আমিরুল ফয়সল: শান্তিতে নোবেল জিতে দেশ ও জাতিকে অবিস্মরণীয়, অভূতপূর্ব এক আনন্দের উপলক্ষ উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক। নোবেল বিজয়ের পর থেকেই অভিনন্দনের বাঁধভাঙা জোয়ারে ভাসছেন ড. ইউনূস। উচ্ছ্বসিত আনন্দের মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের পেছনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবদান স্মরণ করেছেন তিনি। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি সেনাশাসক এরশাদের অবদানের কথাও ভুলেননি ড. ইউনূস। বলেছেন, 1983 সালে সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে এরশাদ সাহেব অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক আমার হাতে তুলে না দিলে আজ হয়তো এই পুরস্কার পেতাম না।
ড. ইউনূসের সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক আজকের অবস্থানে একদিনে পেঁৗছেনি। 1983 সালের 2 অক্টোবরের আগে এটি ছিলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর স্বতন্ত্র বিশেষ ব্যাংক হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যক্তিগত অর্থায়নে শুরু হলেও প্রথম 6 বছর বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের অর্থে পরিচালিত হয়েছে গ্রামীণ প্রকল্প। 1982 থেকে 1995 সাল পর্যন্ত এমনকি দাতাসংস্থাগুলো থেকে ঋণ ও অনুদান নিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। 1998 সালে সরকারের গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড ইসু করে স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। আমরা মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, নোবেল বিজয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের নেপথ্য সহযোগী সবার অবদানের কথা স্বীকার করলেও শুধু একটি পক্ষের সহযোগিতার কথা উচ্চারণ করেননি ড. ইউনূস। স্বীকৃতিবঞ্চিত এ পক্ষটির নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। 1983 সালে 3 কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কার্যক্রম শুরুর সময় সরকার ছিলো গ্রামীণ ব্যাংকের 60 ভাগ শেয়ারের মালিক। গত 23 বছরে অংশীদারিত্ব আনুপাতিক হারে কমলেও এখনো ব্যাংকটিতে সরকারের সিকিভাগ মালিকানা রয়ে গেছে। অংশীদারিত্বের বলেই গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও 12 পরিচালকের 3 জনকে মনোনীত করে সরকার। আমরা মনে করি, নোবেল বিজয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারও যে অংশীদার তা অস্বীকার করা কোনোক্রমেই সুবিবেচনার কাজ নয়। আর সরকারের টাকা যদি জনগণের টাকা হয় তবে আমরা মনে করি, গ্রামীণ ব্যাংক আসলে আপামর 15 কোটি মানুষের ব্যাংক।
বিজয় মানুষকে উদার করে। আমরা গ্রামীণ ব্যাংককে কখনোই কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতিষ্ঠান বলে মনে করি না। বরং আমরা মনে করি, গ্রামীণ ব্যাংকের আজকের নোবেল সাফল্যের পেছনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অবদানও কোনো অংশে কম নয়। ধীরে ধীরে শেয়ার কমিয়ে, ব্যবস্থাপনায় নিরঙ্কুশ কতর্ৃত্ব কমিয়ে সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কাজেই বিজয়ের আতিশয্যপূর্ণ এ উৎসবমুখর মুহূর্তে সরকারের অবদানের কথা স্বীকার করে নেওয়াই হবে প্রকৃত উদারতা। আবেগাপ্লুত ড. ইউনূস যদিও বলেছেন, এ বিজয় 'বাংলাদেশের বিজয়', তবুও আমরা মনে করি, সরকারের অবদানকে অস্বীকার করার অর্থ হবে আপামর জনগণকেই অস্বীকার করা। সম্পাদনা: শহীদুল ইসলাম
সুত্র: দৈনিক আমাদের সময়
18-10-2006
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



