somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পত্রিকায় লিখে কি লাভ, আমাকে তো আর কেউ দেখতে আসে না : ভাষাসৈনিক অলি আহাদ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কথা পত্রিকায় লিখে কি লাভ হবে, আমাকে তো আর কেউ দেখতে আসে না! যৌবন থাকতে কেউ খোঁজ নেয়নি আর এখনতো যাওয়ার সময়। আবেগতাড়িত হয়ে কথাগুলো বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাত দলের প্রধান জননেতা, সাংবাদিক, ভাষা সৈনিক অলি আহাদ। তিনি রোববার এলিফ্যান্ট রোড়ের বাসায় ফোকাস বাংলা নিউজের স্টাফ রিপোর্টার ইকবাল হোসেন মজনু সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার পুরস্কার প্রাপ্ত বীরযোদ্ধা অলি আহাদ এ প্রতিবেদককে কাছে পেয়ে দেশ-জাতি-রাজনীতি নিয়ে তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্নের কথা, অকৃতজ্ঞ মানুষের কথা বলেছেন। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, 'সরকার দুরে থাক, আমার সতীর্থরাও তো কেউ দেখতে আসে না। আসবেইবা কেন? আমাকে দিয়ে আর কি হবে, ভাষা আন্দোলনতো শেষ, আমাকে তো আর দরকার নেই'। একজন অকুতোভয় নির্লোভ মানুষ হিসাবে পরিচিত সত্য সন্ধানী এই প্রতিবাদী পুরুষ ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন সম্পর্কিত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে অলি আহদকে চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ৫৮ বছর পর ২০০৬ সালের ২০ মার্চ তাঁর বাহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কতর্ৃপক্ষ। বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেকর্ড শাখা অনুযায়ী অলি আহাদ ১৯৫০ সালে বিকম পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার লেখা 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫' বইয়ে এ সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি উল্লেখও করেছেন। অলি আহাদ দীর্ঘশ্বাস তুলে বলেন, পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেও জীবনে কোন কিছু পাইনি। কিন্ত যারা পাশই করেনি তারা আজ সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার অলি আহাদের একমাত্র মেয়ে ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা আর স্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (এশিয়া মহাদেশের একমাত্র মহিলা মহাপরিচালক) অধ্যাপিকা রাশিদা বেগমকে নিয়েই এখন অলি আহাদের সময় কাটে। সত্যের প্রয়োজনে যিনি নিজের বিরুদ্ধে কথা বলতেও কখনো এতটুকু চিন্তা করেননি। ইতিহাসের সেই উজ্জল পুরুষটি বার্ধক্যে অচল-অক্ষম হয়ে এখন নিজের নীতি নৈতিকতাকেই বার বার ধিক্কার দিচ্ছেন। বয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তিহীণ এক মানব দেহ। অধ্যাপিকা রাশিদা বেগম বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! ইতিহাসের এই কালজয়ী মানুষটির নিজের কোন বাসস্থানই নেই। তার বাবা (অলি আহাদের শশুর) গণিতবিদ মরহুম মোঃ শাহাব উদ্দিনের দেয়া বাড়ি ও রাশিদা বেগমের চাকরীর পাওয়া টাকার আয় দিয়েই সংসার চলে তাদের। বিয়ের ৩৩ বছর পরও সেই অতীত স্মৃতি গুলো অলি আহাদকে কাঁদিয়ে বেড়াতে দেখে আসছেন এখনো। কারণ একটাই স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত এই বীর সৈনিক বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার পরও রাষ্ট্র কিংবা কোন ব্যক্তি আজো তার কোন খবরই নেয়নি। পাননি কোন সরকারি অনুদান। চিরবিদ্র্রোহী পুরুষটি এখন অসহায় গৃহবন্দী। ডাক্তাররা বলছেন, তাঁকে বাঁচাতে জরুরী কিছু চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা, চোখের সমস্যা, পায়ের সমস্যা, প্রস্টেট এলার্জ, পড়ে গিয়ে কোমর-হাঁটু পর্যন্ত অপারেশন অচল করে দিয়েছে এক সময়ের সুঠাম দেহের অধিকারী এই ভাষা সৈনিককে। ২০০৪ সালে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভাঙ্গার পর মূলত তিনি পুরোটাই ভেঙ্গে পড়েন। তখন হাসপাতালে অনেক সতির্থ, তৎকালীন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজন তাঁকে দেখতে গেলেও সরকারি বেসরকারি দান অনুদান কিছুই তিনি পাননি। ঠিক মতো কানে না শুনলেও স্ত্রী অধ্যাপক রাশিদা বেগমের সাহায্য নিয়ে অলি আহাদ বলেন, ভাষার মাস এলেই ভাষা সৈনিকের নাম আসে, আর এ মাস চলে গেলে আর কেউ ভুলেও মুখে আনে না। যাদের জন্য মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছি, সেই বাঙালীরাতো আমাদের ছিনিয়ে আনা ভাষায় কথা বলছে সেই আমার সান্তনা। ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে শেষবার শমরিতা হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসা নেন। সেই থেকে আর হাসপাতালে যাওয়া হয়নি। কিন্তু নির্লোভ এই মানুষটির আজ চিকিৎসার সামর্থ নেই। টাকার অভাবে তিনি নিজের জরুরী চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না। পায়ে সমস্যা থাকায় সারাদিন বাসায় ডান কাত হয়ে শুয়ে অসহায়ভাবে অতীত রোমন্থন করেই দিন কাটছে তঁাঁর। ২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী জাতীয় প্রেসক্লাবে বিদ্রোহী একুশ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে "ভাষা আন্দোলন ও অলি আহাদ" শীর্ষক আলোচনা সভায় ভাষা আন্দোলনের নিয়ামক ও পুরোধা ব্যক্তিত্বরা ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্লোভ, সত্যসন্ধানী, চির প্রতিবাদী এবং বাংলাদেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের অনিবার্য চরিত্র অলি আহাদকে রাষ্ট্রিয়ভাবে চিকিৎসার দাবি জানান। কিন্তু সেই দাবি আজো পুরণ হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই অলি আহাদের। তিনি বলেন, যাবার সময় হয়েছে, এবার চলে গেলেই সবাই বেঁচে যায়। আরতো ভাষা আন্দোলনের দরকার নেই। তাহলে অলি আহাদরা থেকে কি হবে? অলি আহাদ বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারী তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। বাংলা ভাষার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন, জীবনে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর কি হতে পারে। এখন তার বড় চাওয়া ব্যারিষ্টার পাস করা একমাত্র মেয়ে রুমিন ফারহানা যেন সুনামের সঙ্গে বড় হয়। দেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন এক উজ্জল নক্ষত্র ৮২ বছর বয়সের মানুষটি আজ চিকিৎসার অভাবে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় শয্যাশায়ী অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

ঢাকা/১০ জানুয়ারি/ইকবাল হোসেন মজনু/ফোকাস বাংলা/শা খা বর্ণ
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×