যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসকে (আইআরএস) দিতে হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে এসব তথ্য দেয়া শুরু হবে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘দ্য ফরেন অ্যাকাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স অ্যাক্ট (এফএটিএসিএ)’ আইনটি প্রণয়ন করে, যা এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে আইনটি পরিপালনে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশটির নাগরিক ও গ্রিনকার্ডধারী ব্যক্তি যাদের ওই দেশে ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) আছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে যে আয় হয়, তা থেকে কর আদায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইএনধারী নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারী কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব থাকলে তার তথ্য ওই দেশের ইন্টারনাল আইআরএসকে দিতে হবে।
আইনটি পরিপালনে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় থেকে ৩০ শতাংশ হারে ‘উইথহোল্ড ট্যাক্স’ কাটা হবে বলে ওই আইনে উল্লেখ আছে।
আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারীর নাম, ব্যাংক হিসাব নম্বর, ঠিকানা, তার যুক্তরাষ্ট্রের টিআইএন নম্বর ও হিসাবের স্থিতি জানাতে হবে আইআরএসকে। বছরে একবার করে এ ধরনের তথ্য পাঠাতে হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ আশা করছে, এই আইনের বাস্তবায়ন হলে বছরে তাদের ন্যূনতম ৮০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় বাড়বে।
এই আইনটি পরিপালনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করছে। চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকার সেই দেশ থেকে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আইআরএসকে জানাবে।
কিন্তু কোনো দেশের সরকার চুক্তি করতে না চাইলে সেই দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইআরএসে সরাসরি নিবন্ধন করে এসব তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার এখনো এই আইন পরিপালনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি।
এজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি তথ্য দিবে। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইআরএসে নিবন্ধন করতে হবে।
তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ আইনে এ ধরনের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলে গ্রাহকের কাছ থেকে লিখিত অনাপত্তি নিয়ে তথ্য দেয়া যাবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে বলা আছে।
বাংলাদেশে এ ধরনের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে।
‘দ্য ব্যাংকার বুক অব এভিডেন্স এ্যাক্ট-১৮৯১’ এর ৫ ও ৬ ধারা অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ বা বিচারকের বিশেষ আদেশ ছাড়া ব্যাংকের বইতে লিপিবদ্ধ কোনো বিষয় বা গ্রাহকের হিসাব ও লেনদেন সম্পর্কে তথ্যের গোপনীয়তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা আছে।
এ কারণে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের তথ্য দেয়ার আগে তার কাছ থেকে লিখিতভাবে অনাপত্তি নিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কোনো গ্রাহক এ ধরনের অনাপত্তি দিতে না চাইলে তার হিসাব বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধারণা দিতে বাংলাদেশে কার্যরত যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংক এনএ আগামী ২৮ জানুয়ারি এক কর্মশালার আয়োজন করেছে। কর্মশালায় দেশে কার্যরত সব ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
ডিভি, স্টুডেন্ট ভিসা, প্রফেশনাল, বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণসহ বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশের কয়েক লাখ লোক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। যাদের অনেকেই ওই দেশে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, রয়েছে টিআইএনও।
এসব ব্যক্তিদের অনেকেরই দেশে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অথবা নিজস্ব আয়ের স্থাবর সম্পদ রয়েছে, যা থেকে আয় হচ্ছে। এখন থেকে এসব আয়ের বিপরীতেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আয়কর দিতে হবে।
Click This Link