ছোট বেলা থেকে পবিত্র শবেবরাত রজনীকে দোয়া কবুলেরর রজনী বলে জেনে আসছি। পাড়াপ্রতিবেশি, আত্নীয় স্বজন সবার বাড়িতে মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের আয়োজন হতো বিশেষ করে হালুয়া, রুটি, সেমাই ও পিঠা তো অবশ্যই থাকতেই হবে। সারাদিন আমরা কাচ্চাবাচ্চারা অদ্ভুত সুন্দর একটা আনন্দের আবহে মেতে থাকতাম। যদি স্কুল থাকতো তাহলে অপেক্ষায় থাকতম কখন স্কুল ছুটি হবে, এরপর বাড়িতে এসে সব বন্ধুরা মিলে নানা ধরনের লাইটের ব্যবস্থা করতাম, ড্যানিশ দুধের কৌটা কেটে সুন্দর করে খাঁজ কেটে তার ভেতর মম বাতির ব্যবস্থা করতাম। এর বাইরে লালনীল বাতিও থাকতো। বিকেলে হলেই শুরু হতো পাড়াপ্রতিবেশি, আত্নীয় স্বজনরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় খাবার বিনিময় করতো, ঠিক খাবার বিনিময় না বলে আনন্দ- সম্প্রীতি - ভালোবাসা বিনিময় বলা যায়৷ সবার ভেতর একধরনের সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠতো পবিত্র শবেবরাতকে কেন্দ্র করে। আমি আর ছোট ভাই মায়ের হাতের বানানো মিষ্টান্ন পাড়াপ্রতিবেশিদের বাড়িতে নিয়ে যেতাম, প্লেট খালি হাতে পাঠতো না তারাও তাদের বানানো মজার মজার সব জিনিস পাঠাতো। আবার তারাও পাঠাতো৷ ঐদিনটা আমাদের মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে, কেউ কোন ডাকাডাকি, বকাঝকা করতো না। সন্ধ্যে হলে সব বন্ধুরা মিলে নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়তাম মম বাতির লাইট হাতে, তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিলো না। পুরো এলাকায় ঘুরে ঘুরে সব মসজিদে নামাজ পড়তাম, সঙ্গে কিছুটা দুষ্টুমি করতাম। একেক মসজিদে যেতাম আর নতুন নতুন বন্ধুরা যুক্ত হতো আমাদের সঙ্গে। এলাকার কোনও মসজিদ বাদ রাখতাম না, পুরো এলাকা চষে বেড়াতাম। সব জায়গা থেকে মিষ্টি নিতাম তারপর অনেক রাত হতো যখন তখন প্রচন্ড ঘুম পেলে কখনো ঘরে ফিরতাম, কখনো বা বন্ধুর বাসায় রাতে থেকে যেতাম, কখনো হয়তো মসজিদের কোনে দলবেঁধে ঘুমিয়ে পড়তাম৷ সকাল হলে হিসেব করতাম কে কতো মসজিদে ঘুরেছি। আহা আনন্দের শেষ ছিলো না ঐ দিনগুলোতে। ঈদের পর সবচেয়ে আনন্দের রাত ছিলো শবেবরাত এর রাত।
তারপর সৌদি আরব এবং মধ্যেপ্রাচ্যের দালালী করে তাদের উচ্ছিষ্ট ভোগী একদল শায়কের(নট শায়েখ) আগমন হলো বাঙলার জমিনে, যাদের সবকিছুতেই চুলকানি। তাদের চোখে সবকিছুই বেদাত! শবেবরাত বেদাত, শবে মেরাজ বেদাত! রাসুলের শানে একটু দূরদ, দোয়া এবং শায়ের পাঠ করাও হারাম-বেদাত। নামাজে হাত ওঠানামা নিয়েও বেদাতের ফতোয়া! একটু মোনাজাতে আমি আমার রবের/সৃষ্টিকর্তার দরবারে কিছু চাইবো ঐটাও বেদাত! কেউ মারা গেছে সে উপলক্ষে এলাকার দরিদ্র মানুষদের খাওয়াবো ঐটাও বেদাত! সবাই মিলে একদিন রাসুলের শানে একটু মিলাদ পড়বো এটাও বেদাত! পুরো দুনিয়াটাই ঐ ভন্ড শায়েকদের চোখে বেদাত!
তবে ইহুদিদের ফেসবুকে, ইউটিউব, ইন্টারনেটে ব্যবহার করে ফতোয়াবাজি করা খুব হালাল, বিশাল এক ঘুমটার(আপনারা যেটা মিন করতাছেন এটা না, আমিও ওনার খুব ভক্ত) ফাঁকে মধ্যপ্রাচ্যের দালালি করা খুব আরাম! একদম ধর্মটাকে কাটছাঁট করে একটা বনসাই ধর্ম বানানো এদের ধান্দা। তর্কের খতিরে যদি মেনেও নেই এসবকিছু বেদাত, তাহলে তো পুরো দুনিয়াটাই বেদাত! কারণ বেদাত মানেই তো নতুন কিছু যুক্ত করা। আরেহ্ ভাই আমি শবেবরাতে নামজ পরে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে এটা বেদাত হতে যাবে কেন! আমি কি আল্লাহর কাছে নামাজ পরে কিছু চাইতে পারি না?? তাতে তোমার জ্বলে কেন? তুমি যে ঘুমটার ফাঁকে ভন্ডামো করো ঐটা বেদাত না? আমি আমার সৃষ্টি কর্তার কাছে জবাব দেবো, তোমাকে তো দিতে হবে না আমার প্রশ্নের জবাব। তোমরা বেদাত বেদাত করতে করতে ইসলামের যে কয়টা সম্প্রীতির- বন্ধনের - ভালোবাসার উৎসব ছিলো সব শেষ করে দিচ্ছো। কাটছাঁট করে একদম বনসাইয়ের মতো ইসলামটাকে বানিয়ে ফেলছো। এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে ইসলামের উৎসব বলতে আর কিছু নাই এজন্য হ্যালোইন, থার্টি-ফাস্ট, বালছাল করতে হয়। এই উৎসবগুলো যে হারাম-হালালের বাইরেও একটা ধর্মীয়-সম্প্রীতির সিগনিফিক্যান্স আছে এটা বুঝতে হবে। এই গুরুত্বটা না বুঝলে সব বেদাত মনে হবে। বছরের এই উৎসবগুলোতে সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়, ভালোবাসা বিনিময় হয়, পারস্পারিক ভাব বিনিময় হয় এতে সমাজিক বন্ধন মজবুত হয়।
ধন্যবাদ শায়েক এন্ডা ব্রাদার আস্কড অ্যা ভেরি গুড কোয়েশ্চন পার্টি!