অ্যাঙ্গরি বার্ডসের মতো বিভিন্ন অ্যাপকে কাজে লাগিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নানা তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা।
------------------------------------------------------------------------
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এবং যুক্তরাজ্যের গর্ভনমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টারস (জিসিএইচকিউ) এভাবে গোয়েন্দাগিরি করছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই দুই সংস্থার গোপন নথিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য সংগ্রহের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনকে বেছে নিয়েছে, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটে ফোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নানা তথ্য তাদের হাতে আসছে।
নতুন প্রজন্মের আইফোন ও অ্যানড্রয়েডের অ্যাপস থেকে ফোন ব্যবহারকারীর বিভিন্ন তথ্য নেয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, যার মধ্যে তার বয়স, লিঙ্গ ও অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে।
গোপন নথিতে দেখা গেছে, ফোন ব্যবহারকারীর যৌন সঙ্গী কে বা কারা-এর মতো ব্যক্তিগত তথ্যও অ্যাপের মাধ্যমে তাদের হাতে আসে। তিনি সমকামী বা বহুগামী কি না সে তথ্যও তারা জানতে পারেন।
এনএসএর সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের দেয়া নথি উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
এতে বলা হয়, ক্যাবল ট্যাপস ও ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল নেটওয়ার্কসে ব্যাপকভাবে নজরদারির পাশাপাশি স্মার্টফোনের অ্যাপস থেকে তথ্য হাতানোর মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিপুল সংখ্যায় মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ করছে।
সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্পর্কিত তথ্য সহযোগীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করায় ফোন থেকে তথ্য সংগ্রহকে খুবই গুরত্বের সঙ্গে নিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে বলেও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
স্মার্টফোন থেকে তথ্য নিয়ে গোয়েন্দারা কিভাবে কাজে লাগাতে পারে সে সম্পর্কিত ব্যাখ্যাও উঠে এসেছে গোপন নথিতে।
এনএসএর একটি গোপন প্রেজেন্টেশনে ২০১০ সালের মে মাসে স্মার্টফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের চিত্র তুলে ধরা হয়, যাতে নজরদারিতে থাকা কোনো ব্যবহারকারী তার ফোন থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় একটি আলোকচিত্র আপলোড করলে তা থেকে গোয়েন্দারা কিভাবে তথ্য পেতে পারে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ফোন ব্যবহারকারীর একটি ‘সম্ভাব্য প্রতিকৃতি’, যাদের সঙ্গে ইমেইল আদান-প্রদান করেন তাদের তালিকা, ফোন, ‘বন্ধুতালিকা’ এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন তথ্য ও তার অবস্থান জানতে পারেন।
গ্রাহক ইন্টারনেটে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজস্ব প্রোফাইলে যেসব তথ্য দেন তার প্রায় পুরোটাই সংগ্রহ করতে পারেন গোয়েন্দারা।
তিনি কোন দেশের নাগরিক, তার বর্তমান অবস্থান, বয়স, লিঙ্গ, জিপ কোড, বিবাহিত না অবিবাহিত, ডিভোর্স বা বহুগামী কি না, আয়, জাতিগোষ্ঠী, যৌন সঙ্গী, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছেলে-মেয়ের সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য পেয়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে গুগল ম্যাপেরও সহায়তা নেয় তারা।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউর কর্মীদের নির্দেশনামূলক একটি গোপন নথি গার্ডিয়ানের হাতে এসেছে, যাতে স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ থেকে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যানড্রয়েড অ্যাপস ব্যবহার করে জিসিএইচকিউ লিখেছে, একটি অ্যানড্রয়েড ও আইফোনে সংরক্ষিত যে কোনো তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়।
জনপ্রিয় মোবাইল ফোন গেম অ্যাঙ্গরি বার্ডস ব্যবহার করে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা যায় তারও একটি তালিকা করেছে জিসিএইচকিউ। এ অ্যাপ্লিকেশনটি ১৭০ কোটির বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে।
অ্যাঙ্গরি বার্ডসের নির্মাতা রোভিও বলেছে, তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারীদের থেকে এনএসএ বা জিসিএইচকিউ তথ্য সংগ্রহ করছে বলে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
রোভিওর মার্কেটিং ও কমিউনিশন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা বেরগস্ট্রোম বলেন, “এ বিষয়ে রোভিওর কোনো ধারণা নেই। ওই সব সংস্থার (এনএসএ ও জিসিএইচকিউ) সঙ্গেও আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
অ্যাপসের মাধ্যমে ফোন ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এনএসএর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও জিসিএইচকিউ বলেছে, যুক্তরাজ্যের আইন লংঘন করে তারা কিছু করে না।
“গোয়েন্দা সম্পর্কিত বিষয়ে বক্তব্য না দেয়া আমাদের দীর্ঘদিনের নীতি,” বলেন সংস্থাটির এক মুখপাত্র।
Click This Link