যক্ত হয়ে নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। পুরোনো পঁচা মূল্যবোধ দিয়ে যখন তরুণদের পাথেয় বানাতে চাই, তখন তারা হাসে, শ্লেষ করে, মিম বানায়, কারণ তারা জানে, “বাবা যা বলছেন, তা নিজেও মানেন না।”
তরুণদের চাই স্বচ্ছতা, প্রাসঙ্গিকতা এবং পরিবার থেকে সততার শিক্ষা। এটা না দিলে শুধু পোস্টার আর প্রতিজ্ঞা দিয়ে দুর্নীতি রোধ হবে না, বরং বৈরাগ্যই হবে জাতির ভবিষ্যৎ স্লোগান।
শেষকথা: প্রশ্ন করো, শুরু করো, ঘর থেকেই বিপ্লব আনো
জাতি গঠনের কথা বলে যারা ঘরকে গড়ে না তোলে, তারা ভবিষ্যতের শত্রু। সন্তান যখন প্রশ্ন করে, “পিতামাতা, তুমি কতটা সৎ?”, সে সময় ঘরে পরিবর্তনের সূচনা হয়। ঘর হোক নৈতিকতার চর্চাগার, পরিবার হোক সততার উৎস, তরুণ হোক সত্যের সৈনিক। নইলে নীতি-নৈতিকতার প্রহসন চলতেই থাকবে, আর আমরা পোস্টারেই বলবো “এবার বদল চাই!”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


