somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাদের দেশ নিয়ে আমেরিকানদের এ্যনালাইসিস।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মি. স্মিথের সারাটি দিন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়। কিন্তু নিত্যদিনের ভোগ্যপণ্যের প্রায় সবটাই আমদানি করে নানা দেশ থেকে। এ নিয়ে সে দেশের মানুষ কম ক্ষুব্ধ নয়। দেশে কল-কারখানা গড়ার নাম নেই, কেবলই আমদানি। দেশের মানুষের চাকরি নেই, কেবলই বিদেশীদের ডেকে এনে কাজে লাগানো! সব আমেরিকানের মনেই এখন এই ক্ষোভ।
সম্প্রতি সে দেশের এক নির্বাচনী সভায় একজন প্রার্থী সেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন : এখন এ দেশে মার্কিন ডলার ছাড়া আর কিছুই উৎপাদিত হয় না। বিষয়টা বোঝানোর জন্য তিনি একজন মার্কিন নাগরিক জন স্মিথের একদিনের জীবনকে এভাবে তুলে ধরেন :
জন স্মিথ তার দিন শুরু করলেন ভোর ৬টায় এলার্ম দেয়া ঘড়ির শব্দে, ঘড়িটি Made in Japan; তিনি তার কফি পট অন করলেন, সেটি Made in China; কফিতে চুমুক দিয়ে তিনি শেভিং রেজার হাতে নিলেন, সেটি Made in Hong Kong; শেভ করার পর সুন্দর একটি জামা পরলেন, Made in Bangladesh; পরলেন একটা ডিজাইনার জিন্স, Made in Srilanka; এবং টেনিস শর্ট, Made in Korea; নাস্তা রেডি করতে থাকলেন ইলেকট্রিক চুলায়, Made in India; তারপর তার সারা দিনের খরচের হিসাব স্থির করার জন্য হাতে নিলেন ক্যালকুলেটর, Made in Mexico; পরলেন হাত ঘড়ি, Made in Taiwan; সময় মিলিয়ে নিলেন রেডিওর সঙ্গে, Made in Singapore; গাড়ি বের করলেন, Made in German; তাতে পেট্রল ভরলেন, Made in Saudi Arabia। গাড়ি চালিয়ে একটা ভালো বেতনের American job খোঁজার জন্য তিনি এখানে সেখানে ঢুঁ মারলেন। তারপর ঘরে ফিরে ইন্টারনেটে ঢুকতে কম্পিউটারে বসলেন, Made in Malaysia। কম্পিউটারে ঘণ্টাখানেক চাকরি খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে বিশ্রাম নিতে মনস্ত করে পায়ে দিলেন স্যান্ডেল, Made in Brazil; ফ্রিজ খুললেন, Made in Austria; সেখান থেকে নিলেন এক গ্লাস ওয়াইন, Made in France; তারপর গিয়ে বসলেন টিভির সামনে, Made in Indonesia।
জন স্মিথ টিভির সামনে বসে ভাবতে থাকলেন, আচ্ছা গোটা আমেরিকায় আমার একটা ভালো চাকরি জুটছে না কেন? স্থির করলেন, এ ব্যাপারে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের শরণাপন্ন হবেন। হায়, সেটাও যে Made in Kenya!!!
আমেরিকার কোনো নির্বাচনী সভায় কেউ সত্যই এমন বক্তৃতা করেছেন কিনা জানি না।
তবে শুনেছি এটি এখন যুক্তরাষ্ট্রেও খুব চালু। একে কৌতুক বলে অভিহিত করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভোগ্যপণ্যের বাজারের চিত্রটি এর চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়।

বাংলাদেশের চিত্রটা কেমন ??
যুক্তরাষ্ট্রের মি. জন স্মিথকে তার সারা দিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজতে হয় দুনিয়াজুড়ে। জাপান থেকে মেক্সিকো অবধি। আমাদের কিন্তু তেমন কষ্ট করতে হচ্ছে না। এদিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের চেয়ে আমরা অনেক ভাগ্যবান। আমাদের সারা দুনিয়া থেকে একটি একটি করে পণ্য খুঁজে আনতে হচ্ছে না। এখন একটামাত্র দেশ থেকেই আমাদের জীবনের সব চাওয়া মিটে যাচ্ছে।
যেমন ধরুন,
বাংলাদেশের একজন উচ্চশিক্ষিতা মহিলা মিসেস চৌধুরী। সুগৃহিণী। সন্তানদের মানুষ করতে তার চিন্তার শেষ নেই। উচ্চশিক্ষিতা বলেই এই হতচ্ছাড়া দেশের খানাপিনায় তার অরুচি। বিশেষ করে সন্তানদের খাবার-দাবারে বিদেশী ছাড়া কোনো কিছুতেই তিনি হাত দিতে নারাজ। এমনকি শাকসবজিও। মি. জন স্মিথের একদিনের জীবন আমরা দেখেছি। এবারে মিসেস চৌধুরীর একটি দিনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।
মিসেস চৌধুরী সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করলেন বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে বের হবেন। বের হওয়ার আগে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, বলাবাহুল্য আয়নাটি Made in India; অতঃপর ওয়াশরুমে ঢুকে প্রথমে দাঁত মাজলেন তার প্রিয় টুথপেস্ট দিয়ে, Made in India; তারপর মুখে সাবান ঘষলেন, Made in India; ফেস্ ওয়াশ ব্যবহার করলেন,Made in India; মুখ মুছলেন টাওয়েলে, Made in India। এবারে একটু মেকআপ করা প্রয়োজন। মুখে পাউডার মাখলেন, Made in India; লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙালেন, Made in India। মেকআপ শেষে জামা-কাপড় পাল্টাতে মনোনিবেশ করে বেছে নিয়েছেন একটা প্রিয় শাড়ি, Made in India; পরে নিলেন হাতে চুড়ি, কানে দুল, গলার মালা, অবশ্যই সব Made in India; সব শেষে পায়ে দিলেন বাহারি চপ্পল, Made in India: কব্জিতে ঝুলিয়েছেন ফুটানি কা ডিবিয়া, Made in India; তারপর বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো গাড়িতে চড়লেন, Made in India। ঢুকলেন নগরীর অভিজাত এলাকার সর্বাধুনিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। ঢুকেই সোজা চলে গেলেন খাদ্য সামগ্রীর এলাকায়। মিসেস চৌধুরী তার বাচ্চাদের জন্য বাস্কেট ভরতে থাকলেন। প্রথমেই সকালের নাস্তা- চিজ, মার্জারিন, চিপস, চোকোস, Made in India; তারপর রকমারি চকোলেট, টফি, ওয়েফার, Made in India; বাদাম, Made in India; মিল্ক পাউডার, Made in India; হরলিক্স, Made in India; এপল জুস্, Made in India; ঢাউস সাইজের কয়েক প্যাকেট বিস্কিট, Made in India; সব শেষে নিজের জন্য পান মাসালা, Made in India।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×