somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাঈনউদ্দিন মইনুল
উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী। শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার জন্য কাজ করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহলী।

পাঠপ্রতিক্রিয়া: জীবন ও জীবিকার গল্প (সহব্লগার সোহানীর লেখা)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভেবেছিলাম সোহানী'র লেখা তো ব্লগে অনেক পড়েছি - সময় পেলে বইটি পড়ে নেবো। তার স্টাইল ও লেখার বিষয় আমার অনেকটাই জানা। বইটির প্রকাশককে আগেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, বইটি কেমন? আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেই উত্তর দিলাম, সোহানীর লেখা শুধু যদি তার ব্লগপোস্ট গুলোর মতোও হয়, তবু অনেক ভালো একটি গ্রন্থ হবে সেটি। বইটি সংগ্রহে রাখার জন্য যথাস্থানে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। চাইলাম মেঘ, হয়ে আসলো ঝড় - প্রকাশক অনেক দয়ার্দ্র হয়ে আমার জন্য একটি কপি নিয়ে হাজির হলেন একদম আমার আস্তানায়!

কিন্তু তার বই পড়ে পাঠক হিসেবে আমার পূর্বধারণা পাল্টেছে। বলতে পারেন আপগ্রেড হয়েছে। বন্ধুর লেখা বই তো পড়তেই হবে - ব্যাপারটি এমন নয়। মনে হলো, এই লেখক তো আমার কাছে নতুন! প্রবাসী লেখক সোহানী'র লেখা বইটি বন্ধুর বই বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। বই পড়ে সোহানীর লেখক সত্ত্বার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হলো।

বলে রাখছি যে, এটি কোন রিভিউ নয় - পাঠক প্রতিক্রিয়া*। লেখার ভেতরের গল্প এখানে নেই (দুঃখিত!)।

ছোট ছোট গল্প দিয়ে সাজানো রঙ্গিন মোড়কের একটি বই। প্রচ্ছদ এমন করে আঁকা, এমন রঙে রঞ্জিত - মনে হবে একটি উপহার। পাঠকের জন্য প্রবাসীর লেখা জীবিকার গল্প। আমার মতে, এটি লেখার গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। প্রথমেই দেখা হলো সহব্লগার আহমেদ জী এস-এর সাথে। শুরুতেই আছে তার লেখা পরিমার্জিত একটি মুখবন্ধ, যা না পড়ে বইয়ে প্রবেশ করা হবে ভুল।

পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে একেকটি গল্প পড়তে। প্রথম পড়ায় আমি তিনটি গল্প পড়ে ফেলেছিলাম। এর কারণ হলো, প্রথমটিতে দারুণ হোচট খেয়েছি, যার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সেটি সামলে নেবার জন্য ব্যাক-টু-ব্যাক বাকি দু'টো পড়া! সময় করে শেষ করলাম জীবন ও জীবিকার গল্প। হোচট খাবার মতো গল্প প্রায় সবগুলোই। বিভিন্ন কারণে। পরিশ্রমী লেখা। কাল অতিক্রম করলে এটি গবেষণার বিষয় হতে পারে।

একেকটি গল্প একেকটি জীবন টুকরো। লেখক সোহানীই, কিন্তু থিমগুলো ভিন্ন ভিন্ন। বিষয়ের বিন্যাস আলাদা, কিন্তু লক্ষ্য এক - জীবন ও জীবিকা।

কিছু গল্প এদেশের; কিছু গল্প এদেশ ছাড়িয়ে - দেশান্তরের; কিছু গল্প একদমই বিদেশের। একটি অসম্ভব সুন্দর এনথোলজি, যা শুধু দেশ-পাড়ি-দেওয়া লেখকের পক্ষেই সম্ভব।

যোগাযোগ প্রচুক্তির কল্যানে পাঠক হয়তো পশ্চিমা জীবনের ধারণা পেয়েই থাকবেন, কিন্তু সেখানে জীবনের অভিজ্ঞতা না থাকলে সবই মূল্যহীন।

স্বাভাবিক ধারায় লেখা গল্পগুলো পড়ে পাঠক আমার মতো হোচট খাবেন বারবার। একটিই কারণ, সত্য বড়ই 'অনাবৃত'। জীবিকা আর জীবন পরিক্রমায় চাওয়া-না-চাওয়া বেআব্রু বিষয়গুলো সামনে আনার কাজটি লেখক করেছেন। প্রশ্ন তৈরি হবে প্রচলিত জীবন ও জীবনবোধ সম্পর্কে। বারবার মলাট উল্টিয়ে লেখককে পড়ার ইচ্ছে জাগবে পাঠকের।

আধুনিক সময়ের সবজান্তা নির্লিপ্ত পাঠক অপ্রত্যাশিতকে পেতে চায় 'প্রত্যাশিত রূপে'। সোহানীর গল্পে সাসপেন্স অনুপস্থিত, ঘটনাগুলোর পরম্পরা অনেকটাই প্রত্যাশিত। প্রতীকের ব্যবহার নেই তেমন, চরিত্র আর ঘটনাগুলো প্রায় অনাবৃত। অপ্রাসঙ্গিকতাও আছে কিছু জায়গায়। গল্পে নেই অপ্রত্যাশিত মোড়, কেউ বলেন মোচড়, ইংরেজিতে বলি টুইস্ট। এসব বিষয় আহমেদ জী এস আরো পরিষ্কার করে বলেছেন।

কিন্তু লেখার মধ্যে যত্রতত্র 'ফিগারস অভ্ স্পিচ' প্রয়োগ করার পক্ষে আমি নই। যা হোক স্বস্তির বিষয় যে, সিম্বল-সিমিলি-মেটাফরের অভাবে 'জীবন ও জীবিকার গল্প' পাঠকের মনে অতৃপ্তি জাগাতে পারে নি - এটি আমার অভিমত। গল্প তো জীবনের প্রতিচ্ছবি (তাই আমি ঠিক জানি না গল্পের জন্য ওসব প্যারামিটার কতটুকু সার্বজনীন)।

জীবন ও জীবিকার গল্পে এসেছে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, পৈশাচিকতা, কিশোর জীবনের দ্বন্দ্ব, পরিবার-কেন্দ্রিক নৃশংসতা, পুরুষতান্ত্রিকতা, ব্রোকেন ফেমিলির ক্যাসকেডিং প্রভাব, ক্ষণিক সুখের জন্য চিরস্থায়ি প্রতারণা, অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার কথা। বিষয় অনেক। কিন্তু একটি জায়গায় লেখাগুলোকে গ্রন্থ বলা যায়, সেটি হলো: পারিবারিক বন্ধন; অথবা অবন্ধন। এটি ছিলো মূল উপজীব্য। তথাকথিত উন্নত সমাজ, আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতা - এসব অবসেশনে আপনার জীবনকে কতটুকু বিলিয়ে দেবেন, মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। হ্যাপি রিডিং!


-------------------------------
*ব্লগার লেখকদের লেখা নিয়ে এরকম প্রতিক্রিয়া সুযোগ পেলেই করে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৩৬
২৯টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×