somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মবাদী-রাজাকারী আসত্দ-মনতত্ত্ব- 3

১১ ই জুন, ২০০৬ ভোর ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে কোনও জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধেই অনেক সাদা রঙ কালো হয়, অনেক কালো আবার সাদাও হয়ে যায়, তবে সে জন্য লাল রঙের যে বন্যা বয়ে যায় তা ভয়ানক। এদিক দিয়ে আমার বাবারা ভাগ্যবান। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের শরীরের একটা পশমও ঝরে নাই। তারা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে পাকিসত্দানী সেনা বাহিনীর দেওয়া নিরাপত্তায় বেশ আরামেই ছিলেন। আমার বাবারা তখন সংবাদপত্রে প্রতিদিন বিবৃতি দিয়েছেন, আহ্বান জানিয়েছেন ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানকে, যাতে তারা ভারতের ইশারায় না নেচে প্রকৃত মুসলমানের মতো পাকিসত্দানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। কিন্তু আমি তো বার বারই বলেছি যে, বাঙালির ঘি সোজা আঙুলে ওঠে না, আঙুলটা বাঁকা করতে হয়। আমার বাবারা সেই চেষ্টা যথেষ্টই করেছিলেন কিন্তু ভারতের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আর পাকিসত্দানের বন্ধু আমেরিকা কিংবা চীনও তেমন একটা সাহায্য করেনি, করলে আজকে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। যদিও এই দু'টি দেশই পরে আমাদের বাবাদের অনেক সহযোগিতা করেছে, কিন্তু সে কথায় পরে আসছি। আগে একাত্তরের কথা শেষ করে নেই।

একাত্তরের যুদ্ধ ছিল জল আর পানির, অন্যকথায় হিন্দু আর মুসলমানের। আমার বাবারা মুসলমানের পৰে কাজ করেছেন, অস্ত্র ধরেননি বটে কিন্তু আমাদের বাবাদের সাহায্য না পেলে পাকিসত্দানী বাহিনীর পৰে বাংলাদেশের মাটিতে তিন মাসও যুদ্ধ করা সম্ভব হতো না। আমার বাবাদের কারণেই তারা নয় মাস পর্যনত্দ যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। এমনিতে বাঙালি খুব বিভ্রানত্দ আর অনৈক্যের জাতি, কিন্তু এই একাত্তরে এসে তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি যেনো আর সব জাতির ইতিহাসকে হার মানালো। বাবার কাছে তার এক বন্ধুর একটি ডায়েরী ছিল, আমি সেটি চুরি করে পড়ে ফেলেছিলাম। এমনিতে বাবা তার ওই বন্ধু সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠতেন, বলতেন, "ওই গাদ্দারটার কথা বলো না। ওর মতো ব্রিলিয়ান্ট আর পরিষ্কার মাথার মানুষ খুব কম আছে কিন্তু শেষ মুহূর্তে ও আমাদের ছেড়ে গেলো। কিন্তু গিয়ে কী লাভ হলো? সেই তো পাকিসত্দানী সেনাদের গুলিতে মরতে হলো। আমার একটুও দুঃখ হয় না ওর জন্য, ও মোনাফেক, আমাদের সঙ্গে মোনাফেকি করেছে। আমাদের কথা পাচার করে দিয়েছে মুক্তির কাছে। আমরাই ওকে ধরিয়ে দিয়েছি পাকিসত্দানী সেনা বাহিনীর কাছে। বেজন্মা কোথাকার, অথচ আমাদের কতো ভালো বন্ধুত্ব ছিল জানো? এই জন্যই তোমাদের বলি, মানুষকে পুরোপুরি কখনও বিশ্বাস করবে না। ইসলামেই বলা আছে এ কথা, একমাত্র আলস্নাহ্ আর তার রসুল ছাড়া আর কাউকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাবে না, বুঝলে?"।

বাবা তার এই বন্ধু সম্পর্কে কথা উঠলেই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন। মনে হতো বাবা কি যেনো লুকোতে চাইছেন আমাদের কাছে। হঠাৎই একদিন বাবার টেবিলের ড্রয়ারে একটি ডায়েরী পেয়ে যাই। দেখি নাম লেখা তওফিকুল ইসলাম। বুঝতে পারলাম ডায়েরিটি কার। আমি পড়তে শুরম্ন করলাম। দেখলাম ডায়েরীর শুরম্নতেই তারিখ দেওয়া আছে ঊনিশশ একাত্তর সালের এপ্রিল মাসের দিকের।


" আমার আগের ডায়েরীটা হারাইয়া গেছে। এখন আবার নতুন কইরা ডিসেম্বর থিকা এপ্রিল পর্যনত্দ ঘটনাগুলি লিখতে হবে। যদিও অনেক ঘটনাই ভুইলা গেছি। না ভুইলা উপায় কি, দেশের যা অবস্থা তাতে মাথা ঠিক রাখা যায় না। মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা যে পথে হাঁটতাছি সেই পথ সঠিক কি না। মানুষকে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য আমরা কাজ করি, কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার কইরা রাজনীতি করবো এমন কথাতো কখনও ভাবি নাই। আমরা যখন ট্রেনিং নেই তখন আমাদের বলা হইছিল যে, বাংলাদেশের মানুষ মূলতঃ অশিৰিত, তারা নামাজ-রোজার জন্য সুরা কিংবা দোয়া-দুরম্নদ কিছুই জানে না। আমরা বিনা পারিশ্রমিকে বাংলাদেশের মানুষকে ধর্মশিৰা দিমু।


কতোদিন কতো গ্রামে হাঁইটা হাঁইটা এইসব কাম করছি। কতো মাইনষের ঘরে যে ভাত খাইছি তার শেষ নাই। মানুষগুলোর নিরন্ন মুখ, তারপরও তাদের চোখেমুখে সুখ ভাসে, দেখতে খুব ভালো লাগে। তারা সরল, ধর্ম আর পরকালের কথায় তারা জানপ্রাণ দিয়ে দিতে পারে। নিজে না খেয়ে আমাদের পাতে খাবার তুলে দিয়েছে। যারা পারেনি তারা তাদের গাছের সবচেয়ে বড় ডালিমটা, পাকা আমগুলি কিংবা সবচেয়ে বড় কদুটি এসে আমাদের সামনে রেখেছে। আমরা সব নিতে পারিনি, কিন্তু তাতে তারা কষ্ট পেতো দেখে শেষের দিকে নিতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গ্রামের এই সরল-সোজা মানুষগুলোর সঙ্গে মিশতে আমার দারম্নণ ভালো লাগতো।


আমরা দিতাম ধর্মের দাওয়াত আর ওরা ইউনিয়নের ছেলেপেলেদের দেখতাম এই পৃথিবীতে শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরম্নদ্ধে কৃষকের সঙ্গে কথা বলতে। লাঙ্গল যার জমি তার, আর যার হাতে কাঁচি থাকবে ফসলে তারই অধিকার _ আমাদের ধর্মকথার সঙ্গে লাল ঝাণ্ডাওয়ালাদের এসব কথাও ওইসব মানুষেরা মন দিয়ে শুনতো। ওরা কিনত্দু কখনওই আমাদের বিরম্নদ্ধে কিছু বলেনি কিন্তু আমাদের পার্টি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওদের বিরম্নদ্ধে সাধারণ মানুষকে বলতে যে, ওরা ধর্মহীন, ওরা নাসত্দিক, ওরা আলস্নাহ্ খোদায় বিশ্বাস করে না। কিন্তু আমার পরিচিত অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেপেলের সঙ্গে মিশে দেখেছি ওরা লাল রাজনীতি করে ঠিকই আবার নামাজ-রোজাও করে।


আমার মাঝে মাঝে মনে হতো, পেটে ুদা রেখে এবাদত করলে আলস্নাহ্র ধ্যানে কতোটা মশগুল হওয়া সম্ভব হবে? একজন চাষা সারাদিন জমিতে কাজ করে সন্ধ্যায় এসে কানত্দ শরীরে খাবার না পেয়ে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে তাতে আলস্নাহ্র চিনত্দার চেয়ে যে পেটের চিনত্দাই প্রাধান্য পাবে সেইটাইতো স্বাভাবিক। অথচ এই সব নিয়া পার্টির নেতা কিংবা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের লগে কথা কইতে চাইলেও তারা আমারে থামাইয়া দেয়। তারা কয়, তোমারে যা করতে কইছে তুমি তাই করো। কিন্তু আমি তা করতে পারি না, আমার খারাপ লাগে খুব। আমি গিয়া খোঁজ লই মাইনষের দুঃখ-কষ্টের, পকেটে দুই এক টাকা যা থাকে তাই-ই দিয়া আসি অগো হাতে। একদিন এই সব জানাজানি হইয়া গেলে আমারে আর মাইনষের কাছে যাইতে দেওয়া হয় না। অফিসে বসাইয়া দেওয়া হয় অন্য কাজ দিয়া।


আমার খারাপ লাগে না। আমি কাজ করতে চাই, যে কোনও কাজ হইলেই চলে। আমার তখন কাজ হইলো যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনে অফিসকে জানানো। অফিসের আরও সবাই মিলে এই আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করবে এবং সেটা পাকিসত্দান সরকারের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হবে। আমি আমার আমার পরিচিত, অপরিচিত অনেক আন্দোলনকারীর সঙ্গে কথা বললাম। আমাদের বলা হয়েছিল যে, যারা পাকিসত্দান ভেঙে বাংলাদেশ করতে চায় তারা মুসলমান না, তারা হিন্দু, তারা ইসলামের শত্রম্ন। কিন্তু তাদের মধ্যে ইসলামের শত্রম্ন কাউকে আমি খুঁজে পেলাম না। তারাও ইসলামে বিশ্বাস করে, নামাজ-রোজা করে, তাদের পরিবারও আমার পরিবারের মতোই ধর্মভীরম্ন। হঁ্যা, এদের মধ্যে অনেক হিন্দু ছেলেপেলে আছে কিন্তু তাদেরকে ইসলামের শত্রম্ন বলে কাউকে আমি আলাদা করে চিনতে পারি নাই। আমি যখন এই সব নিয়া আমার রিপোর্ট দিলাম তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আমাগো দলের ছাত্র কমান্ডের নেতৃত্ব দেয়, সে আমার দিকে অনেকৰণ চাইয়া থাইক্যা কয়, আমারে দিয়া নাকি কিছু হবে না। আমি নাকি সত্যিকারের মুসলমান না। আমার ঈমাণ নাকি খাঁটি না। রাগলে আমার বন্ধুর চোখমুখ চকচক করে, ফর্সা কপালটা ঘেমে যায় আর নাকের পাটা ফুলতে থাকে। আমি ওর সামনে থাইক্যা সইরা যাই।

যখন যুদ্ধ লাগলো তখন আমাগো কাম বাইড়া গেলো। আমি আসলে বুঝলাম না, পাকিসত্দান যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই হবে তাইলে ক্যান নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনকারী দলটারে সরকার গঠন করতে দেওয়া হইলো না? আমার উদর্ুজ্ঞান অতো ভালো আছিলো না। আমার বন্ধুরা কিংবা নেতারা দেখতাম ঘন ঘন মিটিং করে সেনা অফিসারগো লগে। আমারে সেই সব মিটিংয়ে থাকতে দেয় না কেউ। আমারও আগ্রহ হয় না খুব একটা। আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম, অতো দূরে পাকিসত্দান, যাগোরে চিনি না, যাগোরে ভালা করি বুঝি না, যাগোর বুলিও আমাগো মতোন না, যারা আমাগো মতোন ভাত-মাছা খায় না, উল্টা আমাগো গাইল পারে মাছলিখোর কইয়া, আমাগো কয় বেদাতি মুসলমান, হেগোর লাইগ্যা আমাগো পার্টির অতো দরদ কিয়ের লাইগ্যা? সবচেয়ে খারাপ লাগতো আমাগো সামনেই আমাগো পার্টির বড় বড় নেতাগো সেনা অফিসাররা বহেনচোৎ কইয়া গাইল পাড়তো। কইতো, তুমলোগকো কিসলিয়ে রাখ্যা গ্যায়া হ্যায়, হামারি টাটটে খুরম্নকনে কে লিয়ে? যাও যাকে উন বাস্টার্ডলোগকো ভার্সিটি এরিয়া সে ধাক্কে মারকে নিকালো। আগার নেহি কার সাকতে তো যাও তুমহারি মাকি চুতমে যাকে ঘুসকে ব্যাঠে রাহো... ওই সময় এসবের অর্থ বুঝতাম না। যুদ্ধের পর থেকেই আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সেনা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতাছি, তাই ওদের কথা এখন মোটামুটি বুঝি। তাই সেই সব কথা আমার কানে খুব বাজে। খুব খারাপ লাগে, আমার নেতারা সেই সব গালি শুনেও হাসি হাসি মুখ করে থাকতেন, তাদের চেহারা দেখে মনে হতো, ওগুলি গালি নয়, আশীর্বাদ।

ওই সব মিটিং-এর পরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি করতে হতো লীগ কিংবা ইউনিয়নের ছেলেদের সঙ্গে কিন্তু আমরা পারতাম না, সংখ্যায় আমরা কম। কিন্তু পুলিশ আমাদের সাহায্য করতো। ওদের মিটিং-এ মিছিলে আমরা পুুলিশের সঙ্গে মিলে হামলা করতাম, পরে আমাদের সবাইকে ঠাটারি বাজারে বিহারীদের দোকানের কষা মাংস আর নান খাওয়ানো হতো। আমরা কব্জি ডুবিয়ে খেতাম। যেনো আমরা সালাহউদ্দিনের সিপাহী, খ্রীস্টানদের সঙ্গে ক্রুসেড লড়ে এসেছি, বিহারীরা আমাদের সেই মর্যাদাই দিতো তখন।

কিন্তু যুদ্ধ লাগার পরে সমসত্দ পরিস্থিতি পাল্টাইয়া গেলো। ওরা চইলা গেলো ভারতে ট্রেনিং লইতে। ঢাকা শহর বলতে গেলে আমাগো দখলে। কিন্তু মাঝে মইদ্যেই ওরা কই থিকা যেনো ঝাঁকে ঝাঁকে আইয়া পাকিসত্দানী সেনা বাহিনীর উপর হামলা চালায়। আর আমি আমার বন্ধুর দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী বিভিন্ন বাড়িতে লইয়া যাই পাকিসত্দানী বাহিনীরে। তারা সেই সব বাড়িতে গিয়া মানুষ মারে, যুবতী মাইয়াগো ধইরা আনে, ঘর পোড়াইয়া দেয়। পোড়ানোর আগে আমাগোরে কয় লুট করতে। আমরা লুট করি, অর্ধেক নিয়া জমা করি রাজারবাগে আর বাকিটা আমাগো দলের মাইনষে লইয়া যায়। আমাগো নেতা গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ প্রতিদিন সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন পাকিসত্দানের লাইগ্যা।

পহেলা এপ্রিলের কথা। আমরা পুরোনো ঢাকায় একটা বাড়িতে গেছি, সঙ্গে পনের জন খান সেনা। আমার বন্ধুর লিস্টে এই বাড়ির নাম লেখা। বাড়ির মালিকের নাম অজিত গুহ। পেশায় কলেজের শিৰক। ছোট্ট দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে সুন্দর ফুলের বাগান। তখন বিকেল বেলা, অনেক সন্ধ্যা মালতী ফুটে আছে। তুলসী মণ্ডপটা উঠোনের ঠিক মাঝখানে। আমরা ঢুকতেই চারদিকে কেমন কান্নাকাটির রোল পড়ে গেলো। প্রায় বুড়ো ভদ্রলোককে ধরে এনে উঠোনে তুলসি গাছের পাশেই গুলি করে মারা হলো। তারপর বাড়ির দুইজন বৃদ্ধাকেও গুলি করলো ওরা। একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল অল্প বয়েসী একটি বউ। সে বিছানা থেকে উঠার সুযোগও পেলো না। তার শিশুটিকে তার বুক থেকে ছিনিয়ে নিলো একজন খনা সেনা। তারপর বন্দুকের নলের আগায় যে ছুরির মতো ফলা থাকে তাতে গেঁথে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। আর অফিসার গোছের লোকটি ভিতরে ঢুকে মেয়েটিকে হিড়হিড় করে টেনে বের করে আনলো।

মেয়েটির শরীর থেকে শাড়ি-বস্নাউজ সব খুলে ফেললো। ঘরে আরও একজন মহিলা আর একটি কিশোরী ছিল। সবাইকে গাড়িতে তোলা হলো, গাড়িতে বসেই ওরা শুরম্ন করলো মেয়েদের ওপর আক্রমণ। কেউ হাত দিয়ে টিপ দেয় মেয়েদের বুকে, কেউ তাদের গাল কামড়ে ধরে। কেউ বা বন্দুকের আগায় ওই ছুরির ফলা দিয়ে মেয়েদের পেটে খোঁচা দেয়। গাড়ির মধ্যেই ওরা কেউ কেউ ওদের ধন বের করে ঠেসে ধরে মেয়েদের মুখের ওপর। আমার আর সেসব সহ্য হচ্ছিলো না, আমি ওদেরকে অনুরোধ করি আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে। ওরা খেঁকিয়ে ওঠে, হাসে আমার দিকে তাকিয়ে। বলে, কিউ মুফতমে শালে চুত মারওয়ানা দেখ রাহে হো, আচ্ছে নেহি লাগতা ক্যা? আমি ওদের কথার উত্তর দেই না, আবারও বলি নামিয়ে দিতে। ওরা বিরক্ত হয় বুঝি কিন্তু আমার পৰে আর এই সব দেখা সম্ভব হবে না। হয়তো আমিই ওদেরকে মেরে বসতে পারি, আমার হাত নিশপিশ করতে থাকে। ওরা কি বুঝে কে জানে, বলে, গাড়ি রোকো। গাড়ি থামলে ওরা আমার পাছায় একটা লাত্থি মেরে বলে, শালে মাছলিখোর বঙ্গালি, মাজা লেনা ভি নেহি আতে, ইয়ে লোগ তো ঠিকসে চোদনা ভি নেহি জানতে... নিকাল শালে.....

আমি গাড়ি থেমে নেমেই সিদ্ধানত্দ নিয়ে ফেলি আর নয়, আর এক মুহূর্তও নয়। আমি সোজা গিয়ে আমার নেতাবন্ধুকে গিয়ে বলেছি এই সব ঘটনা। আমি আওলাদকে বললাম, এরা তো মানুষ নয়, এরা পশু। আমার মনে হয় আজ ওরা এই মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কাল আমার মা-বোনকে ধরে নিয়ে যাবে। তাদেরও এমন অত্যাচার করবে। নাহ্ আমি সেই সুযোগ ওদের দেবো না, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেবো। আওলাদ আমার কথা শুনে আমার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে, চোখ নামায় না এক মুহূর্তের জন্যও। বলে, ঠিক আছে, তোর যা ইচ্ছে তুই তাই-ই করিস। এখন যা বাসায় গিয়ে রেস্ট নে, পরে এ নিয়ে কথা হবে। আমি হনহন করে বাসায় ফিরে আসি। বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছিলো না, তাই ডায়রী লিখছি এখন. . . আহ্ এখন আবার কে এলো? বিছানা ছেড়ে একদম উঠতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু উঠতেই হবে মনে হচ্ছে, দরোজা তো ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছে.... ."
ডায়েরীটা এখানেই শেষ। পড়া শেষ করে আমি ডায়রীটা বাবার ড্রয়ারে আবার রেখে দেই। বাবার টেবিলের ওপর পড়ে আছে বাবার কাগজপত্র, কয়েকটি ভিজিটিং কার্ড। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামের নীচে বাবার নাম লেখা, আওলাদ হোসেন, লেকচারার, হিস্ট্রি অব রিলিজিওন। বাবার জন্য নতুন করে আমার গর্ব হয়, আমি বাবার টেবিলটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখি।
(অসমাপ্ত)।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×