ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি ছাত্রলীগ হলেও বিন্দুমাত্র যেন ছাড় না পায় সে ব্যাপারে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষক প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাজটা অত্যন্ত কঠিন, তবে দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা করতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের যে ঐতিহ্য ছিল আমি সেই ঐতিহ্য পুনরায় দেখতে চাই।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ মহল ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।'
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সর্বশক্তি প্রয়োগে গুরুত্বারোপ করে বলেন, 'কাজটা অত্যন্ত কঠিন, তবে দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা করতেই হবে।'
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনীতির নামে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করে। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বার্থে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষার ফলাফলে জালিয়াতি করা হয় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন , বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য হারুন-অর-রশিদ, কোষাধ্যক্ষ মীজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি খন্দকার বজলুল হক, অণুুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ যারা নষ্ট করে, প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এমনকি ছাত্রলীগ হলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।।।।।।।
এদিকে,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৭ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় (২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত) ৪৬ জনের প্রথম শ্রেণী পাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের পারস্পরিক দোষারোপ প্রমাণ করে, এর পেছনে ঘাপলা রয়েছে। একই ব্যাচের স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন মাত্র আটজন। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলে খোদ বিভাগীয় চেয়ারম্যানও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং এ জন্য দুজন শিক্ষকের বেশি নম্বর দেওয়াকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত একজন শিক্ষক বলেছেন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান এক শিক্ষার্থিনীকে বেশি নম্বর দিয়ে প্রথম শ্রেণী পাইয়ে দিয়েছেন। অপর একজন শিক্ষয়িত্রী পরীক্ষার্থীদের সময় দিতে না পারার কারণে প্রশ্নপত্র সহজ করার কথা স্বীকার করেছেন। বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্যকার বিরোধ ও আঞ্চলিকতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন অন্য একজন শিক্ষয়িত্রী।
সব মিলিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পরিবেশ যে সুস্থ ও শিক্ষানুকূল নয়, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এ অবস্থায় স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কীভাবে রেকর্ডসংখ্যক ৪৬ জন প্রথম শ্রেণী পেলেন, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৫২ জনের প্রথম শ্রেণী পাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তোলপাড় হয়েছিল। গঠিত হয়েছিল তদন্ত কমিটিও। দেশের সর্বাধিক নামী বিদ্যাপীঠের পরীক্ষার ফলের ক্ষেত্রে এ রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। যেকোনো বিভাগের পরীক্ষার ফলাফলে ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। কোনো বছর অহেতুক ‘ঔদার্য’ দেখানো, আবার কোনো বছর মাত্রাতিরিক্ত ‘রক্ষণশীল’ হওয়া কাম্য নয়। অথচ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকেরা সেই কাজটিই করেছেন। শিক্ষকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়, এর পেছনে রহস্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ‘কোনো বিষয়ে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা’র কথা বলেছেন।
যে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্মানে মাত্র আটজন প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন, সে ব্যাচের স্নাতকোত্তরে ৪৬ জনের প্রথম শ্রেণী পাওয়া অস্বাভাবিক বটে। কীভাবে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণী পেলেন, তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। ভালো পরীক্ষা দিয়ে কেউ ভালো ফল করলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অযৌক্তিক উদারতা দেখিয়ে জোর করে কাউকে প্রথম শ্রেণী পাইয়ে দিলে প্রকৃতই যাঁরা ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি অবিচার করা হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অস্বাভাবিক ফলের পেছনে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে তা খুুঁজে বের করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। ।।।
প্রথম আলো এবং কালের কন্ঠ হতে সংকলিত ও পরিমার্জিত....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১০ রাত ৩:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





