গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষদের প্রাণের দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যদিও বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে ঢাক ঢাক গুড় গুড় আচরণ করে চলেছে, তাতে এই বিচার কতটুকু আমাদের প্রাণের দাবীটার স্বপক্ষে যাবে বুঝা যাচ্ছে না। তবুও সাধারণ জনগন হিসেবে আশায় বুক বাঁধতে চাই।
এই যুদ্ধাপরাধের মূল অভিযুক্ত হিসেবে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা। এই জামায়াতে ইসলামী নামক দলটি ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে তার জন্মলগ্ন থেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শীর্ষনেতাদের যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন ইসলামের দোহাই দিয়ে জামায়াতের কর্মীরা বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালায়। যা এখন পর্যন্ত জারী রয়েছে। জামায়াতের বর্তমান কর্মকান্ডে এটাই পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রমে যতটা সম্ভব বিঘ্ন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, এবং সেটা করবার জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে তারা ম্যানিপুলেট করবার যথেচ্ছ চেষ্টা করে যাবে। একই সাথে তারা মুসলিম বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করে তোলবারও জন্যেও প্রচারণা চালিয়ে যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি যতই সেক্যুলার একটা আবরণ নিয়ে থাকুক না কেনো তাদের অভ্যন্তরের চালিকা শক্তি ধর্ম। সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় ইসলাম ধর্মই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির মূল জ্বালানী। সেই জ্বালানী উস্কে দিলে আখেরে নিজেদেরই লাভ এটা ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করা জামায়াতে ইসলামি’র বুঝতে সমস্যা হবার কথা না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের হাইকোর্ট কয়েকটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। যার মধ্যে একটি হ’লো- ধর্মীয় পরিচয়বাহী পোষাক পরবার জন্য কোনো নাগরিককে বাধ্য করা যাবে না। যতক্ষণ একটি রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয় ধারণ করবে, ততক্ষণ সেই রাষ্ট্র কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ব্যক্তি অধিকারে অন্য নাগরিকের হস্তক্ষেপ অনুমোদন করতে পারে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় পরিচয়বাহী পোষাক পরতে নাগরিকেকে বাধ্য করবার বিপক্ষে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
এখন এই সাধারণ বিষয়টিকে কিছু সুবিধাবাদী ধর্মব্যবসায়ী এভাবে উপস্থাপন করছে, যাতে ইসলাম ধর্মানুসারীদের আবেগকে একটি নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করতে পারে। এই আবেগকে যদি মুষ্টিমেয় কিছু ধর্মব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তবে তারা মুসলিম বিশ্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের উপরে একটা চাপ সৃষ্টি করার মত অবস্থানে পৌছুবে। এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও একটা প্রভাব বিস্তারের মত অবস্থানে নিজেদেরকে দাঁড়া করাতে পারবে।
এই পর্যায়ে আসে জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারটা।
জাকির নায়েকের ব্যবসা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের ব্যখ্যার নামে সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে কাজ করা। অনেক ইসলাম ধর্মালম্বীর কাছেও জাকির নায়েকের ধুর্তামী পছন্দ না। তার বিভিন্ন বিষয়ে অতিজ্ঞানী বা জ্ঞানপাপী আচরণ কিংবা ইসলামের ভুল ব্যখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর উষ্মাও দেখা যায়। এহেন জাকির নায়েক এমন একটা সময়ে বাংলাদেশে সফর করতে আসছে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষ চক্র বিভিন্ন রনকৌশল নিয়ে সক্রিয়।
এই জাকির নায়েক যখন এরকম একটা ক্রুশিয়াল সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসছে তখন তার উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ মনে প্রশ্ন জাগাটা অমুলক নয় যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ভিন্নখাতে পরিচালনা করবার জন্যই কি এই উদ্যোগ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




