গতকাল দুপুরের ঠিক পর পরেই বাবা অফিস থেকে চলে আসে, অন্যদিন তো তার আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়! আমি - মা দুজনেই দারুন খুশী। মা আমাকে তাড়াতাড়ি করে গোসল করালো- বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি করে তৈরী করে দিল, রাজু চাচু আমাকে তাড়াতাড়ি করে খাইয়ে দিল। এর মধ্যে বাবা-মাও খেয়ে দেয়ে নিয়ে তৈরী। আমার তো খুশী আর ধরে না, আমি ঠিক বুঝতে পারি- আমরা এবার কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি- আমার বাইরে বেড়াতে এতো ভালো লাগে!!!!!!!!
রিকশায় করে আমরা অনেকদূরে এক জায়গায় আসলাম। জায়গাটা অদ্ভুদ সুন্দর। শুধু আমরা নই- আরো অনেকেই এসেছে। বাবা-মা জানালো- এজায়গার নাম রায়ের বাজার বধ্যভূমি- শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
এখানেই একাত্তরের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী, আর এদেশের দালাল- আল বদর বাহিনী মিলে দেশের কৃতি সন্তানদের ধরে এনে হত্যা করে ফেলে রেখেছিল।
শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল! মূল সৌধের একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, খুব খুউব সুন্দর। বাবা-মা জানালো, ঐ দেয়ালের মাঝখানে যে চারকোনা ফাকা জায়গা সেটা হলো জানালা- এমন জানালা যার কোন পাল্লা নেই- মানে এই জানালা সবসময়ই খোলা থাকবে, আর সামনে বড় কালো যে স্তম্ভ- সেটা হলো শোকের স্তম্ভ।
তাকিয়েই থাকলাম, খুব ভালো করে বুঝতে পারছি না; তবে কেমন যেন একটা কষ্টের অনুভূতি তৈরী হলো। বাবা-মা আরেকটি কথা বললো-
আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু আজো নাকি রাজাকার-আলবদরদের শাস্তি হয়নি, বিচার পর্যন্ত হয়নি। দেশকে ভালোবাসাই সম্ভব নয়, যদি না মনে প্রাণে দেশের শত্রু ঐ রাজাকার-আল বদরদের ঘৃণা করা হয়- যদি না তাদের বিচার না চাওয়া হয়।
এটাও ভালো বুঝতে পারিনি, আসলে আমি এখনো অনেক ছোট তো! তবে আমি বড় হয়ে অবশ্যই এদের বিচার করবো, শাস্তি দিবো।
ওহ! বন্ধুরা তোমাদের বুঝি মনটা অনেক খারাপ করে দিচ্ছি? এসো তোমাদের এবার কিছু আনন্দের গল্প শোনাই। ঢুকতেই বাবা-মা আমাকে ছোট্ট একটা জাতীয় পতাকা কিনে দেয়। ঢোকার পথেই দুটি ছেলে এসে আমার গালে কি যেন এঁকে দেয়- পরে দেখি হাতের জাতীয় পতাকার মতই একটি পতাকা এঁকে দিয়েছে, এরপরে বাবা-মা আমার হাঁতেও একটি জাতীয় পতাকা আঁকা ব্যাণ্ড কিনে দেয়, মাথার জন্যও একটি জাতীয় পতাকা আঁকা আর বাংলাদেশ লিখা ব্যাণ্ড কিনে দিয়েছিল- যদিও মাথায় বেশীক্ষণ পরে থাকতে পারিনি- অনেক টাইট!!
স্মৃতি সৌধের সামনে ছোট ছোট অনেকগুলো মাঠ, সেখানে আমি আরো অনেকগুলো বাবুর সাথে খেলা করলাম, সবুজ ঘাসের মাঠে গড়াগড়ি করলাম। এত মজা লেগেছে- এত খুশী হয়েছি যে কি বলবো!!!
এ দিনটি আসলেই অন্যরকম।
বন্ধুরা! তোমাদের জন্য কিছু ছবি দিচ্ছি- কেমন লাগলো দেখে জানিয়ো কিন্তু।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




