এক ছিল শেয়াল আর এক ছিল শেয়ালনি। একদিন শেয়ালনির খুব শক্ত অসুখ হল। সেখানকার কবিরাজ ছিল বেজি। তার খুব নাম ডাক। শেয়াল গেলো তার কাছে। বলল, “কবিরাজ মশাই, আমার বউ এর খুব অসুখ। ওষুধ চাই।“
কি অসুখ, লক্ষণ কি সব বৃত্তান্ত জেনে বেজি বলল, তোমার বউ এর শরীরে ভূত ঢুকেছে। তাকে তাড়াতে হবে। ডাইনী বুড়ির সাদা গুঁড়ো চাই। যদি আনতে পার তবে অসুখ ভাল হবে।
শেয়াল ডাইনীর বাড়ি গিয়ে সাদা গুড়ো চাইলো। ডাইনী বলল, ‘পূর্ণিমার রাতে যে বাদর মারা গিয়েছে তার কলিজা যদি আনতে পার তবে সাদা গুড়ো তৈরি করে দিব।‘
শেয়াল তক্ষুনি ছুটল শিকারির কাছে। শিকারি সব শুনে বলল, ‘পূর্ণিমার রাতে বাদর মারা শক্ত কাজ। তবে কলা পাকলে সব বাদর এক জায়গায় আসে। তুমি বরং আমায় একটা কলা গাছ খুঁজে দাও যার সব কলা পেকেছে।‘
শেয়াল গেলো কলা গাছের কাছে আর বলল, গাছ ভাই, তোমার সব কলা গুলো পাকিয়ে দাও তাহলে বাদর আসবে। তখন শিকারি তাকে মারবে। সেই বাদরের কলিজা দিয়ে ডাইনী বুড়ি সাদা গুঁড়ো বানাবে। বেজি তাই দিয়ে আমার বউ এর অসুখ সারাবে।
কলাগাছ বলল, কলা পাকাতে চাই সূর্যের আলো। নইলে আমার কলা পাকবে কি করে?
শেয়াল তখন সূর্যের কাছে গিয়ে বলল, সূর্য, তুমি আলো দাও।নইলে কলা পাকবেনা। কলা না পাকলে শিকারি বাদর মারতে পারবে না। ডাইনী বুড়ি সাদা গুঁড়ো দেবে না, আমার বউ সারবে না।
সূর্য বলল, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু ভাই, খোদা না চাইলে আমি আলো দিতে পারবোনা। তুমি তাকেই ডাক।
শেয়াল বলল, “হে খোদা, সূর্য কে আলো দাও, কলা পাকুক, বাদর আসুক, শিকারি বাদর মেরে কলিজা দিক। তা দিয়ে ওষুধ হোক আর আমার শেয়ালনি ভালো হোক।“ তখন সূর্য আলো দিয়ে কলা পাকালো। বাদর এলো দল বেঁধে। সেই বাদর এর কলজে দিয়ে ডাইনীর সাদা গুঁড়ো তৈরি হল। বেজি ওষুধ তৈরি করে শেয়ালকে দিলো।
কিন্তু ঘরে ফিরে এসে শেয়াল দেখল শেয়ালনি ভালো হয়ে গেছে। দিব্যি ঘরের কাজ কর্ম করছে। শেয়াল ভাবল, এত সব কাণ্ড কেন করতে গেলাম! ঘরে বসে সোজাসুজি খোদাকে ডাকলেই সব ঝামেলা চুকে যেত। (আফ্রিকান উপকথা)
[বাস্তব জীবনেও আমাদের আশে পাশেও বেজির মত এমন অনেক ডাক্তার- কবিরাজ আছে যাদের কাছে গেলে অতি সামান্য রোগেও এমন এমন টেস্ট আর ওষুধের নাম লেখে যে টেস্ট এর রিপোর্ট পেতে পেতে রুগী সুস্থ হয়ে দৌড়ান শুরু করে।]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪