somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রযুক্তি ধ্বংস করছে আপনার স্মৃতিশক্তি,

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, স্মৃতি মূলত
একপ্রকার জীবনযাপন। সত্যি বলতে স্মৃতি
মানুষের জীবনযাপনের বড় একটি অনুষঙ্গ।
জীবনের বড় ঘটনাগুলো স্মৃতি হিসেবে মানুষ
মনের মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। শুধু বড় ঘটনা
নয়, অনেক ছোটখাটো ঘটনাও স্মৃতিতে
জ্বলজ্বল করে। আগে মনে রাখার জন্য প্রধান
অবলম্বন ছিল স্মৃতি। কিন্তু এখন প্রেমিক বা
প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিন,
স্বজনদের জন্মদিন বা বিশেষ কোনো কাজের
কথা আর কষ্ট করে মনে রাখতে হয় না। আধুনিক
যুগে এসব কাজ করে দিচ্ছে প্রযুক্তি।
জীবনের সব স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি মোবাইল
ফোনই যথেষ্ট। স্মৃতিগুলো একবার
মোবাইলে ভরে ফেললে আর মনে গেঁথে
রাখার প্রয়োজন পড়ে না, উল্টো মোবাইলই
মনে করিয়ে দেয়। আর এর ফলে ধীরে
ধীরে আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখার
অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসছে। মানুষ দুর্বল
স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন হয়ে পড়ছে। পুরোপুরি
প্রযুক্তিনির্ভর না হয়ে মস্তিষ্কে স্মৃতি ধরে
রাখতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা-
ছবি তোলার আগে দৃশ্য গেঁথে নিন মনে
ছবিতে পরিপূর্ণ ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে মুগ্ধ
সবাই। সুন্দর মুহূর্ত ও ছবিগুলো ধরে রাখতে
আমরা ক্যামেরা তাক করি। দ্রুত ছবি তুলে বন্ধুদের
মাঝে সেই ছবি ছড়িয়ে দিতে চাই। কিন্তু ক্যামেরা
ব্যবহারের আগে অন্য কিছু করার
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২০১৩ সালে
ফেয়ারফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়,
সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য বা সুন্দর মানুষের ছবি তোলার
সময় ক্যামেরা ব্যবহারের প্রতিই মনোযোগ
থাকে আমাদের। কিন্তু ছবি তোলার আগে
নিজের চোখে তা উপভোগ করে নিতে হয়।
মস্তিষ্কে ওই ছবিটা স্মৃতিবদ্ধ না করলে আমরা
আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারব না।
স্মৃতি হিসেবে গ্রহণ করার পরই তা ক্যামেরাবন্দি
করা উচিত। ওই গবেষণায় প্রাপ্ত ফল এভাবেই ব্যাখ্যা
করেছেন প্রধান গবেষক লিন্ডা হেনকেল।
কোনো কিছুর সৌন্দর্য মন দিয়ে উপলব্ধি
করতে গেলে ও দৃশ্যের ভেতরের কিছু
ব্যাপারও বের হয়ে আসতে পারে। তখন ছবি
তুললে তা আরো মনোমুঙ্কর হতে পারে।
প্রযুক্তির ফাঁদে পা দেবেন না
আমরা একাধারে অনেক কাজ করি। হয়তো
কোনো কাজ করতে যাচ্ছি, তার আগে
ফেসবুকের আপডেট দেখে নিই, দু-একটা
চ্যাটের জবাব বা একটা টেক্সট মেসেজ পড়ে
নিই। একটা ছোট ভিডিও-ও হয়তো দেখে
ফেলি। আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে অনেক কাজ
করা সম্ভব। এ কথা সত্য, মানুষের মস্তিষ্ক একটি
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একযোগে তিন থেকে
পাঁচটি স্মৃতি একাধারে ধারণ করতে পারে। কিন্তু
কার্যকর স্মৃতি ধারণের জন্য প্রয়োজনীয়
সময়ের চেয়ে কম সময় দিলে দ্রুত ভুলে
যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন
সুইডেনের কেএইচটি রয়েল ইনস্টিটিউট অব
টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর
এরিক ফ্রানসেন।
এরিক বলেন, তাই বলে মস্তিষ্ককে বেশি
কাজের জন্য এক সপ্তাহ সময় দিতে হবে, তা কিন্তু
নয়। দু-এক মিনিট সময় দিলেই চলে। আমাদের
প্রতিদিনের কাজের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটায়
স্মার্টফোনের ব্যবহার। এটি ক্ষণে ক্ষণে
মনোযোগকে সরিয়ে নিয়ে যায়। সাধারণ কাজ
করতে করতেই আমরা মোবাইল দেখতে থাকি।
এতে অন্য কাজে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
আর কঠিন কোনো কাজ হলে তো কথাই নেই।
দেখা যায়, আধাঘণ্টার একটি জটিল কাজ করতে
গেলে ১০-১৫ মিনিট সময় ব্যয় হয় বিচ্ছিন্ন
মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে। ফলে
প্রযুক্তির এমন ফ্যাশনেবল ফাঁদে পা না দেওয়াই
উত্তম
সার্চ ইঞ্জিনের বদলে স্মৃতিকে কাজে লাগানোর
চেষ্টা করুন
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়,
ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনে প্রতিটি সার্চ প্রমাণ
করে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে জানা সাধারণ তথ্যগুলোও
মনে করতে পারি না। তা ছাড়া একটি শব্দ লিখেই সব
তথ্য যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে চিন্তা
করে তথ্য মনে করার চেষ্টাও করতে চায় না
কেউ। ওই গবেষকদলের প্রধান সাইকোলজির
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বেস্টি স্প্যারো বলেন,
মানুষ অনেক স্মৃতি ধরে রাখতে পারে। অথচ এখন
অধিকাংশ সময় আমরা বাইরের মেমোরির ওপর
নির্ভর করি। তাই সার্চ ইঞ্জিনের ওপর এতটা নির্ভর না
করে আমাদের আগে চিন্তার সুযোগ করে
নিতে হবে। আপনার স্মৃতিশক্তির কী অবস্থা,
অন্তত তা বুঝতে হলেও একটিবার ভেবে
কোনো তথ্য মনে করার চেষ্টা করুন।
কম্পিউটার, ট্যাব বা মোবাইলের পর্দায় কোনো
কিছু পড়ার চেয়ে কাগজে ছাপা কিছু পড়লে মানুষের
তথ্য ধারণ করতে বেশি সুবিধা হয়। ইন্টারন্যাশনাল
জার্নাল অব এডুকেশনাল রিসার্চের এক গবেষণায় এ
তথ্য জানানো হয়।
গভীর মনোযোগ ও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের
জন্য কাগজে পড়াটা বেশি কার্যকর। কারণ কাগজে
একটি নির্দিষ্ট স্থানে খবরটি থাকে। খবরটির সঙ্গে
খবরটির কোন কোন তথ্য কাগজের কোন
কোন অংশে ছিল তার একটি চিত্রও স্মৃতিবদ্ধ হয়ে
থাকে। পরে মনে করতে গেলে এই স্মৃতি
তথ্যগুলোকে স্পষ্ট করে তুলতে সহায়তা
করে। কিন্তু স্ক্রিনে কিছু পড়তে গেলে তা
স্ক্রল করে পড়তে হয়। এর নির্দিষ্ট অবস্থান
আমরা বুঝতে পারি না। তাই এর ছবি স্মৃতিঘরে ঠাঁই পায়
না। স্ক্রিনে কিছু পড়া হলে কিছু সময় পর সহজেই
তা ভুলে যাই আমরা। ওই পর্দাটার একটা ছবি শুধু মনে
গেঁথে থাকে। তাই আপনি যতই প্রযুক্তিবান্ধব
হোন, ছাপা কাগজের বই ও সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস
ধরে রাখুন। এতে স্মৃতি ধরে রাখার চর্চা হয়ে
যাবে। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজের মস্তিষ্ককে
ব্যবহার করুন। নয়তো আপনি হয়ে পড়বেন
স্মৃতিশূন্য মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×