আজ সোমবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বের শতাধিক দেশে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কয়টি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের মত অন্যতম বাংলাদেশ। আর এই দেশের নাগরিক হিসেবে যা কিছু নিয়ে গর্ব করি তাঁর মধ্যে “মেইড ইন বাংলাদেশ” লেখা পোশাকের গাঁয়ের লেবেল অন্যতম।ইউরোপ আমেরিকার নামী-দামী ব্র্যান্ডের দোকানে যেকোন পোশাক দেখলেই আমার প্রধান আকর্ষণ লেবেল। দোকানের কর্মচারী মনে করেন দাম চেক করছি আসলে মনের ভিতর অন্য কিছু, খুঁজে বেড়াই “মেইড ইন বাংলাদেশ” আর মিলে গেলেই একটা প্রশান্তি কাজ করে। আমাদের গর্বের “মেইড ইন বাংলাদেশ” ইতিমধ্যে চীনের পরের শ্রেষ্ঠতম স্থান দখল করে রেখেছে। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মালিক শ্রমিকের যৌথ সহায়তায় এগিয়েও যাচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত। সামনে নতুন টার্গেট ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানী।রানা প্লাজা ধ্বসের মত বড় ধাক্কাও সেই টার্গেট থেকে দূরে সরাতে পারেনি আমাদের সরকারসহ পোশাক খাতের নিপুন কারিগরদের। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঘরোয়া আলোচনা করতে গিয়ে উঠে এল ধমকে যাওয়ার মত কিছু তথ্য। তুলা উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার মত উপযুক্ত একটি ডেনিম প্যান্ট উৎপাদনে মোট ১০০০০ লিটার পানির খরচ হয় যার বড় অংশ খরচ হয় ডাইয়িং প্রসেসে। টাকা পয়সার মূল্যমানে পানির মূল্য নির্ধারণ বোকামী ছাড়া কিছুই নয় বুঝেও মনের সান্ত্বনার জন্য হিসেব কষতে গিয়ে পেলাম ওয়াসার (শিল্প কারখানাগুলি সাধারনত ওয়াসার পানি ব্যবহার করেনা) বর্তমান পানির মূল্য গ্রাহক পর্যায়ে ০১ পয়সা লিটার (১০০০ লিটার পানির মূল্য ১০ টাকা) হলে ১০০০০ লিটার পানির মূল্য ১০০ টাকা। কারখানাগুলি নিশ্চয়ই লসে থাকা ওয়াসার চেয়ে কম খরচে মাটির নিচ থেকে পানি উঠাতে পারেন না। গভীর থেকে উত্তোলিত পানি ডাইং এ ব্যবহারের জন্য করতে আবার পানিকে একটি প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত করতে হয়। সেখানেও রয়েছে খরচ। এবার ডাইয়িং ও ওয়াশিং (ওয়েট প্রসেস) এ ব্যবহৃত পানিকে কেমিক্যাল থেকে আলাদা করার (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট) ব্যবহৃত পানির মূল্য থেকে ৩ গুন। তাহলে একটি জিন্স প্যান্ট তৈরিতে আমাদের হিসেবযোগ্য খরচ কত? আর আলো, বাতাস, পানি সহ আমাদের পরিবেশের মূল্য কত?আমাদের দেশের শিল্প মালিকেরা দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আইন মেনেই শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, সরকারের কাছে অঙ্গিকারবদ্ধ ডাইং শিল্পগুলোতে ইটিপি থাকা বাধ্যতা মূলক। ইটিপির বর্জ্য শোধন করাও বাধ্যতামূলক। যা সঠিক ভাবে তদারকির দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এই দপ্তরের সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্থতার কারণে শিল্প মালিক গণ প্রতিনিয়ত অপরিশোধিত বর্জ্য নিষ্কাষন করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর নাম মাত্র পরিদর্শনের নামে ও সামান্য উৎকোচের বিনিময়ে টেক্সটাইল গুলোকে ছাড়পত্র প্রদান করে থাকে। প্রকৃত অর্থে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ইটিপির বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থাতেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নালায়। যা খুব সহজেই মিশে যাচ্ছে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের পানির সাথে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হয়ত বলবেন নানা অপর্যাপ্ততার কথা, কিন্তু খোঁজ নিলে হয়ত জানা যাবে সেখানেও আছে অনিয়ম আর দুর্নীতির এক বিশাল অধ্যায়।
আজ পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষণের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছে। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদানেরই নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা আছে। আর যখন দূষণ ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখনই ভারসাম্য হারায় পরিবেশ। নগরায়ন, শিল্পায়ন, বনভূমি উজাড়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া প্রভৃতি কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দূষণের ভয়াবহতার কবলে পড়ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এই দূষণের কারণে পৃথিবী থেকে আজ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি টন কার্বন মনোঅক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বৃষ্টির পানিতে এসিডের পরিমাণ বাড়ছে। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টির কারণ পরিবেশ দূষণ। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পরিবেশের এই ভয়াবহ দূষণে পৃথিবী পৃষ্ঠের বহু জায়গা বন্যায় প্লাবিত হবে ও তুষারপাতে জমাট বেঁধে যাবে। বর্তমানে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ মানুষ পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে চায়। তাই বিশ্বকে বসবাসযোগ্য করার লক্ষ্যে দূষণমুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।আসলে নিজেকে না বদলাতে পারলে সমাজ নিজে নিজে বদলে যায়না। সমাজকে বদলাতে হলে, সমাজের প্রতিটি ইউনিট বা খন্ড খন্ড অংশকে আগে বদলাতে হবে। বদলাতে হবে আমাদের সবার মানসিকতা। তবেই পৃথিবীটা আমাদের সবার জন্য এবং আগামী অধিবাসিদের জন্য হবে বসবাসের উপযোগি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০১