somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান
আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

ঘর থেকে নীতির শুরু: তরুণদের হাতে নৈতিকতার পুনর্জন্ম

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রস্তাবনা: নৈতিকতার হারানো রাজ্যে

আমরা এক অদ্ভুত যুগে বাস করছি, যেখানে নীতি-নৈতিকতা যেন পুরনো আমলের ক্যাসেট টেপ, কেউ শুনতে চায় না, তবু কোথাও না কোথাও ধুলো জমে পড়ে থাকে। তরুণ হোক বা বয়স্ক, সবাই যেন একই নৌকায় চড়ে ভেসে চলেছে দুর্নীতির স্রোতে, মূল্যবোধের কম্পাস ছাড়া। কিন্তু এই দুর্নীতির জন্ম কোথায়? কে এর জন্য দায়ী? আঙুল তোলার আগে ঘরের দিকে তাকাই। কারণ, নীতি-নৈতিকতার শিকড় গজায় পরিবার থেকে। আর যদি সেই শিকড়ই পচে যায়, তবে গাছ কীভাবে ফল দেবে? এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব, কেন ঘর থেকেই নৈতিকতার পুনর্জন্ম শুরু করতে হবে, কেন তরুণদের হাত ধরে এই বিপ্লব আসতে হবে, আর কেন পুরনো বস্তাপঁচা মাল আর কাজে আসবে না। তৈরি থাকুন, কারণ এই লেখা কিছুটা শ্লেষাত্মক, কিছুটা বিদ্রুপাত্মক, আর পুরোটাই চোখ ধাঁধানো সত্যের আয়না।

নৈতিকতার অভাব: সবাই দোষী, কেউ বাদ নেই

আমাদের সমাজে নৈতিকতার অভাব যেন একটা সংক্রামক রোগ। তরুণরা মনে করে, “বয়স্করা তো দুর্নীতির মহারাজা, আমরা কেন সৎ থাকব?” আর বয়স্করা বলে, “এই তরুণরা তো নৈতিকতার নাম শোনেনি, সবাই শুধু সোশ্যাল মিডিয়া আর টাকার পেছনে ছোটে।” এই দোষারোপের খেলায় কেউ জিতছে না, শুধু সমাজটা হেরে যাচ্ছে। কিন্তু এই নৈতিকতার ঘাটতির মূল কোথায়? এটা কি আকাশ থেকে পড়েছে, নাকি আমাদের ঘরের চৌকাঠ পেরিয়েই এর জন্ম? বাস্তবতা হলো, নীতি-নৈতিকতা কোনো স্কুলের টেক্সটবুক বা সরকারি প্রচারণার ফল নয়। এটা শেখানো যায় না ক্লাসরুমে বা সেমিনারে। এর জন্ম হয় ঘরে, মা-বাবার আচরণে, পারিবারিক শিক্ষায়। কিন্তু আমাদের ঘরগুলো কী শেখাচ্ছে? যখন বাবা অফিস থেকে ফিরে বলেন, “একটু উপরি না নিলে সংসার চলে না,” আর মা বলেন, “পাশের বাড়ির মেয়ে বিয়েতে কত গয়না পেল, আমাদেরও ওরকম করতে হবে,” তখন কী বার্তা যাচ্ছে সন্তানের কাছে? আমরা শিশুদের সততার গল্প শোনাই, কিন্তু নিজেরা সেই গল্পের খলনায়ক হয়ে যাই। এই দ্বৈত চরিত্রই আমাদের নৈতিকতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিচ্ছে।

পারিবারিক শিক্ষা: নৈতিকতার প্রথম পাঠশালা

একটি শিশু তার প্রথম পাঠ নেয় মা-বাবার কাছ থেকে। যখন একজন বাবা তার সন্তানকে বলেন, “একটু মিথ্যে বললে কিছু হয় না, বড় হলে বুঝবি”, তখন সেই শিশু শেখে যে মিথ্যে বলা ঠিক। যখন মা বলেন, “এত বেশি পড়াশোনা করে কী হবে, ভালো বর পেলেই জীবন সেট”, তখন সেই শিশু শেখে যে স্বপ্ন দেখার চেয়ে শর্টকাটই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের শিক্ষা আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। পারিবারিক শিক্ষা মানে শুধু সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানো নয়। এর মানে তাদের মানুষ বানানো। তাদের শেখানো যে সততা কোনো বিলাসিতা নয়, এটা জীবনের মূলধন। তাদের বোঝানো যে টাকা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটা যদি অন্যায়ের পথে আসে, তবে তা বিষের সমান। কিন্তু আমাদের ঘরে এই শিক্ষা কোথায়? আমরা সন্তানদের পড়াশোনার জন্য টিউশন দিই, কিন্তু নৈতিকতার জন্য কী দিই? একটা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি?

তরুণদের হাতে বিপ্লব: পুরনো মাল ফেলে দাও

এখন প্রশ্ন হলো, এই নৈতিকতার জঙ্গল থেকে বের হওয়ার পথ কী? উত্তরটা সহজ, কিন্তু সাহস লাগবে। এই পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে তরুণদের। কেন তরুণ? কারণ তারাই এই সমাজের ভবিষ্যৎ। পুরনো প্রজন্মের অনেকেই দুর্নীতির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে তাদের পক্ষে বের হওয়া কঠিন। তাদের হাতে যেন বস্তাপঁচা মাল, একটু ঝাঁকালেই গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু তরুণদের হাত এখনো পরিষ্কার। তাদের মনে এখনো স্বপ্ন আছে, আদর্শ আছে। তাদের হাত ধরেই নৈতিকতার পুনর্জন্ম হতে পারে। কিন্তু এই বিপ্লব শুরু হবে কীভাবে? প্রথম ধাপ হলো প্রশ্ন করা। তরুণদের প্রশ্ন করতে হবে তাদের পিতামাতাকে। “বাবা, তুমি যে টাকা আনো, সেটা কি সৎ পথে আসে?” “মা, তুমি কেন পাশের বাড়ির সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে প্রতিযোগিতা করে আমাদের জীবন জটিল করছ?” এই প্রশ্নগুলো সহজ নয়, কিন্তু এগুলোই ঘরের ভিত্তি নাড়িয়ে দেবে। এই প্রশ্নগুলোই সেই আলো ফেলবে, যা দুর্নীতির অন্ধকারকে দূর করবে।

করণীয়: দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘর থেকে যুদ্ধ

দুর্নীতি কোনো সরকারি অফিসে বা রাজনৈতিক মঞ্চে জন্ম নেয় না। এর জন্ম হয় আমাদের ঘরে, আমাদের মনের মধ্যে। যখন আমরা ছোট ছোট অন্যায়কে মেনে নিই, যেমন লাইনে না দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে টিকিট কেনা, বা পরীক্ষায় নকল করা, তখন আমরা দুর্নীতির বীজ বুনে ফেলি। এই বীজ থেকে গাছ হয়, আর সেই গাছের ছায়ায় আমাদের সমাজ পচে যায়। তাই যুদ্ধ শুরু করতে হবে ঘর থেকে। তরুণরা শুধু প্রশ্ন করবে না, তারা নিজেরাও উদাহরণ হবে। তারা দেখাবে যে সৎ থাকা সম্ভব, এমনকি এই দুর্নীতির যুগেও। তারা দেখাবে যে টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না, কিন্তু সততা দিয়ে সম্মান অর্জন করা যায়। আর এই যুদ্ধে পিতামাতাকেও সামিল হতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে তাদের সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হলো একটি নৈতিক সমাজ, যেখানে তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।

শেষ কথা: এখনই সময়, আর দেরি নয়

নৈতিকতার পতন যদি আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় রোগ হয়, তবে তার ওষুধ লুকিয়ে আছে আমাদের ঘরে। তরুণদের হাত ধরে এই পরিবর্তন শুরু হতে হবে। পুরনো প্রজন্মের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, নতুন প্রজন্মকে গড়তে হবে এমন এক সমাজ, যেখানে নীতি-নৈতিকতা শুধু বইয়ের পাতায় নয়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে। এই যুদ্ধ সহজ নয়, কিন্তু এটাই একমাত্র পথ। নইলে আমরা সবাই বৈরাগ্যের অতলে তলিয়ে যাব। তাই আসুন, ঘর থেকেই শুরু করি। প্রশ্ন করি, উত্তর খুঁজি, আর নৈতিকতার একটি নতুন সূর্যোদয়ের সাক্ষী হই।

এই ব্লগ পড়ে যদি আপনার মনে একটুও অস্বস্তি হয়, তবে বুঝবেন, এই লেখা তার কাজ করেছে। এখন প্রশ্ন করুন, নিজেকে, আপনার পরিবারকে, আর সমাজকে। পরিবর্তন আপনার হাতেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×